এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১১ আগস্ট : আরজি কর হাসপাতালের মেধাবী মহিলা চিকিৎসকের নির্মমভাবে ধর্ষণ খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর দাবি করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৷ দাবি করা হচ্ছে যে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে নির্যাতিতা নিহত তরুনীর পেলভিস ও কাঁধের হাড় ভাঙার কথা বলা আছে । এছাড়া হাত,পায়ে রয়েছে ক্ষত । দু’চোখ ও মুখ থেকে রক্তের স্রোত, মুখ ও নখে ক্ষতসহ মোট ১০ টি আঘাতের কথা বলা হয়েছে হাতে লেখা ওই রিপোর্টে । যদি ওই রিপোর্ট সত্যি হয় তবে যা নিয়ে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে তা হল তরুনীর পেলভিস বা যৌনাঙ্গের কাছে মেরুদণ্ডের শেষ প্রান্তের হাড় ভাঙাকে কেন্দ্র করে ।
কারন এই ধর্ষণ-খুনের মামলায় পুলিশ ভবানীপুরের বাসিন্দা সঞ্জয় রায় নামে একজন মধ্য বয়সী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে । যাকে একজন সিভিক ভলান্টিয়ার হিসাবে বলা হচ্ছে । কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল অন্তত এটা স্বীকার করেছেন যে আরজি কর হাসপাতালে মৃত তরুণী চিকিৎসকের হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক তদন্তের পর যৌন নির্যাতনের প্রমান পাওয়া গেছে । সেই সাথে তিনি জানান যে মূল অপরাধী হিসেবে ধৃত ব্যক্তিকেই চিহ্নিত করেছে পুলিশ । সেই সাথে পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন,বিভাগের সিসিটিভি ফুটেজে সঞ্জয়কে ওই বিভাগের করিডরে ঘুরতে দেখা গিয়েছে, অথচ সেই সময় তার সেখানে যাওয়ার কথা ছিল না । কিন্তু শুক্রবার পুলিশ কমিশনার হাসপাতালে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই জানিয়েছিলেন যে তরুনী আত্মঘাতী হয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে ।
এখন প্রশ্ন, কেন বারবার বয়ান বদল করছেন খোদ কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল ? যদি ধৃত ব্যক্তি মূল আসামি হয় তাহলে তরুনীর পেলভিস হাড় ভাঙা কি আদৌ সম্ভব ? এটাও দাবি করা হচ্ছে যে তরুনীর যোনিপথ দিয়ে ব্যাপক রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে তারই মাথার চুল থেকে ক্লিপ খুলে যৌনাঙ্গে আটকে দেওয়া হয়েছিল । একা ধৃত ব্যক্তির পক্ষে কি তরুনীকে নৃশংসভাবে মারধরের পর এত কিছু কাজ করা আদৌ সম্ভব ? সন্দেহ করা হচ্ছে তরুনী গনধর্ষিতা হয়েছেন এবং পাশবিক অত্যাচারের সময় তার হাত ও পা ধরে ছিল আরও অন্তত দু’জন ব্যক্তি ।
বলা হচ্ছে যে নিহত তরুনী ৩৬ ঘন্টা অন-কল ডিউটিতে ছিলেন এবং বিশ্রামের জন্য চিকিৎসকদের পৃথক ঘর না থাকায় তিনি সেমিনার কক্ষে ২ ঘন্টা বিশ্রামে গিয়েছিলেন । তার আগে জুনিয়রদের সাথে রাত্রি ২ টার সময় রাত্রির খাবার খাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন । এটাও দাবি করা হচ্ছে যে সেমিনার কক্ষে কোন সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি ।
এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বয়ান তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে । শুক্রবার সকালে সেমিনার কক্ষে যখন তরুনীর ক্ষতবিক্ষত নগ্ন দেহ উদ্ধার হয় তখন অধ্যক্ষ মন্তব্য করেন,’রাতে একা থাকাটা তার দায়িত্বহীনতা ছিল ।’ তার এই প্রকার দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের পর ক্ষোভে ফুঁসছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ।
এদিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার ও অগ্নিমিত্রা পালেরা তরুনীর বাবা- মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলে পুলিশ তাদের রাস্তাতেই তাদের আটকে দেয় বলে অভিযোগ । এই বিষয়ে অগ্নিমিত্রা পাল বলেছেন,’আর জি কর হাসপাতালে একজন মেধাবী মেডিকেল ছাত্রীর ধর্ষণ ও নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় গোটা বাংলা লজ্জিত।এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ সেই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় পুলিশের বাঁধার সন্মুখীন হয়।পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে আমরা হেঁটেই নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করি । উপস্তিত ছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ডঃ সুকান্ত মজুমদার মহাশয় ও অন্যান্য নেতৃত্ব।’
আরজি কর হাসপাতাল তরুনী চিকিৎসককে ধর্ষণ খুন মামলার অভিযুক্তের মা মালতি রায় বলেছেন, ‘কেউ বলছেন ধর্ষণ, কেউ বলছেন খুন, কেউ বলছেন টাকা নেওয়া হয়েছে, কী হয়েছে জানি না।’
এদিকে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ কমিশনার আত্মহত্যার দাবি করলেও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে আসতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, আরজি করের ২২ বছর বয়সি ট্রেইনি চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এরই মাঝে এবার ময়নাতদন্ত কমিটির দুই সদস্যের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উঠল প্রশ্ন। রিপোর্ট অনুযায়ী, ময়নাতদন্ত কমিটিতে থাকা দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আগে থেকেই টালা থানায় অভিযোগ দায়ের আছে ভিন্ন মামলায়।সেই ময়নাতদন্ত কমিটিতে রয়েছে ইনটার্ন চিকিৎসকরাও। এছাড়া এনআরএস-এর মালি বন্দ্যোপাধ্যায় নামক এক চিকিৎসকের নাম রয়েছে এই কমিটিতে। তিনি অনেকটাই ‘জুনিয়র’ বলে দাবি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এই চিকিৎসকদের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না আরজি করের বাকি চিকিৎসক এবং পড়ুয়ারা।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘মৃত্যুটা খুবই অমানবিক, ন্যক্কারজনক, নৃশংস। জুনিয়র ডাক্তাররা যে দাবি জানাচ্ছে, তা সঙ্গত। প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি, ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টে কেসটা গিয়েছে, একেবারে ফাঁসির আবেদন জানানো হোক।’ পাশাপাশি সিবিআই তদন্তে রাজ্যের কোনও আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন তিনি । পশ্চিমবঙ্গের প্রথম সারির মিডিয়াও কার্যত ধৃত ব্যক্তিকে মূল আসামি মেনে নিয়ে তার পর্ণগ্রাফি ও নেশায় আসক্তি,একাধিক বিয়ে করা, প্রতিবেশীদের বয়ানের উদ্ধৃতি দিয়ে তাকে ‘লম্পট’ সাজানো থেকে বিভিন্ন দোষত্রুটির কথা বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে । এই ধর্ষণ হত্যাকাণ্ডে রাজ্যের মিডিয়াকেও কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে ৷ আর এতেই কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন যে সঞ্জয়কে কি বামফ্রন্ট জমানার ‘ধনঞ্জয়’ বানিয়ে কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে না তো ?