প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৯ জুন : বর্ধমানের গোদার মাঠে আয়োজিত সরকারী সভায় সোমবার যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।ওইদিন নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছিল সভাস্থলসহ আশপাশ এলাকা ও মুখ্যমন্ত্রীর যাওয়া আসার রাস্তা । তবুও সেই সভায় যোগ দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান পূর্ব বর্ধমানের মেমারির দেহুড়া গ্রাম নিবাসী প্রৌঢ় তৃণমূল কর্মী রবীন্দ্রনাথ সাঁই(৭২) ।সভা শেষ হয়ে যাবার পর সবাই যে যার বারি ফিরে গেলেও রবীন্দ্রনাথ বাবুর আর জীবিতাবস্থায় বাড়ি ফেরা হল না।
ঘটনার দু’দিনের মাথায় পরিবারের লোকজন জানতে পারলেন আপ অমৃতশর মেলের ধাক্কায় রবীন্দ্রনাথ বাবুর মৃত্যু হয়েছে। গোদার অদুরে গাংপুর স্টেশন থেকে উদ্ধার হয়েছে তাঁর মৃতদেহ।মুখ্যমন্ত্রী বুধবার যখন দুর্গাপুরে প্রশাসনিক সভা করছেন সেইসময়ে জিআরপি ময়নাতদন্ত সম্পূর্ণ হওয়া তৃণমূল কর্মীর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেয়। দেলের একজন প্রবীন কর্মীর এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ তৃণমূল শিবির ।
পরিবার ও এলাকাবাসীর কথায় জানা গিয়েছে, মেমারির নিমো ২ পঞ্চায়েতের দেহুড়া গ্রামের বছর ৭২ বয়সী রবীন্দ্রনাথ সাঁই ভেটনারী দপ্তরের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ছিলেন।তিনি নিঃসন্তান।বাড়িতে তাঁর স্ত্রী রয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেস দলের একনিষ্ঠ কর্মী হিসাবে গ্রামে রবীন্দ্রনাথ বাবুর যথেষ্ট নামডাক রয়েছে।বর্ধমানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসছেন জানতে পেরে তিনিও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ।গত সোমবার বেলা ১১ টা নাগাদ গ্রামের অন্য তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে তিনিও সভাস্থলে যাওয়ার বাসে ওঠেন। বর্ধমানের বাবুরবাগে বাস দাঁড়ালে সকলে বাস থেকে নেমে হেঁটে সভাস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন ।
আর তখনই দলছুট হয়ে যান রবীন্দ্রনাথবাবু।সভাস্থলে পৌঁঁছে যাবার পরেও অন্যারা তাঁকে আর দেখতে পান ন। এমনকি সভা শেষ হয়ে যাবার পর বাড়ি ফেরার জন্য বাসে উঠেও গ্রামের তৃণমূল কর্মীরা রবীন্দ্রনাথ বাবুকে দেখতে পান না।বর্ধমানে বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে খোঁজা খুজির পরেও রবীন্দ্রনাথ বাবুর খোঁজ না পেয়ে একই বাসে চেপে দেহুড়ার তৃণমূল কর্মীরা গ্রামে ফিরে যান । গ্রামে গিয়ে অন্য তৃণমূল কর্মীরা বিষয়টি তাঁর পরিবারের লোকেদের জানান ।পরিবারের লোকজন বর্ধমান ও মেমারির বিভিন্ন জায়গায় রবীন্দ্রনাথ বাবুর খোঁজ করেন । মেমারির তৃণমূল বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্যকেও ঘটনার কথা জান । বিধায়কের উপদেশ মতো পরিবারের লোকজন বর্ধমান ও মেমারি থানাতেও ঘটনার কথা জানান ।
এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিন )সুপ্রভাত চক্রবর্তী মঙ্গলবার জানান,পরিবারের লোকজন ঘটনার কথা জানানোর পর থেকে পুলিশ বিভিন্ন জায়গাই ওই প্রৌঢ় ব্যক্তির খোঁজ চালাচ্ছে । উনার হদিশ পাওয়ার জন্য ভিভিন্ন জেলার থানা গুলিতেও খবর পাঠানো হয়েছে । পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে“ ।
এরপর ওইদিন রাত কাটতে না কাটতে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন রবীন্দ্রনাথ বাবু আর বেঁচে নেই। বর্ধমান জিআরপির তরফে পরিবারকে জানানো হয়, সোমবার রাত ৮টা নাগাদ আপ অমৃতসর মেলের ধাক্কায় রবীন্দ্রনাথ সাঁইয়ের মৃত্যু হয়েছে।সেই খবর পেয়ে বুধবার গাংপুর স্টেশনে গিয়ে জিআরপি অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন মৃতের পরিবার । বর্ধমানের মর্গে গিয়েও তাঁরা মৃতদেহ সনাক্ত করেন। মৃতের ভাই দিলীপ সাঁই এদিন বলেন,’আমার দাদা শারীরিক ভাবে সুস্থ ছিলেন না ।’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন ,বর্ধমানে মুখমন্ত্রীর সভাস্থলে যাবার সময়ে দলছুট হয়ে যাবার পর রবীন্দ্রনাথবাবু হয়তো ট্রেনে চেপে বাড়ি ফেরার জন্য গাংপুর স্টেশনে পৌছে যান । শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা ছিল বলে স্টেশনের ওভার ব্রীজ দিয়ে না গিয়ে রেললাইন পার হয়ে প্ল্যাটফর্মে যাচ্ছিলেন । তখনই তিনি দুর্ঘটনার মুখে পড়েন । তবে ওইদিন বর্ধমান শহরের মধ্যে থেকেও রবীন্দ্রনাথবাবু কি করে গাংপুর স্টেশনে গেলেন সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না বলে পরিবারের সদস্যরা মন্তব্য করেছেন ।।