প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৫ মে : ভোটে ভরাডুবির পর ভয়ে ঘরে ঢুকে পড়েছেন বিজেপি নেতারা । ভয় এতটাই ,যে রাজনৈতিক হিংসায় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের নবগ্রামে এক দলীয় কর্মীর মা মারা যাবার পরেও দেখা নেই কোনও বিজেপি নেতাদের । গ্রেপ্তারির ভয়ে মৃতার ছেলে সহ পরিবারের অন্যরাও গা ঢাকা দিয়েছেন । মঙ্গলবার ময়নাতদন্তের পর নিহত কাকলি ক্ষেত্রপালের মৃতদেহ তাই বর্ধমান পুলিশ মর্গ থেকে আনতে যাওয়ারও কেউ নেই । বর্ধমান হাসপাতালের পুলিশ মর্গেই দু’দিন ধরে পড়ে আছে নবগ্রামের বিজেপি কর্মী আশিস ক্ষেত্রপালের মায়ের মৃতদেহ। নেতাদের এমন আচরণে কার্যতই হতাশ বিজেপির নিচু তলার কর্মী ও সমর্থকরা ।
ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসায় গত সোমবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জামালপুরের নবগ্রামের ষষ্ঠিতলা এলাকা।তৃণমূল ও বিজেপির সংঘর্ষে দুই তৃণমূল কর্মী শাজাহান শা ওরফে সাজু (৩০)এবং বিভাস বাগ (২৭) এর মৃত্যু হয় ।একই সংঘর্ষে মৃত্যু হয় নবগ্রামের বিজেপি শক্তি প্রধান আশিস ক্ষেত্রপালের মা কাকলি ক্ষেত্রপাল (৪৭)।এই ঘটনার পরেই পুলিশ ,র্যফ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘটনা স্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পাশাপাশি ধরপাকড় অভিযানে নামে ।তা দেখেই নিহত কাকলির ছেলে সহ এলাকার অন্য বিজেপি কর্মী ও সমর্থকরা গা ঢাকা দেয় ।তারই মধ্যে দুই পক্ষের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বিজেপির ১০ জন ও ১ তৃণমূল কর্মীকে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার বর্ধমান আদালতে পেশ করে ।
জামালপুর হাসপাতালে কর্মীদের কথায় জানা গিয়েছে কাকলি ক্ষেত্রপালের মৃতদেহ সোমবার জামালপুর হাসপাতালে দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকে ।কিন্থু তাঁর পরিবারের কেউ হাসপাতালে ছিলেন না ।পরে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। জামালপুর থানার পুলিশ মঙ্গলবার মৃত দেহ ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান হাসপাতাল পুলিশ মর্গে পাঠায়। কিন্তু না হাসপাতাল ,না মর্গ , না থানা ,না ঘটনাস্থল কোথাও দেখা মেলেনি বিজেপি নেতাদের । শুধুমাত্র ঘটনার কথা জানার পরে সোমবার জামালপুরের তৃণমূলের নেতারা নবগ্রামে হাজির হন। পরে নিহত তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতেও তারা যান ।এমনকি ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ নিহতদের বাড়িতে ফেরার পর শেষ কৃত্যেও তৃণমূলের নেতারা হাজির থাকেন ।কিন্তু সোমবারের পর মঙ্গলবারেও বিজেপির জেলা বা ব্লক স্তরের কোনও নেতা নিহত ও আহত বিজেপি কর্মী পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর সদিচ্ছা টুকুও দেখান নি । তাই ময়নাতদন্তের পর বিজেপি কর্মীর নিহত মা কাকলি ক্ষেত্রপালের মৃতদেহ বর্ধমানের মর্গেই পড়ে থাকলো বলে বিজেপির কর্মীরা আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিন ) আমিনুল ইসলাম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও ঘটনা সত্য বলে জানিয়েছেন ।
ভোটের আগে বিজেপি নেতারা প্রতি মুহুর্তে হুংকার ছাড়তেন । রাজ্যের কোথাও কোন বিজেপি কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে বিজেপি নেতারা দলের কর্মীদের নিয়ে অন্দোলনে নেমে পড়তেন ।কোথাও পথ অবরোধ করো বিক্ষোভ দেখাতেন আবার কোথাও থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতেন। কিন্তু গত রবিবার ভোটের ফল ঘোষনায় পর থেকে পূ্র্ব বর্ধমান জেলার বিজেপি নেতারা কেন একেবারে আত্মগোপন করে ফেললেন তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না নিচু তলার কর্মীরা। এই বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে জেলা বিজেপি সভাপতি অভিজিৎ তা-র ফোন নম্বারে একাধীক বার ফোন করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি । জামালপুর বিধানসভার বিজেপি আহ্বায়ক জিতেন ডকাল বুধবার দুপুরে বলেন ,’ তিনি কোথাও যান নি । নিহতের পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর জন্যে তিনি মণ্ডল সভাপতিদের বারবার বলেছেন । কিন্তু তাারা না গেলে কিবা আর করার আছে বলে জিতেন ডকাল এদিন মন্তব্য করেন । একই সঙ্গে তিনি বলেন , জামালপুর নিবাসী সিপিএম নেতা সমর ঘোষ তাঁকে ফোন করে জানিয়েছিলেন তারা মর্গ থেকে কাকলি ক্ষেত্রপালের দেহ আনতে যাবেন ।তবে সিপিএম নেতারা বুধবার দেহ আনতে গেছেন কিনা তা তিনি জানেন না’ ।
জামালপুর বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দিতা করা বিজেপি প্রার্থী বলরাম ব্যাপারি বলেন, ’নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে তিনি এলাকার মণ্ডল সভাপতি তপন বাছার কে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।কিন্তু তিনি গিয়েছিলেন কিনা তা তিনি জানেন না ’। সিপিএম নেতা সমর ঘোষ এদিন দুপুরে দাবি করেছেন,“নিহত কাকলি ক্ষেত্রপাল তাঁদের সিপিএম পার্টির সাধারণ সদস্য ছিলেন । তাই এদিনও তাঁরা নিহতের মৃতদেহ বর্ধমানের মর্গ থেকে বাড়িতে আনানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন“ । সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে ,কাকলি ক্ষেত্রপালের মৃতদেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন করার জন্যে পুলিশ হুগলি নিবাসী মৃতার মেয়ে ও জামাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে ।।