এইদিন ওয়েবডেস্ক,রতুয়া(মালদা),১০ সেপ্টেম্বর : মালদহ জেলার রতুয়া-১ ব্লকের দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিল বিজেপি । মোট ১২ জন সদস্যের সমর্থন নিয়ে প্রধান হলেন বিজেপির লালটু চৌধুরী । ওই ১২ সদস্যের মধ্যে রয়েছেন বিজেপির ৮,তৃণমূলের ৩ ও একজন নির্দল সদস্য । বিজেপির প্রধানকে দলের সদস্যদের একাংশ সমর্থন করায় স্বভাবতই ক্ষিপ্ত শাসকদল নেতৃত্ব । রতুয়া-১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ফজলুল হক এনিয়ে দলীয় বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়কে নিশানা করেছেন ৷ তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের বিধায়ক ঘনিষ্ঠদের চক্রান্তে এদিন বিজেপি পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করল । আমরা খুবই দুঃখিত ও মর্মাহত । বিগত বিধানসভায় আমাদের বিধায়কের যিনি একাউন্টস এজেন্ট ছিলেন,যিনি ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিজেপি করে এসেছেন । আজ তাঁর নেতৃত্বেই আমাদের ৩ জন সদস্যকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপির বোর্ড গঠন করল । এটা দল বিরোধী কাজ । আমি এটা জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বকে জানাবো ।’
দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন সংখ্যা ২০ । বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ২০ আসনের মধ্যে তৃণমূল ও বিজেপি ৮-টি করে আসন পায় । বাকি চারটি আসনের মধ্যে ২ টি কংগ্রেস ও একটি করে আসন পায় সিপিএম ও নির্দল প্রার্থী । কংগ্রেস,সিপিএম ও নির্দল সদস্যদের সমর্থন নিয়ে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করে তৃণমূল কংগ্রেস । প্রধান হন তৃণমূলের পঙ্কজ মিশ্র ।
কিন্তু মাস চারেক আগে পঙ্কজ মিশ্রের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ এনে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসেন পঞ্চায়েতের ১৫ জন সদস্য । গত ৩১ অগাস্ট ভোটাভুটিতে তিনি অপসারিত হন । প্রধানের পক্ষে পরে ৪ টি ভোট,১৫ টি ভোট বিপক্ষে যায় । একজন সদস্য অনুপস্থিত থাকেন । এরপর বৃহস্পতিবার ছিল নব-নির্বাচিত প্রধান গঠনের দিন । মোট ২০ জন সদস্যের মধ্যে মোট ১৬ জন উপস্থিত ছিলেন । বাকি ৪-জন অসুস্থতার কারন দেখিয়ে গড়হাজির থাকেন ।
শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচিত হন বিজেপির লালটু চৌধুরী । অপসারিত তৃণমূলের প্রধান পঙ্কজ মিশ্রের পক্ষে ভোট পড়ে ৪-টি । অন্যদিকে বিজেপির প্রধান পদপ্রার্থী লালটু চৌধুরীর স্বপক্ষে মোট ১২ টি ভোট পড়ে ৷ এদিন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া । অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আগে থেকেই পঞ্চায়েত কার্যালয়ের বাইরে মোতায়েন করা হয়েছিল বিশাল পুলিশবাহিনী । উপস্থিত ছিলেন রতুয়া-১ ব্লকের বিডিও রাকেশ টোপ্পো, যুগ্ম বিডিও সৈকত দত্ত ও রতুয়া থানার আইসি সুবীর কর্মকার ।
বিজেপির নবনির্বাচিত প্রধান লালটু চৌধুরী বলেন, ‘বিজেপির মাইনোরিটি সেলের রাজ্য সভাপতি শেখ ইয়াসিনের নেতৃত্বে দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে আনতে পেরেছি । তৃণমূলের অপসারিত প্রধান পঙ্কজ মিশ্র দুর্নীতি ও স্বজনপোষণে লিপ্ত হয়ে পড়েছিলেন । তাঁর বিরুদ্ধে গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০ জন সদস্যের মধ্যে ১৫ জন সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন । কিন্তু প্রশাসনিক কারণে এতদিন আটকে ছিল । শেষে গত ৩১ আগস্ট তারিখে প্রধানের বিরুদ্ধে আমরা ১৫ জন সদস্য অনাস্থা পেশ করেছিলাম । আজকে ছিল প্রধান গঠনের দিন । দলীয় সদস্য ছাড়াও তৃণমূল ও নির্দলের সদস্যদের সমর্থনে প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি ।,’
যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি ফজলুল হক পূর্বতন প্রধানের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন । তিনি বলেন, ‘আমাদের দলীয় প্রধান বিগত আড়াই বছর ধরে এলাকার প্রভূত উন্নয়ন করেছেন । দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধানের কাছে অনুরোধ করব তিনি যেন সেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখেন ।’।