প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৩ জুলাই : কার্যকারিনী সভায় যোগ দিতে গিয়ে ঘাড় ধাক্কা খেয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিলেন বিজেপির যুব নেতা । মঙ্গলবার বর্ধমান সদর জেলা বিজেপির যুব মোর্চার সহ-সভাপতি ইন্দ্রনীল গোস্বামী বলেন, ‘বিজেপি দলটা অকৃতজ্ঞ হয়ে গিয়েছে । কতকগুলো ’তোলাবাজ’ ও ’চামচা বাজকে’ নিয়ে জেলা বিজেপির নতুন সভাপতি এখন দলটা চালাচ্ছে ।’ ইন্দ্রনীল বাবু একইসঙ্গে দাবি করেন, ’বিজেপি এখন আদর্শ বিচ্যুত হয়েছে । তাই তিনি সংগঠন ছেড়ে দিয়ে দলের এই তেলাবাজি, নোংরামি ও ভ্রষ্টাচারির বিরুদ্ধে আলাদা মঞ্চ গড়ে আন্দোলনে নামবেন ।
বিধানসভা ভোটে পূর্ব বর্ধমানে বিজেপির ভরাডুবি হওয়ার পর ওই দলেরই এক যুব নেতার আনা এমন বিস্ফোরক অভিযোগ রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে । বিজেপি যুব নেতা ইন্দ্রনীল গোস্বামীর এদিনের বক্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপত্র দেবু টুডু বলেন ,“ভোটে ভরাডুবির পর এখন বিজেপি নেতারাই বিজেপির আসল স্বরুপ প্রকাশে আনতে শুরু করে দিয়েছেন । যত দিন যাবে রাজ্যের মানুষ ’মিস কল’ পার্টি বিজেপি নেতাদের মুখ থেকে এমন আরও নানা বিস্ফোরক অভিযোগ শুনতে পাবেন । তার থেকেই পরিস্কার হয়ে যাবে রাজ্যের মানুষ কেন বিজেপিকে প্রত্যাক্ষাণ করেছেন। আগামী দিনে গোটা দেশের মানুষ ’মিস কল’ পার্টি বিজেপিকে প্রত্যাক্ষান করবেন ।
বর্ধমান জেলা বিজেপি কার্যালয়ে এদিন অনুষ্ঠিত হয় কার্যকারিনী সভা । সেই সভায় যোগ দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ।জেলা পার্টি অফিসে এদিন দিলীপ ঘোষের সঙ্গে দেখা করতে যান বর্ধমান সদর জেলা বিজেপি যুব মোর্চার সহ-সভাপতি ইন্দ্রনীল গোস্বামী। তাঁকে পার্টি অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয় না । ইন্দ্রনীল বাবুর অভিযোগ
দিলীপ ঘোষের সামনেই পার্টি অফিসে থাকা বিজেপির কর্মীরা তাঁকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। এর পর জেলা বিজেপি পার্টি অফিস থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেই ইন্দ্রনীল গোস্বামী জেলা বিজেপির সভাপতি ,সহ- সভাপতি বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ উগরে দেন। ইন্দ্রনীল বাবু এও বলেন, ’জেলা সভাপতি তাঁর কিছু পেটুয়া লোকেদের পদে রেখে দলের ক্ষতি করছেন । এমনকি তোলা বাজিও করছেন বলে ইন্দ্রনীল গোস্বামী অভিযোগ করেন ।
এদিকে ইন্দ্রনীল গোস্বামী প্রকাশ্যে সংবাদ মাধ্যমের কাছে এইসব অভিযোগ করার পরেই পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামেন জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক এস আর ব্যানার্জি ।
তিনি বলেন, ‘ ইন্দ্রনীল গোস্বামী দলের যুব সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন । এদিন দিলীপ ঘোষ দলের যে সকল কার্যকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করবেন বলেছিলেন তার তালিকা তৈরি করা হয়েছিল । সেখানে যুব মোর্চার কারও অংশগ্রহণ করার কথা ছিল না। সে কারণেই ইন্দ্রনীলকে মিটিংয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এস আর ব্যানার্জী একই সঙ্গে জানান, ইন্দ্রনীলবাবুর কাউকে ’তোলাবাজ’ মনে হতে পারে। কিন্তু তাঁর কোনো মাপকাঠি বা গ্রহনযোগ্যতা নেই। মিটিংয়ে যাদের অংশগ্রহণ করার কথা ছিল তাদেরকেই শুধুমাত্র এদিন পার্টি অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে ।
জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক এমনটা বললেও কার্যকারিণী সভা শেষে দিলীপ ঘোষ বিক্ষুব্ধ যুব নেতা ইন্দনীল গোস্বামীর সঙ্গে দেখা করেন ।তাঁদের মধ্যে মিনিট খানেক আলোচনাও হয়। দিলীপ বাবু মিটিং শেষে চলে যাবার পরেই ইন্দ্রনীল গোস্বামী ভোল বদলান । তিনি ফের সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন , “আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়ায় আমি আবেগের বসে সাংবাদিকদের কাছে দলের কিছু আভ্যন্তরীণ কথা বলে ফেলেছিলাম।কিন্তু দিলীপদা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন ।’ এইসব নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ যদিও কোনো মন্তব্য করতে চাননি ।।