এইদিন ওয়েবডেস্ক,শিলিগুড়ি,১৩ জুলাই : শুক্রবার বেলার দিকে গ্রামে তখন শোকের আবহ । কিছু যুবক কোমড়ে গামছা বেঁধে শবদাহের প্রস্তুতি নিচ্ছেন । বাঁধা হচ্ছে বাঁশের দোলা । কিন্তু শব কোথায় ? উৎসুক মানুষ যখন অজ্ঞাত কারোর মৃত্যুর শোকে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন, সেই সময় দু’জন যুবক খড়ের তৈরি কুশপুত্তলিকা এনে বাঁশের দোলায় চাপিয়ে নতুন কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয় । কুশপুত্তলিকার মাথার কাছে রাখা হয় এক তরুনীর ছবি । তারপর সেই ‘শব’ কাঁধে করে “বলো হরি হরি বোল” ধ্বনি দিতে দিতে আনা হয় গ্রামের রাস্তার একটা বাঁকের কাছে । তারপর রাস্তার ধারে বিদ্যুতের খুঁটির নিচে বাঁশের দোলাসহ কুশপুত্তলিকায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় । সম্পূর্ণ ভস্মীভূত না হওয়া পর্যন্ত মুহুর্মুহু ওঠে “হরি বোল” ধ্বনি । ভিন ধর্মী প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে বিয়ে করা মেয়ের প্রতি এভাবে নিজের হতাশা আর ঘৃণা প্রকাশ করলেন শিলিগুড়ি সংলগ্ন রাজগঞ্জের ভুটকি হাট এলাকার বাসিন্দা প্রৌঢ় নারায়ন দে ।
হতাশ বাবা বলেন,’আমি নারায়ন দে । আমার মেয়ের নাম মেয়ে নেহা দে (২৬) । গত মঙ্গলবার মেয়ে পালিয়েছে৷ শুক্রবার কুশপুতুল দাহ ও শনিবার শ্রাদ্ধ হয় । বাবা হয়ে আমি মেয়েকে বুঝিয়েছি । আমার স্ত্রী মা হয়ে বুঝিয়েছে ৷আমার ভাই পায়ে পর্যন্ত ধরেছিল তার । কিন্তু রাজি হয়নি । পুলিশ তাকে আদালতে নিয়ে গেছে । আমরা থানা থেকে ফিরে এসে মেয়ের কুশপুতুল দাহ করছি ।’ তিনি বলেছেন,শনিবার মেয়ের শ্রাদ্ধের পর আইনত মেয়েকে ত্যাজ্য করার জন্য আদালতে যা করার তাই করবো ।’
পরিবার সূত্রে জানা গেছে,গত মঙ্গলবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় নারায়ন দের ২৬ বছর বয়স্কা মেয়ে নেহা দে (২৬)। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে না পেয়ে শেষে আমবাড়ি থানায় নিখোঁজ ডাইরি করেন তিনি । শুক্রবার পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে পরিবারকে খবর দেয়। থানায় পৌঁছে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন মেয়েটি ভিন্নধর্মী এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং সে প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছেন । এরপর মেয়েটিকে পরিবারের লোকেরা বোঝাতে থাকেন । কিন্তু সে প্রেমিককে ছাড়তে কিছুতেই রাজি হয়নি । পুলিশ তাকে আদালতে পাঠায় । এদিকে হতাশ হয়ে তরুনীর পরিবার বাড়ি ফিরে আসেন । সিদ্ধান্ত নেন জীবিত মেয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন করে ত্যাজ্যকন্যা করবেন । শুক্রবার থানা থেকে ফিরে আসার পর পড়সিদের সহায়তায় শুরু হয় কুশপুত্তলিকা দাহ করার কাজ । যথাযথ ধর্মীয় রীতি মেনে দাহপর্ব সম্পন্ন করা হয়৷ শনিবার শ্রাদ্ধের কাজ করেন নারায়নবাবু ।
ভবিষ্যতে কি মেয়ের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবেন ?
উত্তরে নারায়ণ বাবু বলেন,’কিসের সম্পর্ক ? আমার মেয়ে তো মারা গেছে । শনিবার তার শ্রাদ্ধ৷’ তিনি আরও বলেছেন,’আগামী দিনে আমাদের সমাজে যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই কারণে আমি এই উদ্যোগ নিয়েছি । আমাকে আমার মেয়ের জন্য শোকাহত হলে হবে না, আমাকে আমার পুরো সমাজের কথা ভাবতে হবে।’ তিনি পুলিশ প্রশাসন এবং রাজ্যের মন্ত্রীদের কাছে করজোড়ে নিবেদন করেছেন যে এই ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে সেজন্য যেন যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয় ।’ তিনি জানান,তার এক মেয়ে এবং এক ছেলে ছিল ৷ মেয়ে বড় ৷ যদিও তাদের নজরে মেয়ে এখন মৃত ।।

