এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,১৩ এপ্রিল : নবির জীবন ও ধর্মীয় কুসংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তুলে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করলেন বাংলাদেশের শেরপুরের এক কথিত ‘নাস্তিক’ যুবক মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাত । একারনে ত্যাজ্য পুত্র করেছেন বাবা আবুল হোসেন । তাতেও নিস্তার পাননি ওই যুবক । তাঁকে ফোন করে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমাগত খুনের হুমকি দিচ্ছিল মৌলবাদীরা । তাই তিনি প্রাণ বাঁচাতে ফ্রান্সে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন । এদিকে ইয়াসির আরাফাতকে না পেয়ে তাঁর পরিবার পরিজনদের ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ । এমনকি যে মুসলিম ব্যক্তির দোকানে গিয়ে তিনি চা খেতে যেতেন, সেই দোকানের মালিককেও হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে দেশত্যাগী যুবক দাবি করেছেন । আর শুধু মৌলবাদীরাই নয়,পরিবারকে পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে এক শ্রেণীর সাংবাদিকদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি ।
বাংলাদেশের কৃষি দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক শেরপুরের বাসিন্দা আবুল হোসেনের ছোট ছেলে মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাত । সম্প্রতি ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন বাংলাদেশের মুক্তমনা ব্লগার আসাদ নূর । সেই সাক্ষাৎকারে নিজের দেশত্যাগের বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন ইয়াসির আরাফাত । তিনি বলেছেন, ‘আপনারা যে মতাদর্শে বিশ্বাস করেন,আমি তা বিশ্বাস করিনা । আপনারা হাজারটা কুসংস্কার বিশ্বাস করেন,কিন্তু আমি তা করিনা ।’ তিনি বলেছেন,’মহম্মদের বিরুদ্ধে আমি তো কোনো মিথ্যা কথা বলিনি । তিনি কি শিশুকে বিয়ে করেননি ? নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করেনি । সাফিয়াকে সে কি ধর্ষণ করেনি ? গনিমতের মালের নামে শতশত মানুষকে সে কি হত্যা করেনি? এসব কি আমরা বানিয়ে বলছি, নাকি কোরান-হাদিশ পড়ে জানতে পারছি ? আল্লা নিজে অনুমতি দিয়েছে যে অমুসলিমদের ধর্মান্তরিত করার পর তার যা কিছু সব নিজে গ্রহণ করতে পারবে । এখন একজন লেখাপড়া জানা মানুষ হিসাবে আমি তো ওই সব মানতে পারিনা ।’
আরাফত বলে,’কোরানের ৬৮-৬৯ নম্বর আয়াতে লেখা আছে,মৌমাছি ফল থেকে মধু সংগ্রহ করে । এটা তো একটা অবৈজ্ঞানিক কথা,তাই না? আমরা সবাই জানি মৌমাছি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে । ফলে কোনো ভাবেই মধু হওয়া সম্ভব নয় ।
কোরানে আল্লাহ বলেছেন,একমাত্র আমিই জানি নারীর গর্ভে কি আছে । আমাদের ধর্মে অসংখ্য গোঁড়ামি ছিল । এসব আমি বিশ্বাস করিনা । এটা কি আমার কোনো ফৌজদারি অপরাধ?’
তিনি বলেন,’বিষয়টা হল কি এখন আমি এখন একটা নিরাপদ দেশে আছি । এখানে বাক স্বাধীনতা আছে,এখানে কথা বলার অধিকার আছে । আমি তো এখন মৌলবাদী ও পুলিশ প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে । আমাকে না পেয়ে তারা আমার পরিবারকে আক্রমণ করছে । আমি সত্য কথা বলছি বলে তাদের আঁতে ঘা লাগছে ।’তিনি আরও বলেন,’আমি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসেছি কারন সেখানে বাক স্বাধীনতা নেই । সেখানে মৌলবাদীরা যেকোনো সময় আমায় হত্যা করতে পারে । পুলিশ আমাকে জেলে ঢুকিয়ে দিতে পারে । আমি কি করবো? আমি ফ্রান্সে এসেছি নিজের জীবনের নিরাপত্তার জন্য । এখন আমাকে না পেয়ে ওই সমস্ত অসভ্য বর্বররা আমার পরিবারের উপর হামলা করছে ।’
প্রসঙ্গত,মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাতের নিজের ধর্মের বিষয়ে খোলামেলা বক্তব্যের কারনে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে বাংলাদেশের মৌলবাদীরা । পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে আরাফাতকে ত্যাজ্য পুত্র ঘোষণা করেন তাঁর বাবা আবুল হোসেন । বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান,’আমি ধর্মীয় কটুক্তি করার জন্য আমি তার উপর অসন্তুষ্ট । একজন নাস্তিকের সঙ্গে আমার কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই । অন্যদিকে তার ধর্মদ্রোহিতা,ধর্মত্যাগ ও কটুক্তিপূর্ণ বক্তব্য এর কারনে আমি আমার ছোট ছেলে মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাতকে ত্যাজ্যপুত্র করলাম । সে এখন মুসলিম নয় ।’ পরে ধর্মান্ধ মুসলিমরা তাকে দিয়ে নোটারি পাবলিক করাতে বাধ্য করে বলে অভিযোগ ।
এই বিষয়ে মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাত বলেন,’আমার প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে । পৃথিবীর কোনো আইনে নেই যে একজন মানুষ ধর্মের প্রতি অবিশ্বাস দেখালে তার বাবার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করতে হবে,পরিবারের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করতে হবে, আত্মীয়স্বজনের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করতে হবে । আমার মতে এরকম কোনো আইন বিশ্বের কোনো দেশেই নাই । আমি যে দোকানে গিয়ে চা খেতাম সেই দোকানদারকে পর্যন্ত মৌলবাদীরা, পুলিশ,সংবাদিকরা হুমকি দিচ্ছে ও বিভিন্নভাবে হেনস্থা করছে । আমার পরিবারকে গালিগালাজ ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে ।’ তিনি আরও বলেন,’আমি খুন বা ধর্ষণ করিনি,কোনো গরিবের টাকা আত্মসাতের মত কোনো অপরাধই করিনি । কেবল মাত্র ধর্মীয় কুসংস্কারকে আমি বিশ্বাস না করে মানবতায় বিশ্বাস রেখে চলি । একজন মানুষ হিসাবে মনে করি পৃথিবীর সকল ধর্মই মানুষের সৃষ্টি । মানুষকে শোষণ ও নিপিড়ন করার জন্য ধর্মের উদ্ভব হয়েছে । ধর্ম একটা বৈষম্যমূলক মতবাদ । ধর্ম মানে একটা পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ । আমি শুধু এই কথাই বলেছি ।’
শেরপুরের মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাতের দেশত্যাগ নিয়ে আসাদ নূরের প্রশ্ন,’বাংলাদেশের আইন কি ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয় ? ধর্মীয় অবিশ্বাসকে কেন অপরাধ হিসাবে দেখা হচ্ছে ?’