প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৯ ডিসেম্বর : এককালে রঘু ডাকাতের দঃসাহসিক কার্যকলাপ নাকি ঘুম কেড়ে নিতি ব্রিটিশ সরকারের।ডাকাতি নিয়ে কথা উঠলেই প্রবীনদের মুখথেকে এমন কথা আজও শোনা যায়। আর এখন রঘু ডাকাতের নামটা ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই হয়ে গেলেও পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ ও জেলার স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে বিহার গ্যাং।তাদের দৌরাত্ব ঠেকাতে জেলা পুলিশ ইতিমধ্যেই জেলার স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছে। কারণ পুলিশের কাছে খবর রয়েছে বিহারের একটি গ্যাং বড়সড় ডাকাতির ছক কষেছে।সেইমতওই গ্যংয়ের দুস্কৃতিরা জেলার কালনা, কাটোয়া এবং শহর বর্ধমানে রেইকিও করেছে।এইসব জেণেই জেলা পুলিশ গোটা জেলার সমস্ত সোনা রূপো ব্যবসায়ীদের সন্ধ্যে সাড়ে সাতটার মধ্যে দোকান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।পাশাপাশি কয়েকজন সন্দেহভাজনের ছবিও সোনারূপো ব্যবসায়ীদের কাছে পুলিশ পাঠিয়ে দিয়েছে।পুলিশের কাছ থেকে বিহার গ্যংয়ের উদ্দেশ্যের কথা শুনে স্বর্ণ ব্যবসায়ী মহলেও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে ।
স্বর্ণব্যবসায়ীদের কথায় জানা গিয়েছে, বর্ধমান থানা থেকে পুলিশ ও সিভিক ভলেণ্টিয়াররা বুধবার সন্ধ্যে প্রায় ৭টা নাগাদ বর্ধমান শহরের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছে যায়। তাঁরাই স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের জানায়, বিহার থেকে একটি বড় গ্যাং ঢুকেছে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রত্যেক ব্যবসায়ীদের এব্যাপারে সতর্ক থাকারও নির্দেশ দিয়ে যায় পুলিশ কর্মীরা।পাশাপাশি জেলা পুলিশের তরফে গোটা জেলা সমস্ত স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়।তবে বিহার গ্যাং এর বিষয়টি নিয়ে পুলিশ বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কালনার ক্ষেত্রে। যেহেতু কালনা থেকে সহজেই নদীয়া যাওয়া যায় তাই অপরাধীরা অপরাধ সংগঠিত করে যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।বর্ধমানের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানান,পুলিশ সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়া যে ছবি তাঁদের দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে ওই সন্দেহ ভাজন ব্যক্তিরা সোনা রূপোর দোকানের সামনেই ঘোরাফেরা করছে।
জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন জানিয়েছেন,পাশ্ববর্তী জেলায় সোনা রূপোর দোকানে ডাকাতি হওয়ায় সতর্কতা হিসেবে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সন্ধ্যাতেই দোকান বন্ধ করতে বলা হয়েছে ।
বর্ধমান সদর স্বর্ণশিল্পী ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক স্বরূপ কোনার বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের পর শহর বর্ধমানে একের পর এক অলংকারের দোকানে ডাকাতি, ছিনতাই, কেপমারি প্রভৃতি ঘটনা ঘটে । তার পর তাঁরা নিজেরাই দফায় দফায় বর্ধমানের বড়বাজার সোনাপট্টি এলাকা থেকে বড়বাজার, বিসিরোড পর্যন্ত প্রায় ৪৩টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগান। বর্তমানে সেগুলি পুলিশ দেখভাল করছে। স্বরুপ বাবু আরো জানান, বিহারের দুস্কৃতি গ্যাংয়ের খবর পুলিশ আগাম তাঁদের দেওয়ায় তাঁরা সতর্ক রয়েছেন। তবে সকল স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে পুলিশী টহল জোরদার করার দাবী উঠেছে ।
এই প্রসঙ্গে স্বর্ণ ব্যবসায়ীয়া এদিন ২০২০ সালের ১৭ জুলাইয়ের ঘটনার কথা সামনে আনেন। তাঁরা বলেন,ওইদিন দিনের বেলায় শহর বর্ধমানের সবথেকে জনবহুল বিসিরোডে থাকা একটি স্বর্ণ বন্ধকী কোম্পানীর অফিসে হানা দেয়ে সশস্ত্র দুস্কৃতি দল ।তারা ৩০ কেজি ২০৫ গ্রাম ২০ মিলিগ্রাম সোনা নিয়ে চম্পট দেয়। এছাড়াও শহরের কেন্দ্রস্থল কার্জন গেটের পাশে দুটি ব্যাঙ্কে পরপর ডাকাতির ঘটনাও ইতিপূর্বে ঘটেছে। তাই এখন আবার পুলিশ বিহার গ্যাং নিয়ে সতর্ক করায় স্বাভাবতই আতঙ্কে রয়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা ।।