দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),০৬ জুলাই : পিছনের বাম পায়ে গুরুতর চোট নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে খাবারের খোঁজে খাবারের দোকানে দোকানে ঘুরে বেড়াচ্ছিল একটি মালিকবিহীন ঘোড়া । খবর পেয়ে এসে ঘোড়াটির পরিচর্যা শুরু করেন এক পশুপ্রেমী যুবক । পশু চিকিৎসককে ডেকে নিজের খরচে চিকিৎসা করান তিনি । কিনে আনেন ওষুধ, ইঞ্জেকশন ও ঘোড়ার উপযোগী খাবারও । এখন এককভাবে ওই খোঁড়া ঘোড়ার পরিচর্যা করতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়ে গেছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার মুরাতিপুর এলাকার বাসিন্দা শেখ আমির । তিনি বলেন, ‘ঘোড়াটা কারোর পোষা মনে হচ্ছে । সম্ভবত পায়ের চোটের কারনে বসে বসে খেতে দিতে হচ্ছে দেখে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে পালিয়েছে । যদি এটা সত্যি হয় তাহলে তা খুবই অমানবিক কাজ । ঘোড়াটার অবস্থা দেখে খুব মায়া লাগছে । আমার বাড়িতে রাখার জায়গা থাকলে আমিই নিয়ে যেতাম । কিন্তু আমি নিরুপায় । তাই ঘোড়ার মালিকের কাছে আবেদন করবো অবিলম্বে যেন ঘোড়াটা নিয়ে যান ।’
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,এদিন ভোরে মুরাতিপুর বাজারে হঠাৎ আবির্ভাব হয় মালিকবিহীন ওই ঘোড়াটির । খোঁড়াতে খোঁড়াতে ঘোড়াটি এসে হাজির হয় পরেশ সাহা নামে জনৈক এক চা বিক্রেতার দোকানে । পরেশবাবু বলেন, ‘ঘোড়াটিকে দেখে মনে হচ্ছিল খুব ক্ষুধার্ত । আমি তাকে কিছু বিস্কুট, পাঁউরুটি খাওয়ালাম । আরো কিছু লোকজনও বিস্কুট, পাঁউরুটি কিনে ঘোড়াটিকে খাওয়ায় । তবু দোকানের সামনে থেকে সে নড়ছিল না । তখন বাধ্য হয়ে পশুপ্রেমী যুবক শেখ আমিরকে খবর দিই।’
জানা গেছে,শেখ আমির নামে ওই যুবক এসে প্রথমে ঘোড়াটি একটি খুঁটিতে বেঁধে রাখেন । তারপর নিজের খরচে ছোলা,গুড়,বিস্কুট প্রভৃতি কিনে এনে তাকে খেতে দেয় । তাঁর কাছ থেকে খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই মুরাতিপুরে চলে আসেন কালিপাহাড়ির বাসিন্দা নিত্যানন্দপুর পঞ্চায়েতের প্রাণীসেবী প্রশান্ত ধাড়া । তিনি তিনটি ইঞ্জেকশন ও কিছু ওষুধ লিখে দেন । নিজের গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে তা কিনে এনে চিকিৎসকের হাতে তুলে দেন ওই যুবক । তারপর ঘোড়াটিকে ইঞ্জেকশনগুলি দেওয়ার পর চিকিৎসক যুবককে ওষুধ খাওয়ানোর নিয়ম বুঝিয়ে দেন । প্রশান্তবাবু জানিয়েছেন, নিয়ম করে ওষুধ খাওয়ালে ৩-৪ দিনের মধ্যেই ঘোড়াটি সুস্থ হয়ে যাবে । পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘পশুপাখিদের প্রতি শেখ আমিরের মানবিকতা সত্যই প্রশংসনীয় । এজন্য আমি ওনাকে সাধুবাদ জানাই ।’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘোড়াটির পরিণতি কি হবে তা ভেবে ঘুম ছুটে গেছে মুরাতিপুরের ওই পশুপ্রেমী যুবকের ।।