দিব্যেন্দু রায়,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),২৮ মে : নাকা চেকিংয়ের সময় তিন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতারের পর গাঁজা ও অস্ত্র পাচারের একটি বড়সড় চক্রের হদিশ পেলো পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার পুলিশ । আর এই চক্রের মূল পান্ডা আর কেউ নয়,বরঞ্চ মঙ্গলকোটের লাখুড়িয়া অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি অসীম দাসকে খুনের প্রধান আসামি শেখ রাজু । বর্তমানে সে বর্ধমান সংশোধনাগারে বন্দি । জেলে থেকেই সে ফোন মারফত চক্রটিকে পরিচালনা করছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে । এই চক্রের অন্যতম সদস্য রাজুর বাল্যকালের বন্ধু নানুর থানার সিভিক ভলান্টিয়ার সংকেত ঘোষকে (৩৩) পুলিশ পাকড়াও করেছে । বীরভূম জেলার নানুর থানা এলাকার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা সংকেতকে শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয় । আটক করা হয়েছে তার বাইকটিও । শনিবার ধৃতকে কাটোয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে চার দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক । এদিকে জেলবন্দি খুনের আসামির কাছে মোবাইল ফোন কিভাবে গেলো তা ভাবাচ্ছে পুলিশকে । বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই পুলিশ তদন্তে নেমেছে ।
মঙ্গলকোটের নতুনহাটে লোচন দাস সেতুতে মাঝেমধ্যেই নাকা চেকিং চালায় মঙ্গলকোট থানার পুলিশ । বুধবার রাতেও পুলিশের একটি দল নাকা চেকিং চালাচ্ছিল । তবে তার আগে গোপন সুত্র থেকে পুলিশের কাছে আগাম কিছু খবর এসেছিল । তাই পুলিশের সঙ্গে ছিল এসওজি সেল । আর তখনই একটি কালো রঙের বাজার পালসার বাইকে চড়ে আসা টুনটুন কুমার, পিন্টু কুমার এবং রাজেশ শেখ নামে ওই তিন দূষ্কৃতীকে ২৪ কেজি গাঁজা,৩ টি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১৩ রাউন্ড কার্তুজসহ গ্রেফতার করে পুলিশ । ধৃতদের মধ্যে প্রথম দু’জন বিহারের বাসিন্দা । রাজেশের বাড়ি মঙ্গলকোটের কোটালঘোষ এলাকায় । পুলিশ ৩ জনকে কাটোয়া মহকুমা আদালতে তুলে ১০ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানায় । বিচারক ধৃতদের ৭ দিনের হেফাজত মঞ্জুর করে ।
ধৃতদের জেরা করতেই পুলিশ জানতে পারে শেখ রাজু জেলে বসেই ফোন মারফত গোটা চক্রটা পরিচালনা করছে । বীরভূম জেলার নানুর থানা এলাকার সিতাই গ্রামে বাড়ি ছিল শেখ রাজুর। তবে সে মঙ্গলকোটের মল্লিকপুরে শ্বশুরবাড়িতে থাকত ।শ্বশুরবাড়িতে বসে বেআইনি বালির কারবার চালাতো । রামকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা সংকেত ঘোষের সঙ্গে রাজুর খুব ছোটো থেকে বন্ধুত্ব । রাজু জেলে যাওয়ার পরেও দু’জনের ফোনে যোগাযোগ ছিল । বুধবার পুলিশ যে গাঁজা ও অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে তা পাচারের জন্য রাজু ও সংকেতের মধ্যে ফোনে পরিকল্পনা হয়েছিল । পরিকল্পনা অনুযায়ী বিহারের দুই পাচারকারী টুনটুন কুমার ও পিন্টু কুমারকে গত ২২ মে শান্তিনিকেতনে একটি লজে একটি ঘর ঠিক করে দেয় সংকেত । শুধু তাই নয়, গত বুধবার বিহারের দুই দুষ্কৃতীকে বীরভূম ও মঙ্গলকোটের সীমান্ত পর্যন্ত সে পৌঁছে দিয়েছিল । তারপর একটি কালো রঙের বাজাজ পালসার বাইকে চড়ে মঙ্গলকোটের দিকে আসে টুনটুন,পিন্টু এবং রাজেশ । বাইকটি চালাচ্ছিল টুনটুন । পুলিশ তাদের আটকে তল্লাশি চালাতেই আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমান গাঁজা উদ্ধার করে । এই পাচার চক্রে বাকি দুষ্কৃতীদের হদিশ পেতে ধৃতদের ম্যারাথন জেরা চালাচ্ছে মঙ্গলকোট থানার পুলিশ ।।