জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বেলুড়,১১ এপ্রিল : জন্মের পর থেকেই সুগার, থাইরয়েড, ব্লাড প্রেসার, ক্লোস্টেরল,ওবেসিটি ইত্যাদি যেন অধিকাংশ মানুষের যমজ সহোদর হয়ে উঠেছে। ওষুধের নাম উঠছে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকায়। আর্থিক কারণে সুস্থভাবে বাঁচার তাগিদে মানুষ খুঁজতে শুরু করেছে বিকল্প পথ। তখনই মানুষের সামনে হাজির হয়েছে ‘যোগা’ বা ‘ইয়োগা’। প্রাচীন যুগ থেকেই ‘যোগা’-র হাত ধরেই ভারতের মুনি-ঋষিরা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের সুস্থ রেখেছিলেন ।
যোগ অভ্যাস হল দেহ, মন ও আত্মাকে যুক্ত করে সুস্থ থাকার এক প্রাচীন পদ্ধতি। এতো শুধু ব্যায়াম নয়, এর আসল অর্থ হল চেতনা। ইয়োগা কথার সাধারণ অর্থ মিলন। দেহ, মন ও শক্তি- এই তিনটি জিনিসের সমন্বয়ে আমাদের শরীর চলে। ইয়োগা এই তিনটির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে, মিলন ঘটায়। নিয়মিত যোগচর্চার মাধ্যমে অসুস্থ শরীর রোগমুক্ত ও সুস্থ হয়ে ওঠে। সুস্থ শরীর আরও সতেজ হয়ে ওঠে। চঞ্চল ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মন শান্ত হতে থাকে।
এই দিকে লক্ষ্য রেখে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইয়োগা বা যোগ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। বহু শিক্ষার্থী নিজেদের সুস্থ রাখার তাগিদে সেখানে নিয়মিত ইয়োগা চর্চা করেন। শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য আয়োজিত হচ্ছে ইয়োগা প্রতিযোগিতা ।
গত ১০ ই এপ্রিল বেঙ্গল যোগা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের পরিচালনায় এবং বালি রিম্পা যোগা মন্দিরের ব্যবস্হাপনায় বেলুড় পাবলিক লাইব্রেরী হলে অনুষ্ঠিত হলো ৫৩ তম সারা বাংলা যোগাসন প্রতিযোগিতা। প্রসঙ্গত ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই রিম্পা যোগা মন্দির এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে চলেছে এবং এই প্রতিযোগিতার জন্য কোনো প্রবেশ মূল্য লাগেনা।
উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে সারা রাজ্য থেকে সহস্রাধিক মহিলা ও পুরুষ প্রতিযোগী এই প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলেও জায়গার অভাবের মোট ৪০০ জন প্রতিযোগীকে সুযোগ দেওয়া হয়। আমন্যা ভৌমিক, অঙ্কুশ বন্দ্যোপাধ্যায়, অদ্রিশ পাল, আরাধ্যা মাইতি, রূপম কোলে, দীপশিখা মণ্ডলের পারফরম্যান্স বিচারকদের মুগ্ধ করে এবং তারাই এই প্রতিযোগিতার বিভিন্ন বিভাগে বিজয়ী হয়। সমস্ত বিভাগের বিজয়ীদের নিয়ে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় যোগা সুন্দরীর খেতাব ছিনিয়ে নেয় আরাধ্যা মাইতি এবং দ্বিতীয় স্হান অধিকার করে দীপশিখা মণ্ডল ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্হানীয় বিধায়ক ডঃ রানা চ্যাটার্জ্জী, শুভেন্দু চ্যাটার্জ্জী, অরুণাভ ভট্টাচার্য, ইন্দ্রজিত অধিকারী, প্রবীর রায়চৌধুরী এবং বেঙ্গল যোগা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি সুভাষ হেমব্রম এবং সাধারণ সম্পাদক অনল ভৌমিক সহ বেশ কিছু যোগা প্রেমী মানুষ।
প্রতিযোগিতার বিচারক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ও রাজ্য স্তরের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব যারা যোগা বিচারক হিসাবে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছেন।
প্রতিযোগিতার অন্যতম উদ্যোক্তা রিম্পা যোগা মন্দিরের সদস্যা এবং জাতীয় যোগা বিচারক মুনমুন ভৌমিক বললেন – করোনার জন্য মাঝের দু’টো বছর বন্ধ থাকা সত্ত্বেও যেভাবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য প্রতিযোগী এই অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে তাতে আমরা অভিভূত। এই সংখ্যা বৃদ্ধি এই রাজ্যে যোগার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির প্রতি ইঙ্গিত করে। আশা করা যায় আগামী দিনে মানুষ সুস্থ থাকার জন্য ওষুধের পরিবর্তে যোগাকেই আঁকড়ে ধরবে ।।