এইদিন ওয়েবডেস্ক,লাহোর(পাকিস্তান),১৫ জুন : পাকিস্তানে কোরান পোড়ানোর মিথ্যা অভিযোগে একজন খ্রিস্টান বৃদ্ধকে গোটা ইঁট ছুড়ে নির্মমভাবে পিটিয়েছিল জিহাদিরা । গত ২৫ মে ওই ঘটনার ১০ দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় নাজির মসিহ গিল নামে ৭৪ বছরের ওই বৃদ্ধের । পাশাপাশি খ্রিস্টানদের ঘরবাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটও চালানো হয় । লুটপাটে অংশগ্রহণ করে মহিলা জিহাদিরা । ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পাকিস্তানি পুলিশ । এদিকে গ্রেফতারির প্রতিবাদে এবং তাদের মুক্তির দাবিতে রবিবার (৯ জুন ২০২৪) একটি সমাবেশ করে কট্টরপন্থী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি) । এমনকি তারা পুলিশ প্রশাসনকে হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে ।
খ্রিস্টান ডেইলি ইন্টারন্যাশনাল-মর্নিং স্টার নিউজ এর প্রতিবেদনে জানা যায়, টিএলপি সারগোদার নেতা সন্ত্রাসী মুহাম্মদ নাঈম চাট্টা কাদরী তার বক্তৃতায় বলেছে,’আমাকে বলুন যে কোরান পুড়িয়েছে সেই ছুহরাকে হত্যা করা আমাদের ভুল ছিল কিনা ? আমরা কখনই কোরানের পবিত্রতা এবং সম্মানের সাথে আপস করব না এবং যে কেউ ধর্ম অবমাননা করবে তার একই পরিণতি হবে।’
প্রসঙ্গত, চুহরা হল ঐতিহাসিকভাবে স্যানিটেশন কর্মীদের জন্য সংরক্ষিত একটি নিন্দনীয় শব্দ, যা এখন পাকিস্তানের সমস্ত হিন্দু ও খ্রিস্টানদের জন্য অবমাননাকর শব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হয় ।
সন্ত্রাসী কাদরি টিএলপি কর্মীদের গ্রেফতার করার বিরুদ্ধে পুলিশকে হুমকি দিয়ে বলেছে,’যদি তারা ব্লাসফেমারদের রক্ষা করার চেষ্টা করে তবে আমরা চৌকি (প্রধান রাস্তায়) সিনিয়র পুলিশের ইউনিফর্ম ছিঁড়ে দেব। তারা আমাদেরকে শান্তিপূর্ণ থাকতে বলেছে, কিন্তু আমরা তাদের বলতে চাই যে কোরান অবমাননার ঘটনা বন্ধ না হলে, আমরা সারগোধায় যেভাবে ঘটনাটি ঘটেছে সেভাবেই মোকাবেলা করব।’ ওই সন্ত্রাসবাদী বলেছে, লাব্বাইক ইয়া রাসুল আল্লাহ (আমরা উপস্থিত হে আল্লাহর রসূল) ।’ এরপর করতালিতে ফেটে পড়ে জিহাদিদের দল।
গত ২৫ মে সারগোধায় মসজিদের লাউডস্পিকার থেকে ঘোষণার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হিংসা উস্কে দেওয়ার পর একটি মুসলিম জনতা শহরের মুজাহিদ কলোনিতে নাজির মসিহ গিলের বাড়িতে হামলা চলায় । নারী ও শিশুসহ উত্তেজিত জনতা গিলকে মাটিতে ফেলে নির্মমভাবে ইট-পাথর ছুঁড়ে, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ও লাথি মারে । হামলাকারী তার পরিবারের জুতার ওয়ার্কশপ পুড়িয়ে দেয় এবং তার বাড়িতে লুটপাট চালায়। পুলিশ কার্যত নির্বাক দর্শকের ভূমিকা পালন করে । গিলের মাথার খুলি ভেঙে যায় এবং গুরুতর রক্ত জমাট বাঁধে। জনতা গিলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সটিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে, উদ্ধার প্রচেষ্টাকে আরও জটিল করে তোলে। ওই খ্রিস্টানকে গুরুতর অবস্থায় রাওয়ালপিন্ডির একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, যেখানে তার মাথায় দুটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল । কিন্তু ১০ দিনের মাথায়, তত ৩ জুন আঘাতের কারণে তিনি মারা যান।।