এইদিন ওয়েবডেস্ক,জম্মু ও কাশ্মীর,১৮ অক্টোবর : জম্মু-কাশ্মীরে ৯০-এর দশকের “টার্গেট কিলিং”য়ের আতঙ্ক ফিরিয়ে আনতে চাইছে কট্টরপন্থী ও আতঙ্কবাদী সংগঠনগুলি । কারন ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির পর উপত্যকায় শান্তি বহাল করা ও বাস্তুচ্যুত কাশ্মীরী পন্ডিতসহ অনান্য সংখ্যালঘুদের উপত্যকায় পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে কেন্দ্র সরকার । আর কেন্দ্র সরকারের এই প্রচেষ্টাকে ভালো চোখে দেখছে না কট্টরপন্থী ও আতঙ্কবাদী সংগঠনগুলি । তাই তারা কেন্দ্র সরকারের এই প্রচেষ্টাকে বানচাল করতে পরিকল্পনা মাফিক উপত্যকায় ভয়ের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হয়েছে । ঘটছে একের পর এক “টার্গেট কিলিং”য়ের ঘটনা । আর এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে মূলত লস্কর-ই-তৈয়বার দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF) । সঙ্গে রয়েছে জইশ-ই-মোহাম্মাদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের স্লিপার সেলের চরমপন্থী সন্ত্রাসবাদীরা । তারা শুধু স্থানীয় হিন্দু ও সংখ্যালঘুদেরই হত্যা করছে না পাশাপাশি কর্মসুত্রে উপত্যকায় আসা ভিন জেলার বাসিন্দাদেরও ‘সফট টার্গেট’ করছে । যদিও নিরাপত্তাবাহিনীর দাবি করেছে, খুব শীঘ্রই টিআরএফসহ বাকি উগ্রপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত আতঙ্কবাদীদের খতম করা হবে ।
প্রসঙ্গত, ৩৭০ ধারা অপসারনের পর উপত্যকায় শিল্প প্রতিষ্ঠা,বসতি স্থাপন,জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও কাশ্মীরীদের কর্মসংস্থানের রাস্তা পরিষ্কার হয়ে গেছে । বিপুল কেন্দ্রীয় অর্থ বিনিয়োগ করে ওই সমস্ত প্রক্রিয়া এখন জোর কদমে চলছে । সেই সঙ্গে উপত্যকায় শান্তি স্থাপনের পাশাপাশি কাশ্মীরী পন্ডিতদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়াও চালাচ্ছে কেন্দ্র সরকার ।
সেই লক্ষ্যে ৯০ এর দশকে কাশ্মীরী পন্ডিতদের কাছ থেকে জবরদস্তি কেড়ে নেওয়া ভিটেমাটি জমিজমা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য রাজস্ব আদালত (revenue court) নামে বিশেষ আদালত গঠন করা হয়েছে । আর এই আদালতে নথিপত্র জমা দিয়ে জবরদখল করা জমিজায়গা ফিরে পাওয়ার দাবি জানাচ্ছেন কাশ্মীরি পন্ডিত ও অন্যান্য সংখ্যালঘুরা । যা একদমই মেনে নিতে পারছে না চরমপন্থী এবং সন্ত্রাবাদীরা । কারন ওই সমস্ত জমি জায়গাগুলির বেশিরভাগ অংশই মূলত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ও তাদের সাথে সম্পর্কিত লোকজনের দখলে রয়েছে । যেগুলি হয় তারা কেড়ে নিয়েছিল নচেৎ বাস্তুচ্যুত হিন্দুদের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে কিনে নিয়েছিল । তাই চরমপন্থী এবং সন্ত্রাবাদীরা চাইছে না নব্বইয়ের দশকে দখলকৃত জমি হিন্দু বা সংখ্যালঘুদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক ।
আরও কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো সন্ত্রাবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলির হজম হচ্ছে না । বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন,৩৭০ ধারা উঠে যাওয়ায় বর্তমানে দেশের যে কোন প্রান্তের মানুষ জম্মু-কাশ্মীরে জমিজায়গা কিনে বসবাস করতে পারবেন । আর এটাকে কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছে না ওই সমস্ত সংগঠনগুলি । এছাড়া ডোমিসাইল মামলার (domicile case) প্রক্রিয়া এখন কেন্দ্র সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে ।কেন্দ্র সরকার সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাশ্মীরীদের আবাসিক শংসাপত্র শুধু অনলাইনেই নয়, উপরন্তু ক্যাম্প করে অফলাইনে দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে । এছাড়া পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী কাশ্মীরী মেয়েদের ভিন রাজ্যে বিয়ে হলে উপত্যকায় সম্পত্তি কেনার অধিকার থাকতো না । কিন্তু নতুন নিয়মে এখন সেই বাধ্যবাধকতা নেই ।
তবে কেন্দ্র সরকারের কঠোর মনোভাবে কার্যত ঘুম কেড়ে নিয়েছে কট্টরপন্থী ও আতঙ্কবাদী সংগঠনগুলির । কারন সরকার বিগত কিছুদিন ধরে যেভাবে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা লোকজনদের না শুধু চাকরি থেকে বহিষ্কার করছে উপরন্তু তাদের উপর কঠোর আইনি পদক্ষেপও নিচ্ছে । যার ফলে স্থানীয় কট্টরপন্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ।
এদিকে সরকার উপত্যকায় নতুন নতুন স্কীম নিয়ে আসছে । স্থানীয় বেকার মানুষরা কাজ পাচ্ছেন । ফলে আতঙ্কবাদী সংগঠনগুলি আর বেকার যুবকদের ভুল বুঝিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্যে আর ব্যবহার করতে পারছে না । তাই সরকারের স্কিমগুলো যাতে জম্মু-কাশ্মীরে কোনওভাবেই লাগু হতে না পারে তার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মোহাম্মদ ও হিজবুল মুজাহিদিনের মত আতঙ্কবাদী সংগঠনগুলি । সেই কারনে তারা সমবেতভাবে উপত্যকায় ফের ৯০-এর দশকের ভয়ের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে “টার্গেট কিলিং”য়ের জন্য স্লিপার সেলকে ময়দানে নামিয়ে দিয়েছে । তারা মূলত স্থানীয় হিন্দু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিশানা করছে । অন্যদিকে বসে নেই ভারতীয় সেনাবাহিনী । গোটা উপত্যকা জুড়ে চলছে জোরদার ‘সাফাই অভিযান’ ।।