এইদিন ওয়েবডেস্ক,হরিয়ানা,০৪ ফেব্রুয়ারী : রাম মন্দিরে হামলার ছক কষা সন্ত্রাসী আব্দুল রহমানকে (Abdul Rehman)হরিয়ানার ফরিদাবাদ জেলার পালি গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । গুজরাট এবং হরিয়ানার এটিএস দল যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে তাকে পাকড়াও করে । প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে যে ওই সন্ত্রাসী ইসলামিক স্টেট- আইএসকেপি এর সাথে যুক্ত ছিল এবং অনলাইন প্রশিক্ষণও নিচ্ছিল। আব্দুল ফরিদাবাদে ‘শঙ্কর’ নামে পরিচয় দিয়ে লুকিয়ে ছিল এবং সন্ত্রাসী সংগঠনের হ্যান্ডলার তাকে দুটি হাতবোমা সরবরাহ করেছিল। সেই বোমা ব্যবহার করে সে অযোধ্যার রাম মন্দিরে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল । বোমা দুটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
খবর অনুযায়ী, জামাত এবং নিজামুদ্দিন মারকাজের সাথে আব্দুলের সংযোগও প্রকাশ্যে এসেছে। প্রায় ছয় মাস আগে সে অযোধ্যা শহরে গিয়েছিল । সেখানে সে মাওলানা উসমান হযরতের সংস্পর্শে আসে । এরপর সে দিল্লির মারকাজে এবং তারপর বিশাখাপত্তনমে যায় । চার মাস পর সে গ্রামে ফিরে আসে। পুলিশের সন্দেহ, মারকাজে থাকাকালীন তার সাথে পারভেজ আহমেদ ওরফে পিকে-র দেখা হয়। জম্মুতে লস্কর এবং হিজবুলের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করত পিকে। এটিএস ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে নিজামুদ্দিনের একটি গেস্ট হাউস থেকে পিকেকে গ্রেপ্তার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পুলিশ রেহমান সম্পর্কে জানতে পারে । এখানেই তাকে দুটি হ্যান্ড গ্রেনেডও দেওয়া হয়েছিল।
পুলিশ বলছে, আব্দুল আইএসআই এবং আইএসকেপি মডিউলের সাথে যুক্ত ছিল। আইএসকেপি অর্থাৎ ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রদেশ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন, যা আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে সক্রিয়। প্রায় ১০ মাস আগে এই মডিউলের মাধ্যমে আব্দুলকে অনলাইন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল । ভিডিও কলের মাধ্যমে তাকে অস্ত্র ব্যবহার এবং আক্রমণ করার পদ্ধতি শেখানো হয়েছিল। রাম মন্দিরে আক্রমণ ছিল তার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।
রবিবার (২ মার্চ, ২০২৫) সন্ধ্যায় ফরিদাবাদের পালি গ্রাম থেকে আব্দুলকে গ্রেফতার করে গুজরাট ও হরিয়ানার এটিএস। সে সেখানে শঙ্কর নামে লুকিয়ে ছিল। খামারবাড়িতে টিউবওয়েলযুক্ত একটি ঘরে থাকত। তার কাছ থেকে দুটি হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলো তাকে একজন হ্যান্ডলার দিয়েছিল পুলিশ বলছে, সে রাম মন্দিরে গ্রেনেড দিয়ে আক্রমণ করতে যাচ্ছিল । এর জন্য সে এর আগেও বেশ কয়েকবার মন্দিরের রেইকি করেছিল । সে অযোধ্যা থেকে ট্রেনে ফরিদাবাদ পৌঁছায় । কিন্তু গ্রেনেড নিয়ে অযোধ্যায় যাওয়ার আগেই সে ধরা পড়ে যায় ।
জানা গেছে, আব্দুল রেহমান অযোধ্যার ইনায়েতনগর থানার মাঞ্জানাই গ্রামের বাসিন্দা। সে ২০০৫ সালের ২৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করে । মঞ্জানাইয়ের মণিরাম যাদব ইন্টার কলেজ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে আব্দুল । গ্রামবাসীদের মতে, আব্দুল দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত । প্রতিদিন নামাজ পড়ত এবং প্রতি ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করত । তার মা ইয়াসমিন বলেন যে আব্দুল ই-রিকশা চালাত । তার ছেলে গ্রাম এবং আশেপাশের এলাকায় লোকজনকে বহন করে নিয়ে যেত । সে বাড়িতেও কিছু না কিছু বানাত । তার বাবা আবু বকর মুরগি জবাই করেন এবং বাড়িতে একটি মুরগির দোকান চালান।
এদিকে, আব্দুলের ‘হৃদয়ে ছিদ্র’ থাকার কথাও শোনা যাচ্ছে, যে সমস্যায় সে ছোটবেলা থেকেই ভুগছে । গুজরাটের আহমেদাবাদের হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর সে প্রাণে বাঁচে । আব্দুলের মা বলেছেন,গত ১ মার্চ এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে দিল্লি গিয়েছিল আব্দুল । ছেলে বলেছিল যে সে মঙ্গলবার (৪ মার্চ, ২০২৫) এর মধ্যে ফিরে আসবে, কিন্তু তার গ্রেপ্তারের খবর আসে। মায়ের দাবি, তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশ তার বাবা আবু বকরকেও ধরে নিয়ে যায় এবং বাড়ি থেকে ব্যাংক পাসবুকের মতো কিছু নথিপত্র নিয়ে যায় বলে জানা গেছে ।
আব্দুলের গ্রেপ্তারের পর অযোধ্যায়ও আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এসটিএফ দল তার গ্রামে পৌঁছে বাড়িটি তল্লাশি করে। সেখান থেকে কিছু সন্দেহজনক জিনিস পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এখন অযোধ্যার খুঁটিনাটি বিষয় নজরে রাখছে। ফরিদাবাদেও পুলিশ সতর্ক হয়ে উঠেছে। সেখানে সন্ত্রাসীদের স্লিপার সেল থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আব্দুল ফরিদাবাদেও নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করছিল। আব্দুলের ফোন থেকে অনেক ধর্মীয় স্থানের ছবি এবং ভিডিও পাওয়া গেছে। চার-পাঁচ দিন আগে সে মারকাজে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। এই ঘটনায়, ফরিদাবাদের ডাবুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেখান থেকে গুজরাট এটিএস আব্দুল রেহমানকে ধরে নিয়ে গেছে।।