এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাঁকুড়া,১৯ অক্টোবর : বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী থানা এলাকার এক বিজেপি নেতার দাদাকে বধু নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতার করতে গিয়ে মারধর,ভাঙচুরের পাশাপাশি মহিলাদের হেনস্থা করার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে । অন্যদিকে পুলিশকে মারধর ও সরকারি কাজে বাধাদানের পালটা অভিযোগ উঠল ওই বিজেপি নেতার পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে । সোমবার রাতে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় সোনামুখী থানা এলাকার কুরুমপুর গ্রামে । পুলিশ বধু নির্যাতনের অভিযোগে বিজেপি নেতা চঞ্চল সরকারের দাদা জয়ন্ত সরকারকে গ্রেফতার করেছে । সেই সঙ্গে চঞ্চলবাবুর পরিবারের ৩ মহিলাসহ ১০ জন প্রতিবেশীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ । এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তেমনি বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর ।
জানা গেছে,কুরুমপুর গ্রামের বাসিন্দা চঞ্চল সরকার দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন । বর্তমানে সোনামুখী ২ নম্বর মণ্ডলের সভাপতির পদে দায়িত্বে রয়েছেন তিনি । তাঁর ভাই জয়ন্ত সরকার ব্যবসাসূত্রে বিদেশে থাকেন । জয়ন্তবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, স্ত্রী ও মেয়ে থাকা সত্বেও নদীয়ার কল্যাণীর বাসিন্দা জনৈক এক মহিলাকে তিনি বিয়ে করেছিলেন । সম্প্রতি ঐ মহিলার আপত্তিকর কিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ওই মহিলাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে জয়ন্ত সরকারের বিরুদ্ধে । এই অভিযোগ তুলে কল্যাণীর বাসিন্দা ওই মহিলা এনিয়ে স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন । সেই অভিযোগের ভিত্তিতে জয়ন্ত সরকারের সন্ধান চালাচ্ছিল কল্যাণী থানার পুলিশ ।সম্প্রতি দূর্গাপুজো উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে সপরিবারে এসেছিলেন অভিযুক্ত ব্যক্তি । আর এই খবর পেতেই সোমবার সকালে তাঁকে গ্রেফতার করতে কুরুমপুর গ্রামে তাঁর বাড়িতে যায় কল্যাণী থানার পুলিশ । সঙ্গে সোনামুখী থানার পুলিশও ছিল ।
জয়ন্তবাবুর বোন ববিতা মল্লিকের কথায়, ‘সোমবার সকাল ৬-৭ টা নাগাদ অফিসাররা বাড়িতে এসেছিলেন । কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা না করেই সোজা ঘরের ভিতরে দিয়ে জয়ন্ত দাদার খোঁজ করে । তখন আমরা অফিসারদের বাইরের ঘরে বসার জন্য অনুরোধ করি । তাঁরা সেখানে গিয়ে বসলে আমার এক বোনের স্বামী ও ছোড়দা পুলিশের সাথে কথা বলে । কথাবার্তা হওয়ার পর পুলিশ চলে যায় । বাড়ির বাইরে এসে স্থানীয় বিধায়কের সঙ্গে কিছু কথা বলে । তারপর পুলিশ চলে যায় । কিন্তু ওইদিন সাড়ে সাতটা আটটা নাগাদ ফের পুলিশ আসে বাড়িতে ।’
তাঁর অভিযোগ, ‘পুলিশ কাউকে কিছু না বলে সোজা ঘরে ঢুকে যায় । তারপর একটা অফিসার জয়ন্ত দাদার জামার কলার ধরে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে । দরজার কাঁচ ভেঙে দেয় । আমরা কারন জিজ্ঞাসা করলে পুলিশ কোনও কিছু না বলে বাড়ির মেয়েদের ধাক্কাধাক্কি দেয় । আমার একটা বোনের আঙুল মুচড়ে দেয় । জয়ন্তদার গলা টিপে ধরে ব্যাপক মারধর করেছে । বউদি ছাড়াতে গেলে তাঁর গলায় বন্দুক ধরে একজন পুলিশ অফিসার । তখন বউদি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান । দাদাও অসুস্থ হয়ে পড়েন । তখন বাড়ির মহিলা,পুরুষরা গিয়ে পুলিশকে থামানোর চেষ্টা করে । সেই সময় পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয় ।’ পাশাপাশি তিনি জানান, ঘটনার পর তার আর এক দাদা চঞ্চল সরকার ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন ।
এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়ে গেছে । তৃণমূল নেতা সোমনাথ মুখার্জী বলেন,’বিজেপি করে বলে কি ৪৯৮ ধারায় মামলা রজু হওয়া সত্ত্বেও কি ছেড়ে দেওয়া উচিত ? ওই ধারায় আমার বিরুদ্ধে মামলা চললে আমারও শাস্তি পাওয়া দরকার । পুলিশ আইন অনুযায়ী কাজ করেছে । কর্তব্যরত পুলিশকে মারধর করা হয়েছে । পুলিশের গায়ে হাত তোলা চরম অন্যায় । একজন পুলিশ কর্মী বাঁকুড়া মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন । এটা কখনই প্রশ্রয় দেওয়া যায় না ।’ পাশাপাশি পুলিশকে মারধরের পিছনে স্থানীয় বিজেপি বিধায়কের মদত আছে বলে তিনি অভিযোগ করেন ।
অন্যদিকে স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামি বলেন, ‘জয়ন্ত সরকার একজন বিশিষ্ট সমাজসেবী । আর যাই হোক উনি পুলিশকে মারতে পারেন না । গ্রাম থেকে উঠে গিয়ে বিদেশে হোটেল ব্যবসা করছেন । উনি গ্রামকে ভালোবেসে গ্রামেই পুজো করেন ।’ সেই সঙ্গে দিবাকরবাবু বলেন, ‘তৃণমূল মানুষের পাশে থাকে না। আমরা মানুষের পাশে থাকি । সেই ভয় থেকে ওরা এই ঘটনার বিধায়কের নাম জুড়ে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে ।’।