প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২০ ডিসেম্বর : শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে এখনও উত্তাল হয়ে রয়েছে গোটা বাংলা। নিয়ম ভেঙে অনেকের অবৈধ উপায়ে শিক্ষকের চাকরি পাওয়া নিয়ে বহু চাকরি প্রার্থী এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি কলকাতা সাইকোর্টেও মামলা চলছে।এমন অবস্থার মধ্যেই এবার ভাড়া করা যুবককে দিয়ে স্কুল চালানোর অভিযোগ উঠলো স্কুলে না আসা দিদিমণির বিরুদ্ধে।ঘটনাটি পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার কোশিগ্রাম পঞ্চায়েতের শুনিয়া গ্রামের শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের।দিদিমণির এই কীর্তিতে অভিভাবক মহলেও ব্যাপক ক্ষোভ বিক্ষোভ ছড়িয়েছে।ঘটনা জানতে পেরে নড়ে চড়ে বসেছে স্কুল দফতর ।
অভিভাকদের কথায় জানা গিয়েছে,কাটোয়ার শুনিয়া গ্রামের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে শিশু শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করে পড়ুয়ারা। সরকারি খাতায় কলমে এই শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষিকা হলেন অতসী বিশ্বাস।তিনি ২০০৭ সালে এই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষিকা হিসাবে যোগ দেন।এলাকার বাসিন্দ বাসন্তী হাজরা,দিলীপ হাজরার অভিযোগ,’মূল রাস্তা থেকে কয়েক কিলোমি্টার পথ পায়ে হেঁটে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে যেতে হয়। সেই কারণে শিক্ষিকা অতসী বিশ্বাস মাসে মাত্র দু-এক দিন স্কুলে আসেন । বাকি দিন গুলিতে তিনি আর শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে আসেন না।অসুস্থতার দোহাই দিয়ে শিক্ষিকা অতসী বিশ্বাস তাঁর অবর্তমানে স্কুল চালানো ও পড়ুয়াদের ক্লাস নেওয়ার জন্য ফিরোজ মল্লিক নামে এক যুবককে টাকার বিনিময়ে ভারাটে শিক্ষক হিসাবে রেখেছেন। আর এই ভাড়াটে শিক্ষকের স্কুলে পড়ুয়াদের ক্লাস নেওয়া ও ষ্কুলে খবরদারি করার বিষয়টি নিয়ে ঘোর আপত্তি রয়েছে অভিভাবকদের । তাঁরা কিছুতেই বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না । অভিভাবকদের অনেকের আশঙ্ক,চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাসের পড়ুয়াদের পড়ানোর মত যোগ্যতা হয়তো শিক্ষিকা অতসী বিশ্বাসের নেই।তাই তিনি নিজের জায়গায় ভাড়াটে শিক্ষক নিয়োগ করে মাইনে হাতাচ্ছেন। অতসী বিশ্বাস আদৌ বৈধ পথে স্কুল শিক্ষিকার চাকরি পেয়ে ছিলেন কি না ,তার তদন্তও হওয়া দরকার বলে বাসিন্দাদের একাংশ দাবি করেছেন ।
যদিও ভাড়াটে শিক্ষক ফিরোজ মল্লিক বলেন,
‘গ্রামবাসীরা যে সব অভিযোগ তুলছেন তা সত্য নয়। দিদিমণি অতসী বিশ্বাস অসুস্থ ।’ তাই দিদিমণিকে তিনি সাহায্য করেন বলে ফিরোজ মল্লিক দাবি করেছেন । আর দিদিমণি অতসী বিশ্বাস সাফাই দিয়েছেন, তিনি শারীরিক ভাবে অসুস্থ বলেই তাঁকে সাহায্য করার জন্য তিনি যুবক ফিরোজকে রেখেছেন । তবে এইসব কোন যুক্তি মেনে নেননি জেলা স্কুল (প্রাথমিক) দফতর । এসআই দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক পিনাকী ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেন,’কোন শিক্ষক বা শিক্ষিকা তাঁদের অবর্তমানে অন্য কাউকে দিয়ে স্কুল চালাতে পারেন না।’ খোঁজ খবর নিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানিয়েছেন ।অন্যদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান তথা মেমারির বিধায়ক মধুসুদন ভট্টাচার্য্য এই ঘটনার কথা শুনে তিনি বিশ্ময় প্রকাশ করেন । মধুসুদন বাবু বলেন,’কোন শিক্ষক বা শিক্ষিকা তাঁদের হয়ে পড়ানোর জন্য স্কুলে ভাড়াটে শিক্ষক নিয়োগ করতে পারেন না । এমনটা হয়ে থাকলে তা খুবই অন্যয় কাজ হয়েছে। আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি ।’ ঘটনা সত্য হলে যথাযথ ব্যবস্থা ধেওয়া হবে বলে মধুসুদনবাবু জানিয়েছেন ।।