এইদিন ওয়েবডেস্ক,হরিশ্চন্দ্রপুর(মালদা), ০৬ ডিসেম্বর : জমিতে ধানের শিষ কুড়াতে গিয়ে ট্রাক্টরের রোটারে জড়িয়ে মৃত্যু হল এক কিশোরের । রোটারে কার্যত তিন টুকরো হয়ে যায় কিশোরের দেহ । দূর্ঘটনাটি ঘটেছে মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার ডাঙ্গিলা গ্রামের একটি জমিতে । ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ । পুলিশ জানিয়েছে মৃত কিশোরের নাম আবু তালেব ওরফে কালু (১৪)। ডাঙ্গিলা গ্রামেই তার বাড়ি । মর্মান্তিক এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ পরিবার পরিজন ও গ্রামবাসীরা । যদিও এই ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে জানা গেছে ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,কালুরা দুই ভাই এক বোন । সে মেজো । কালুর দাদা দাদা চাঁচলে একটি হোটেলে কাজ করে । তাদের বাবা-মা জনমজুরির কাজ করেন । হতদরিদ্র সংসার । চন্ডিপুর হাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র ছিল কালু । সংসারের সাশ্রয়ের জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি তাকেও ছোটখাটো কাজ করতে হত । বর্তমানে মাঠে ধান কাটার মরশুম চলছে । তাই কয়েকদিন ধরেই জমিতে পড়ে থাকা ধানের শিষ কুড়ানোর কাজ করছিল ওই কিশোর ।
মৃত কিশোরের কাকা হাসিবুল আকবর জানিয়েছেন, তাঁর দাদার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ । কোনও রকমে সংসার চলে । সেই কারনে বড় ভাইপো হোটেলে কাজে লেগেছে । ছোট ভাইপো কালু পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ছোটখাটো কাজকর্ম করত । আমন ও বোরো ধানের মরশুমে মাঠে ধান কুড়াতে যেত ।
তিনি বলেন, ‘এদিনও গ্রামের পাশে মাঠে ধান কুড়াতে গিয়েছিল কালু । একদিকে ওই জমিতে তখন ট্রাক্টরের সাহায্যে চাষ দেওয়ার কাজ চলছিল । সেই সময় আমার ভাইপো কোনওভাবে ট্রাক্টরের রোটারের সঙ্গে জড়িয়ে যায় । শুনেছি সে বাঁচার জন্য চিৎকার করে ওঠে । কিন্তু ট্রাক্ট্ররের বিকট শব্দের কারনে ভাইপোর চিৎকার ট্রাক্ট্রর চালক শুনতে পায়নি । বিষয়টি আশপাশের শ্রমিকদের নজরে পড়লে তাঁরা সমবেতভাবে চিৎকার করে ট্রাক্ট্রর চালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে । এরপর ট্রাক্টর থামিয়ে চালক নেমে এসে ভাইপোকে রোটার থেকে টেনে বের করে ।’
জানা গেছে,রোটারের ফালে কার্যত তিন টুকরো হয়ে যায় ওই কিশোরের দেহ । ফাল থেকে বের করার পর সে কিছুক্ষণ বেঁচেও ছিল । কিন্তু কিশোরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয় । এদিকে কিশোরের ওই ভয়ঙ্কর পরিনতি দেখে অজ্ঞান হয়ে যায় ট্রাক্ট্রর চালক । এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ । পুলিশ কিশোরের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে ।
এদিকে মর্মান্তিক এই ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে ছুটে আসেন এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা সুজাতা সাহা এবং জেলা পরিষদ সদস্য সন্তোষ চৌধুরী । তাঁরা মৃত কিশোরের পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন ।।