এইদিন ওয়েবডেস্ক,শিলিগুড়ি,২৬ আগস্ট : কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তরুনী চিকিৎসকের নৃশংস বর্বরোচিত ধর্ষণ হত্যাকাণ্ডের পর রাজ্য জুড়ে যেভাবে একের পর নারী নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে তাতে একটাই প্রশ্ন উঠছে, পশ্চিমবঙ্গে আদপেই কি আইনের শাসন আছে ? কেন ব্যাপক হারে বাড়ছে দুর্বৃত্তায়ন ? এরাজ্যে প্রকৃতই যদি আইনের শাসন থাকত তাহলে দুর্বৃত্ত স্বভাবের মানুষরা কি বয়স, সম্পর্ক,প্রতিষ্ঠা ভুলে পাশবিক প্রবৃত্তিকে প্রাধান্য দিতে পারত ? শিলিগুড়িতে এমন একটা ঘটনা ঘটেছে যা মানবতাকে লজ্জিত করার পক্ষে যথেষ্ট । মাত্র ১৫ বছর বয়স দার্জিলিং-এর মেয়েটির । কয়েক বছর আগে স্ত্রী সন্তানকে ফেলে পালিয়ে গেছে তার বাবা । মা কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকেন । এদিকে স্কুলে ছুটি ঘোষণা হয়েছে । সারাদিন একা বাড়িতে কিভাবে কাটাবে তা ভেবে আকুল হয়ে ওঠে ছোট্ট মেয়েটি । একদিন হঠাৎ তার খেয়াল হয় যে বাবার জ্যাঠামশাই ৬২ বছরের দেওরাজ গুরুং থাকেন শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানা এলাকায় । মেয়েটি ভেবেছিল ছুটির ক’টা দিন দাদুর স্নেহের ছায়ায় কাটিয়ে দেবে । কিন্তু বৃদ্ধ দাদুর যে তাকে দেখে আদিম প্রবৃত্তি জেগে উঠবে তা কল্পনাও করেনি মেয়েটি । দাদু পরপর তিনদিন ধরে তার উপর পাশবিক অত্যাচার চালায় ।
দাদুর এহেন আচরণের কথা লজ্জা নিজের মাকে বলতে পারেনি ওই কিশোরী । এই পরিস্থিতিতে কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না মেয়েটি । হঠাৎ তার মনে পড়ে যায় একজন ফেসবুক বন্ধুর কথা । বছর খানেক আগে উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ের বাসিন্দা করণ রাজপুত নামে বছর কুড়ির ওই যুবকের সঙ্গে তার ফেসবুকে বন্ধুত্ব হয় । ওই তরুনের উপরে ভরসা করে দাদুর সমস্ত কুকীর্তির কথা সে খুলে বলে । তার কাছে সাহায্য চায় মেয়েটি । কিন্তু ফেসবুক বন্ধুকে বিশ্বাস করে ফের ভুল করে বসে সে । মেয়েটিকে সাহায্য করতে আসার কথা বলে ইউপির উন্নাও থেকে শিলিগুড়িতে চলে আসে করন রাজপুত । এরপর মেয়েটিকে নিয়ে সে শিলিগুড়ির একটা হোটেলে গিয়ে ওঠে । ফের সেখানে ফেসবুক বন্ধুর লালসার শিকার হতে হয় ওই কিশোরীকে । সমস্ত বিশ্বাসের জায়গাগুলিতে প্রতারিত হয়ে ছোট্ট মেয়েটি তখন উদভ্রান্ত ।
উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রতিবেদনে জানা গেছে,এদিকে মেয়েটির বাবার জ্যাঠামশাই দেওরাজ গুরুং গত ২৩ আগস্ট প্রধাননগর থানায় একটা নিখোঁজ ডাইরি করেন । তাতে তিনি জানান যে তার ১৫ বছরের নাতনি ২০ আগস্ট প্রধাননগরে তার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল । ২৩ তারিখ থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না । এদিকে আরজি কান্ড নিয়ে তোলপাড়ের মাঝে এই ঘটনা ঘটায় পুলিশ কালবিলম্ব না করে কিশোরীর সন্ধানে নেমে পড়ে । অবশেষে সিসিটিভি ফুটেজে দুই তরুনের সঙ্গে কিশোরীকে শহরের রাস্তায় হেঁটে যেতে দেখে পুলিশ । ওই দুই তরুনের মধ্যে উন্নাওয়ের বাসিন্দা করণ রাজপুত এবং অন্যজন তার বন্ধু । শেষ পর্যন্ত হোটেল থেকে কিশোরীকে পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে । জিজ্ঞাসাবাদের পর দাদু ও করনের কুকীর্তির কথা সব পুলিশকে খুলে বলে । এই বর্বরোচিত ঘটনার কথা শুনে পুলিশ প্রথমেই করণ রাজপুতকে গ্রেফতার করে৷ পরে পাকড়াও করা হয় নির্যাতিতার দাদু দেওরাজ গুরুংকে । রবিবার তাদের শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে তোলা হলে জেল হেপাজতে পাঠানো হয় ।
পুলিশ জানিয়েছে,দেবরাজ গুড়ুং একা থাকেন । তার স্মার্টফোনে অশ্লীল ভিডিও, অশ্লীল চ্যাটিং পাওয়া গেছে । নির্যাতিতা কিশোরীকে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । তার বিভিন্ন শারিরীক পরীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি দিল্লিতে নির্যাতিতার মাকে ফোন করে খবর দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রধাননগর থানার পুলিশ ।।