প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৪ ডিসেম্বর : স্কুল শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে এখনও উত্তাল হয়ে রয়েছে গোটা বাংলা।অবৈধ উপায়ে অনেকের শিক্ষকের চাকরি পাওয়া নিয়ে এখনও পথে বসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বহু যোগ্য চাকরি প্রার্থী। আদালতের নির্দেশে তদন্তে নেমে সিবিআই এই দুর্নীতির একের পর এক পর্দাফাঁস করে চলেছে। এমন অবস্থার মধ্যেই শুধুমাত্র শিক্ষকের অভাবে বন্ধ করেদিতে হল পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের লক্ষীগঞ্জ আদিবাসী জুনিয়র হাই স্কুল। শুক্রবার স্কুলে আর শোনা গেলনা পড়ুয়াদের কোলাহল । ফের কবে স্কুলটি চালু করা যাবে তার কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি স্কুল পরিদর্শক। এই পরিস্থিতিতে কার্যতই হতাশ অভিভাবকরা। তাঁরা চাইছেন স্কুলটি চালুর ব্যাপারে উদ্যোগী হোক রাজ্যের স্কুল দফতর ।
আউশগ্রাম ১ চক্রের অধীনে বছর আটেক আগে লক্ষ্মীগঞ্জ আদিবাসী জুনিয়র হাইস্কুলটি চালু হয়।
এই স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হত । চালুর পর কয়েক বছর এক অতিথি শিক্ষক
স্কুল চালান।তিনি অবসর নেওয়ার পর স্থানীয়
কয়েকজন শিক্ষিত যুবক স্কুলে পড়াতেন। এরপর ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফের মওদুদ জাহেদি নামে অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক অতিথি শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। তিনি তিনটি শ্রেণির পড়ুয়াদের একটি ক্লাস রুমে বসিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের পড়াতেন। তবে এইভাদে বেশীদিন তিনি চালাতে পারেন নি। চাপ নিতে না পেরে অবসর নেওয়ার বছর দেড়েক আগেই তিনি স্কুল পরিদর্শকের কাছে ইস্তফা পত্র জমা দেন।
মওদুদ জাহেদি ইস্তফা পত্র জমা দেবার পর থেকেই স্কুলে পঠন পাঠন থমকে যাবার পরিস্থিতি
তৈরি হয় ।
অভিভাবকদের কথায় জানা গিয়েছে,স্কুলটি চালু রাখার মত আর কোন উপায় না থাকায় বৃহস্পতিবার আউশগ্রাম-১চক্রের স্কুল পরিদর্শক সুমন হাম্বীরের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ে
অভিভাবকদের একটি সভা ডাকা হয় । সেই সভায়
নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে লক্ষ্মীগঞ্জ আদিবাসী জুনিয়র হাইস্কুলে পঠন পাঠন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।এমন সিদ্ধান্তের কথা শুনে হতাশ হন
অভিভাবকরা । তারা ক্ষোভ ব্যক্ত করেন।শুক্রবার অভিভাবক জবা টুডু, লক্ষ্মী টুডু, মাকু সরেন, কাজলি হেমব্রম-রা বলেন,“চালুর সময়ে স্কুলটি শুধুমাত্র প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত ছিল। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হবে বলে জানিয়ে স্কুলটির ভবন বাড়ানো হয়। কিন্তু স্থায়ী শিক্ষক স্কুল পায়না ।শেষে স্কুলটাই বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হল । এখন বলা হচ্ছে ,“আমাদের ছেলে মেয়েদের পাশের গ্রামে স্কুলে পাঠাতে হবে। সেটা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হবে না ।তাতে এলাকায় স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়বে। অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগ করে স্কুলটি চালুর ব্যবস্থা করেছেন অভিভাবকরা।
এই প্রসঙ্গে স্কুল পরিদর্শক সুমন হাম্বীর বলেন,
‘স্কুলের একমাত্র অতিথি শিক্ষকেই পাঠদান ও অফিসিয়াল কাজকর্ম করতে হচ্ছিল। সেই চাপ তিনি আর নিতে পাচ্ছিলেন না। সেকারণে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। স্থায়ী শিক্ষকও পাওয়া যায় নি। এই সবের কারনেই আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে স্কুলটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। স্কুলের ৪১ জন পড়ুয়া যাত পাশের হাইস্কুলে ভর্তি হতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে ।’
ইস্তফা দেওয়া শিক্ষক মওদুদ জাহেদি জানান, ২০১৯ সালের আগষ্ট মাসে তিনি স্কুলের দ্বায়িত্ব পান ।তিনিই ছিলের স্কুলের একমাত্র শিক্ষক।তাঁর শরীরও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না । তাই তাঁর একার পক্ষে সব শ্রেণির পড়ুয়াদের সব বিষয়ের পাঠদান ও অফিসের কাজকর্ম একসাথে করা সম্ভব হয়ে উঠছিল না। সেই কারণে বছর দেড় কাজ থাকতেই তিনি ইস্তফা দেন ।।