প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৩ ডিসেম্বর : মিড-ডে মিলের খাবারে সাপ কিংবা টিকটিকি বা ইদুর, আরশোলার উপস্থিতি মিললেই অশান্তি চরমে ওঠে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।তবে এই বঙ্গেরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মিড-ডে মিলের মেনুতে চমকও যে থাকে সেটা হয়তো অনেকেরই আজানা।সেটাই বহস্পতিবার স্পষ্টভাবে ধরা পড়লো পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের জয়রামপুর ত্রিপল্লী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ।ডাল আর ভাত নয়,এদিন এই বিদ্যালয়ের মিড-ডে মিলের মেনুতে ছিল নলেন গুড় ও সুগন্ধী চাল দিয়ে তৈরী পায়েস,পিঠে-পুলি সহ জিভে জল আনা পনেরো রকমের মেনুর খাবার।যার স্বাদ গ্রহন করে বেজায় তৃপ্ত হয় খুদে পড়ুয়ারা। শুধু তৃপ্ত হওয়াই নয়,খাবার খেতে খেতো অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক এবং প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে গ্রাম বাংলার ’নবান্ন পার্বণের’তাৎপর্যের কথা শুনেও মোহিত হয় পড়ুয়ারা।
রাজ্যের শস্যগোলা হিসাবে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলা।কৃষি নির্ভর এই জেলার অন্যতম পার্বণ নবান্ন। আমন ধান জমি থেকে ঘরে তোলার পর সেই ধান থেকে তৈরি চাল দিয়ে তৈরি অন্ন দেবতা কে প্রথম নিবেদন করেন এই জেলার প্রতিটি কৃষিজীবী পরিবার।এই রীতিকে আঁকড়েই এরপর শুরু হয়ে যায় ’নবান্ন পর্বণ’। কিন্তু কৃষি ক্ষেত্র থেকে শুরু করে সমাজ জীবন ! সবেতে প্রযুক্তির নির্ভরতা বেড়ে চলায় ’নবান্ন পর্বণের’ তাৎপর্য এখন বিপন্ন হতে বসেছে।যদিও ’নবান্ন পর্বণের’ তাৎপর্য কখনই ভোলার নয়।সেটা মাথায় রেখেই খুদে পড়ুয়াদের ’নবান্ন পর্বণের’ তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য সন্মন্ধে অবগত করতে বিদ্যালয়ে নবান্ন পর্বণ আয়োজনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন মন্তেশ্বরের জয়রামপুর ত্রিপল্লী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
সেইমত ঠিক হয় বিদ্যালয়ের মিড-ডে মিলের খাবারেই থাকবে নবান্নের মেনু । সেই মেনু অনুযায়ী এদিন বিদ্যালয়ের মিড- ডে মিলের রান্না ঘরে হরেক রকম ফল সহযোগে বানিয়ে ফেলা হয় নতুন সুস্বাদু চাল মাখা।এছাড়াও বানানো হয় নলেন গুড়ের পায়েস, গুড়পিঠে,কলাই ডালের বড়া,ভাত,পনির, ফুলকপির তরকারি ও নানা রকমে ভাজাভুজি।শেষ পাতে পড়ুয়াদের দেওয়া হয় রসগোল্লা ও চাটনি।অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শ্রীপর্ণা চট্টোপাধ্যায় এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন চট্টোপাধ্যায় সহ অন্য শিক্ষকরা নিজের হাতে পড়ুয়াডের সেইসব খাবার পরিবেশন করেন।আঙুল চেটে পুটে এতরকম খাবার খেয়ে খুদে পড়ুয়ারা বেজায় তৃপ্ত হয় । তা দেখে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক এবং প্রধান শিক্ষক দু’জনেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
প্রধান শিক্ষক মধূসূদন চট্টোপাধ্যায় বলেন,’আমাদের স্কুলে গরিব,দিনমজুর পরিবারের ছেলে মেয়েরাই পড়াশোনা করে।অভাব অনটনের কারণে পড়ুয়াদের পরিবার বাড়িতে ’নবান্ন’ অনুষ্ঠান করতে সামর্থ হন না।তাই ওই পড়ুয়াদের কাছে তাৎপর্য হারাচ্ছিল ’নাবান্ন পার্বণ’। সেকথা মাথায় রেখে স্কুলেই পড়ুয়াদের বাংলার নাবান্ন পর্বণের সঙ্গে পরিচয় করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । তার জন্য মিড -ডে মিল কেই বেছে নেওয়া হয় ।এদিন মিড-ডে মিলে নতুন ধানের চালের পায়েস থেকে শুরু করে হরেক পদের বাঙালি আনা খাবার রান্না করা হয়। মিড-ডে মিলে সেই খাবার খেয়ে পড়ুয়ারা খবই তৃপ্ত হয়েছে।’ একই সাথে তারা নবান্ন পার্বণের সাথেও পরিচিত হল বলে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন।
অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শ্রীপর্ণা চট্টোপাধ্যায় বলেন,’পড়ুয়াদের বাংলার ’নবান্ন পার্বণের’ তাৎপর্য বোঝাতে জয়রামপুর ত্রিপল্লী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদ্যোগ সত্যিই অভিনব। খুবই শিক্ষনীয় একটি বিষয়। পড়ুয়াদের আনন্দদানে মধ্যদিয়ে শিক্ষকরা যেভাবে ‘নবান্ন’ পার্বণকে’ তুলে ধরেন,তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।’।