দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১৮ মে : ভালোবেসে বিয়ে করায় সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয় বাপের বাড়ির লোকজন । এদিকে কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ায় পর থেকেই শুরু হয় স্বামীর নির্যাতন । শেষে কোনো রাস্তা দেখতে পেয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের ইছাবটগ্রামের গৃহবধূ সুপ্রিয়া দাস। ভেবেছিলেন সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাটোয়ায় ভাগিরথীতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন । তার আগে কাটোয়ার সুবোধ স্মৃতি রোডের একটি চায়ের দোকানে বসে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছিলেন ওই বধু । বিষয়টি অনুমান করে ফেলেছিলেন চায়ের দোকানের মালিক পুতুল সর্দার । তিনি বধুকে কিছু না বলে তাঁর উপর শুধু নজর রেখে যাচ্ছিলেন । এরপর বধু তাঁর মেয়েকে নিয়ে ভাগিরথীর ঘাটের দিকে পা বাড়াতেই তাঁর পথ আটকে দাঁড়ান পুতুলদেবী । তারপর তিনি বধুকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিজের চায়ের দোকানে এনে বসান । তাঁর এই প্রচেষ্টায় বুধবার দুপুরে দুটি প্রাণহানী হতে বেঁচে যায় ।
পুতুল সর্দার বলেন,’মেয়েটাকে আমার কাছে এসে গঙ্গার ঘাট যাওয়ার রাস্তা জিজ্ঞাসা করছিল। তখনই আমার সন্দেহ হয়েছিল । তারপর নিজের সন্তানকে নিয়ে মেয়েটি গঙ্গার ঘাটের দিকে পা বাড়াতেও আমি আটকে দিই । বারবার জিজ্ঞাসা করলে মেয়েটি কান্নায় ভেঙে পড়ে । তারপর একে একে ঘটনার কথা খুলে বলে । আর তখনই বুঝতে পারি সন্তানকে নিয়ে গঙ্গায় ঝাঁপ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল মেয়েটি ।’
জানা গেছে,ভাতার থানার বলগোনা গ্রামের দাসপাড়ায় বাপেরবাড়ি সুপ্রিয়া দাসের । বাড়িতে রয়েছেন ঠাকুমা ও এক ভাই । বাবা,মা নেই । সুপ্রিয়ার সঙ্গে মঙ্গলকোটের ইছাবটগ্রামের বাসিন্দা পেশায় মোটরভ্যানচালক সুমন্ত দাসের ফেসবুকে আলাপ ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল । বছর দেড়েক আগে তাঁদের বিয়ে হয় । তাঁদের দেড় মাসের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে । সুপ্রিয়া বলেন, ‘আমার বিয়েতে ঠাকুমা আর ভাইয়ের মত ছিল না । তাই বাপের বাড়ি যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে । এদিকে মেয়ের জন্ম মেনে নিতে পারেনি আমার স্বামী । মেয়ের জন্মের পর থেকেই স্বামীর নির্যাতন শুরু হয়। ওই নির্যাতন আর সহ্য হচ্ছিল না । তাই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ।’
কিন্তু এরপর কোথায় যাবেন ? এই প্রশ্নের উত্তরে সুপ্রিয়া সাফ জানিয়ে দেন তিনি আর শ্বশুরবাড়ি ফিরবেন না । তাঁর একথা শুনে বধু ও তাঁর মেয়েকে নিজের বাড়িতে এনে রাখেন পুতুল সর্দার । পুতুলদেবী বলেন, ‘কোথাও যেতে হবে না তোকে । তুই আমার মেয়ে হয়ে আমার কাছে থাকবি ।’ যদিও ঘটনার কথা শোনার পর বধুকে পুরসভা পরিচালিত ‘আশ্রয়’ নামে ভবনে থাকার প্রস্তাব দিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় । তবে বর্তমানে মেয়েকে নিয়ে পুতুলদেবীর বাড়িতে রয়েছেন ওই গৃহবধূ ।।