ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ ওরফে লেলিন হলেন একজন মার্কসবাদী রুশ বিপ্লবী ও সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা (বলশেভিক) । যিনি ১৯১৭ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান এবং ১৯২২ থেকে ১৯২৪ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বাধিনায়ক ছিলেন। লেলিন প্রশাসনের অধীনে রাশিয়া ও তারপর বৃহত্তর সোভিয়েত ইউনিয়ন কমিউনিস্ট পার্টি দ্বারা পরিচালিত একটি একদলীয় সাম্যবাদী রাষ্ট্র হয়ে ওঠে। তিনি আদর্শিকভাবে একজন সমাজতান্ত্রিক হয়ে মার্ক্সবাদের একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ-বিকাশ করেছিলেন, যা লেনিনবাদ নামে পরিচিত হয়। তার ধারণাগুলি মরণোত্তরভাবে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ হিসাবে সংজ্ঞায়িত হয়েছিল। যাকে বেদবাক্য হিসাবে মনে করে ভারতের বামপন্থীরা ।
এদিকে লেলিনের জীবনযাপন ও তার মৃত্যুর কারন নিয়ে এখনো বিতর্ক চলে । বিশেষ করে তার মৃত্যুর কারন নিয়ে ধোঁয়াশা আছে । দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস দাবি করেছিল যে একটি পূর্ববর্তী রোগ নির্ণয়ে বলা হয়েছে যে লেলিনের সিফিলিস ছিল। এই অনুমানটি কয়েক দশক ধরে প্রচলিত ছিল যে বলশেভিক নেতা তার কর্মজীবনে সিফিলিসে আক্রান্ত ছিলেন, তবে এটি একটি নির্দিষ্ট এবং নিশ্চিত কারণ হিসাবে প্রমাণিত নয়। তবে ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় ফের দাবি করেছেন যে লেলিনের মৃত্যু “যৌনরোগ সিফিলিসেই” হয়েছিল ।
প্রসঙ্গত,সিফিলিস হলো একটি যৌনবাহিত রোগ যা ট্রেপোনেমা প্যালিডাম নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এটি যৌন মিলন, চুম্বন, বা আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ত্বকের সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে ঘা এবং পরবর্তী পর্যায়ে ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে, যা সময়ের সাথে সাথে আরও গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন মস্তিষ্কের ক্ষতি এবং হৃদরোগ। লেলিনের বিরুদ্ধেও অবাধ ও উদ্দাম যৌন জীবনযাপনের দাবি করেন কেউ কেউ । তাদের মধ্যে অন্যতম তথাগত রায় ।
পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীদের নিশানা করতে গিয়ে তিনি এক্স-এ টুইট করেছেন,দুরারোগ্য যৌনরোগ সিফিলিসে মৃত লেনিনের চ্যালা এইবার ভিক্ষাপাত্র হাতে ভোট ভিক্ষা করতে নেমেছে।আপনি কাকে ভোট দেবেন সেটা আপনার বিবেচনা। শুধু মনে রাখবেন, তৃণমূলের যত নষ্টামি সব সিপিএমের কাছেই শেখা । সিপিএমকে ভোট দেওয়া মানে তৃণমূল-বিরোধী ভোট ভাগ করা।’ তবে এই দাবি তিনি এই প্রথম করলেন না । এর আগে একই দাবি ২০২০ সালের ৩১ জুলাই করেছিলেন। তিনি তখন টুইট করেছিলেন, ‘ওদের গুরুঠাকুর লেনিন সম্বন্ধে একটা অজানা তথ্য জানাই । লেনিন মারা গিয়েছিল দুরারোগ্য যৌনরোগ সিফিলিস-এ | এই রোগের সাধারণত কারণ হচ্ছে যৌনকর্মী সংসর্গ ।’ পরের বছর তিনি আরও দাবি করেন, ‘প্যারিসের নিষিদ্ধ পল্লীর এক নিয়মিত অতিথি দুরারোগ্য যৌনরোগ সিফিলিস বাধিয়ে বসলেন ! এবং তাতেই মারা গেলেন মাত্র চুয়ান্ন বছর বয়সে!কে ইনি ? আর কেউ নন, ভ্লাদিমির ইলিইচ লেনিন ! যাঁর মূর্তি তাঁর নিজের দেশে উখড়ে ফেলে দিয়েছে, কিন্তু কিছু বাঙালি হিন্দু এখনো তাঁর মড়া আঁকড়ে বসে আছে !’ প্রমান হিসাবে তিনি ২০০৪ সালের ২০ জুলাই-এ দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও উইলি ওলাইন লাইব্রেরি (Wiley Oline Library)-এর রিপোর্টের লিঙ্ক শেয়ার করেছিলেন ।
এদিকে তথাগত রায়ের এই দাবির পর পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীরা তার উপর ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন । তবে তারা অধিকাংশই তথাগত রায়কে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন । সুভাষ স্পিকিং নামে একজন লিখেছেন, ‘শেষ শব্দ দুটো বরাহ মহাশয়েরও মন কষ্টের কারণ হতে পারে। কারণ তিনিও মানব কল্যানই করেন। কোন মানুষের ক্ষতি কখনো করেন না।সুতরাং, এই ভাম গুলোই পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব।অন্য কোন জীবের সাথে এদের তুলনা চলে না। এরা না মানে কোন ধর্ম। এদের না আছে মানবতা বোধ। এরা শুধুই ভাম।’ রজত দাস নামে আরও একজন লিখেছেন,’আর আপনি মারা যাবেন গরুর মুত আর গোবরের ওভারদোজ হয়ে।’
তথাগত রায়ের সাম্প্রতিক পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে সায়ন রন নামে একজন লিখেছেন,’মনোহর লাল ঢাকাদ এর জাঙ্গিয়া চাটা মাল তথাগত ঘাটের মরা যে মমতার স্যান্ডুইচ অনশনে মঞ্চে গল্প করতে উঠেছিল ,যার আমলে বিজেপি ২% ভোট পেত সে ভোট ভাগ নিয়ে জ্ঞান দিতে এসেছে। বিজেপি সিপিএমের ভরসায় ভোটে নামলে আপনার ছোট বান্টু সুভেন্দুকে বলবেন সেলিমের পা ধরে ভিক্ষা চেয়ে যেতে।’
তবে ২০০৪ সালের ২০ জুলাই-এ দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,লেলিনের সিফিলিসে মৃত্যুর দাবি নিছক গুজব নয়,ইসরায়েলি ডাক্তাররা এর সত্যতার প্রমান পেয়েছিলেন । প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় জার্নাল অফ নিউরোলজিতে লেখা ইসরায়েলি ডাক্তাররা বলেছেন যে তারা প্রথম সোভিয়েত নেতার অসুস্থতা এবং মৃত্যু পুনর্গঠনের জন্য কমিউনিজমের পতনের পরে প্রকাশিত আর্কাইভ থেকে সংগৃহীত মেডিকেল রেকর্ড ব্যবহার করেছিলেন। দলটি বলেছে যে লেনিনের সিফিলিস তার জীবনের শেষ দুই বছরে মস্তিষ্কের ক্ষতি এবং পরবর্তীতে ডিমেনশিয়ার কারণ হয়েছিল। এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসেছিল, যখন স্ট্যালিন তার ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র করছিলেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে ১৯২৪ সালে লেলিনের মৃত্যুর পর গোপনীয়তার শপথ নেওয়া হয়েছিল চিকিৎসকদের কাছে ৷।
Author : Eidin.

