এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৭ নভেম্বর : শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, রেশন দুর্নীতি থেকে আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে এমনিতেই অরাজনৈতিক মানুষের মধ্যে বিস্তর ক্ষোভ আছে । এত বড় বড় ইস্যু সামনে থাকলেও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কোনো হেলদোল নেই । এদিকে ডোন্ট কেয়ার মুডে আছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি । সঙ্গত কারণেই “মোদী-মমতা সেটিং”-এর কথা শুনতে পাওয়া যায় আকছার৷ এই পরিস্থিতিতে একটি বাংলা নিউজ চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এরাজ্যের মমতা ব্যানার্জির সরকারকে আদপেই সরাতে ইচ্ছুক কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তমলুকের বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন । পাশাপাশি তিনি “হিন্দিভাষী নেতাদের উপর জোর দেওয়া” নিয়েও প্রশ্ন তোলেন । তবে অভিজিৎ গাঙ্গুলির সঙ্গে সহমত পোষণ করেননি ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় । তিনি মনে করছেন,এরাজ্যে বিজেপি জেতা গেম হেরে যাওয়ার পিছনে দুটি কারন কাজ করছে । প্রথমত কৈলাস বিজয়বর্গীয়,যাকে তিনি শয়তান আখ্যা দিয়েছেন। আর দ্বিতীয়ত, এরাজ্যের নেতাদের কামিনী-কাঞ্চন আসক্তি।
আসলে,অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ওই চ্যানেলে বিজেপি তৃণমূলকে আদৌ সরাতে চায় কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে কোনো রাখঢাক না করে বলেন,কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যাকশন দেখে আমার মনে হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের এই যে পরিস্থিতি, তাকে বদল করতে চায় না । তার কথায়,পশ্চিমবঙ্গের মতো একটা শাসনহীন, প্রশাসনহীন রাজ্যে অন্তত ৩৫৫ ধারা জারি করা হবে না, সেটা তো আমার কাছে একটা বিরাট প্রশ্ন । তিনি বড় বড় বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় ইডি, সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন । তবে তিনি স্পষ্ট করে না বললেও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে লাগাম টেনে ধরার জন্য কার্যত কেন্দ্র সরকারকেই দোষারোপ করেন। পাশাপাশি হিন্দিভাষী নেতাদের না এনে এরাজ্য থেকেই নেতাদের তুলে ধরার জন্য সওয়াল করেন অভিজিৎ গাঙ্গুলি ।
এদিকে রাজনৈতিক অভিজ্ঞমহল থেকে বহু সাধারণ মানুষ অভিজিৎ গাঙ্গুলির এই সমস্ত মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন । যদিও তথাগত রায় তার সঙ্গে সহমত পোষণ করেননি । তিনি অভিজিৎ গাঙ্গুলির মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এক্স-এ লিখেছেন,’অবাঙালি নেতা মানেই অযোগ্য নয় । আমি বাংলাভাষী ত্রিপুরায় রাজ্যপাল থাকাকালীন নেপথ্যে দাঁড়িয়ে দেখেছি, এক মহারাষ্ট্রীয়, সুনীল দেওধর, কি করে ২০১৮ সালে বিজেপিকে শূন্য থেকে ক্ষমতায় এনেছিলেন ।তার পাশাপাশি এও দেখেছি, ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে জেতা গেম কি করে হারিয়ে দিল মধ্যপ্রদেশ থেকে আসা শয়তান কৈলাস বিজয়বর্গীয়র দলবল এবং তার বুদ্ধিহীন বাঙালি চ্যালারা। শুধু বাংলার রাজনীতি না বোঝার জন্য নয়, অন্য এবং অত্যন্ত জঘন্য কারণে – যার নাম কামিনী-কাঞ্চন। তাই জিততে হলে যথাযথ লোককে দায়িত্ব দিতে হবে।’
প্রসঙ্গত,”শাসনহীন, প্রশাসনহীন রাজ্যে” ৩৫৫ ধারা জারি না করা নিয়েও কেন্দ্র সরকারের সমালোচনা করেন বিজেপি সাংসদ । এটা শুধু তার দাবি নয়, এরাজ্যের বহু সাধারণ মানুষ বহু দিন ধরে একই দাবি তুলে আসছে । এছাড়া “মোদী-মমতা” সেটিং তত্ত্বের কথা যত না রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের মুখ থেকে শোনা যায়, তার থেকে সাধারণ মানুষের মুখ থেকে বেশি শোনা যায় । এমনকি বিজেপির নিচু তলার কর্মীদের মধ্যেও এটি একটি চর্চার বিষয় । এখন দেখার বিষয় যে দলীয় সাংসদের এই প্রকার সমালোচনা মূলক কথাবার্তায় বিজেপির হাইকম্যান্ড তাদের স্ট্রাটেজি পরিবর্তন করে কিনা ।।

