এইদিন ওয়েবডেস্ক,লখনউ,২৩ ডিসেম্বর : হিন্দু মেয়ে ও মুসলিম ছেলের পালিয়ে বিয়ের ঘটনা অনেক ঘটে থাকে । অল্প কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেই সম্পর্ক মেনে নিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে হিন্দু মেয়েটির তার বাপের বাড়ি ঢোকার রাস্তা চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় । উল্টো দিকে হিন্দু ছেলের সঙ্গে যদি কোন মুসলিম মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করে তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই সম্পর্ক মেয়েটির পরিবার মেনে নেয় না । এমন কি মৃত্যুর ফতোয়া পর্যন্ত জারি করা হয় ! কিন্তু উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউ-এর এমন একটা ঘটনা সামনে এসেছে যা কেউ শুনলে অনেকে চমকে উঠবেন । দাবি করা হচ্ছে যে এক হিন্দু যুবকের সঙ্গে বিয়ে করে মহানন্দে সংসার করছেন দুই মুসলিম তরুণী । এমনকি তিনজনের পরিবারও এই সম্পর্ক মেনেও নিয়েছে । ধর্ম আলাদা হলেও তাদের এই সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত কোনো বাধা সৃষ্টি হয়নি । সনাতনী এবং ইসলাম উভয় সম্প্রদায়ের উৎসব পালিত হয় তরুণ গুপ্তার সংসারে । উত্তরপ্রদেশের রাজধানী শহর লখনউয়ের ত্রিকোন প্রেমের এই কাহিনী ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম । তবে এই দাবির সত্যতা এইদিন-এর পক্ষে পৃথকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি ।
‘বিন্দাস নিউজ’ নামে একটা ফেসবুক চ্যানেলে তরুন গুপ্তা ও তার দুই মুসলিম স্ত্রীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে । চ্যানেলটির ফলোয়ার্স রয়েছে ৫৮,৫০০ । গত শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সেই সাক্ষাৎকারের ভিডিওটি পোস্ট করা হয় । প্রতিবেদন অনুযায়ী,তরুন গুপ্তার দুই স্ত্রীর নাম সানা ও ফিজা মনসুরি । প্রতিবেদন অনুযায়ী, সানার লখিমপুরে বাপের বাড়ি । একই এলাকায় বাড়ি তার স্বামী তরুনেরও । অন্যদিকে ফিজা মনসুরি গোরখপুরের পার্শ্ববর্তী খলিলাবাদের মেয়ে । তরুন গুপ্তা জানান, তিনি ইকমার্স কোম্পানিতে কাজ করেন । তার বাড়িতে রয়েছেন বাবা-মা, এক দিদি ও এক বোন । ভিডিওতে সানা ও ফিজা মনসুরিকে বোরখা পরা অবস্থায় দেখা গেছে ।
তরুন গুপ্তা জানিয়েছেন,প্রথম স্ত্রীর সানার সাথে ২০২২ সালে তার কোর্ট ম্যারেজ হয় । তার আগে ২০১৮ সালে হিন্দুরীতি অনুযায়ী স্টাম্প পেপারে বিয়ের আনুষ্ঠানিক পর্ব সম্পন্ন হয়ে যায় । ফিজা মনসুরীর সঙ্গে বিয়ে হয় ২০২৩ সালে ৷ ফিজা মনসুরি বলেন,’আমাদের বিয়ে হিন্দুর রীতি অনুযায়ী মন্দিরে হয়েছিল ৷’ তার কথায়, ‘ভালোবাসার মাঝে ধর্ম কোন বাধা হতে পারে না ।’
তরুনের দুই স্ত্রীই শিক্ষিত । ফিজা মনসুরি ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন । অন্যদিকে লখিমপুরে খেড়িতে একটা কম্পিউটার সেন্টারে প্রশিক্ষণের সময় তরুন গুপ্তার সঙ্গে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সানার ৷
তরুন প্রতিবেদককে জানান,কম্পিউটার সেন্টারে প্রশিক্ষণের সময় সানাকে দেখে তার ভালো লেগে যায় । তিনিই প্রথম সানাকে ফোন করে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ সানা সেই প্রস্তাব গ্রহন করেন । এরপর তারা পালিয়ে বিয়ে করেন । সানা বলেন,’বিয়ের পর প্রথম দুবছর খুব সমস্যা হয়েছিল। আমি বাপের বাড়ি পর্যন্ত যাইনি । পরে ধীরে ধীরে বাপের বাড়ির লোকজন এই সম্পর্ক স্বীকার করে নিয়েছে । আমার মা-বাবা তরুণকে নিজের ছেলের মত ভালবাসে ।’ তরুন জানিয়েছেন,সানার বাবা-মা সম্পর্ক মেনে নিলেও তার আত্মীয়রা প্রথমে মেনে নেয়নি । তাকে লক্ষ্য করে গুলিও চলে । যদিও সানার পরিবার থেকে কোনো তাদের সম্পর্ক নিয়ে কোনো বিরোধ হচ্ছে না দেখে পরে সবাই চুপচাপ হয়ে যায় ।
বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও তরুনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার বিষয়ে ফিজা মনসুরির বলেন,’ও পড়াশোনায় খুব বুদ্ধিমান । ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিল । প্রতি প্রতিযোগিতায় ও সহজেই পাস হয়ে যেত । সেই কারণে আমি ওর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম ।’ দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তরুন বলেন,’যখন আমি ওকে প্রথম দেখেছিলাম তখন মনে হয়েছিল যেন ও আমার জন্ম জন্মান্তরের পরিচিত । ওকে দেখলেই মনের ভিতরে কিছু একটা চলতো । তার সঠিক ব্যাখ্যা আমি দিতে পারবো না।’
স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে কি ভেবে মেনে নিলেন ? উত্তরে সানা বলেন,’প্রথমে একটু সমস্যা ছিল । আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মারপিট পর্যন্ত হয় কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি স্বামীর পরিস্থিতির কথা সব মেনে নিই । এখন আমরা নিজের বোনের মত এক ছাদের নিচে বসবাস করি ।’ একই কথা জানিয়েছেন ফিজা মনসুরিও । এক হিন্দু স্বামীর সঙ্গে দুই মুসলিম স্ত্রীর কিভাবে বনিবনা হচ্ছে ? এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ফিজা মনসুরি বলেন, ‘আমাদের তো কোন অসুবিধা হচ্ছে না । অন্য কারো অসুবিধা হচ্ছে কিনা আমরা জানিনা ।’ সানার কথায়,’আমাদের যে সমস্ত ধর্মীয় উৎসব আছে এখন দ্বিগুণ হয়ে গেছে । ধুমধাম করে হোলি ও দিপাবলি উদযাপন করি৷ স্বামীর জন্য করবা চৌথ ব্রত রাখি । পাশাপাশি নামাজ পড়ি ।’ তরুনের উভয় স্ত্রী ক্যামেরার সামনে কলমা পড়ে শোনান ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বর্তমানে এক পুত্রসন্তানের জনক তরুন গুপ্তা । কিন্তু কার গর্ভে ওই সন্তানের জন্ম হয়েছে তা জানাতি চাননি কেউই ৷ কারণ হিসেবে তরুণ বলেন,’আসলে এক বছর আগে আমার দুই স্ত্রীই অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন । একজনার গর্ভপাত হয়ে গিয়েছিল । তখন আমরা তিনজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে কার গর্ভে সন্তানের জন্ম হয়েছে সেটা কাউকে কোনদিন প্রকাশ করব না । কারোর বাবা মা পর্যন্ত জানবে না ওই সন্তানের প্রকৃত মা কে । আমরা তিনজনই আমাদের সন্তানকে প্রতিপালন করছি ।’ সানা ও ফিজা একসাথে বলেন, ‘আমাদের সন্তানের দুই মা, দুই দাদু, দুই দিদিমা এবং দুই মামা ; আমাদের উভয়ের বাপের বাড়ির তরফে৷’
কিন্তু হিন্দু শাস্ত্রতে দুই বিয়েকে কি মান্যতা দেয়? উত্তরে তরুন বলেন,’ভারতের পরিসংখ্যান দেখলে দেখতে পাবেন ২০১৯-২০ সালের রিপোর্টে ১.৩ শতাংশ হিন্দুর দুই বিয়ে । গনেশ জির দুই পত্নী ছিলেন। আমাদের সংস্কৃতিতে এগুলো ছিল কিন্তু সেগুলো আড়াল করে দেওয়া হয়েছে ।’
সানা ও ফিজাকে হিজাব পরা অবস্থায় ক্যামেরার সামনে দেখা যায় । সানা বলেন,:এভাবেই আমরা রাম মন্দির গিয়েছিলাম । আমাদের স্পেশাল এন্ট্রি করা হয়েছিল । আমি এবং আমার আমার সতীনকে আমাদের স্বামীর থেকে বেশি প্রসাদ দিয়েছিল ।’ সানা ও ফিজা কি সমকামী ? উত্তরে সানা বলেন, ‘আমাদের সন্তান এটার প্রমাণ যে আমরা সমকামী নই । আমরা একে অপরকে আগে চিনতামই না ।’
এদিকে একমাত্র সন্তানের দেখভাল উভয় মা করছেন । সংসারের কাজ দুই স্ত্রী মিলে সামলান । সানা বলেন, ‘অনেকের হয়তো অবাক লাগবে কিন্তু এটাই বাস্তব । আর এটাও সত্যি যে ফিজা আমার নিজের বোন নয় ।এমনকি ওর সঙ্গে আমার কোন সম্পর্কও ছিল না ।’ সবশেষে তরুণ বলেন, ‘আমি খুব খুশি ।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তরুন গুপ্তা বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের রাজধানী শহর লখনউয়ে বসবাস করছেন । তবে তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নির্দিষ্ট ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি । সম্প্রতি শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন তরুনের দুই পত্নী । সেখানে শ্বশুর ও শাশুড়ির কাছ থেকে নিজের সন্তানের মত ব্যবহার পেয়ে মুগ্ধ সানা ও ফিজা । এদিকে এই ত্রিকোন প্রেমের কাহিনী বর্তমানে ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ।।