এইদিন ওয়েবডেস্ক,০১ জানুয়ারী : পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্ত অর্থাৎ ডুরান্ড লাইনে পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে । তালিবান যোদ্ধারা ডুরান্ড লাইন পেরিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করছে এবং পোস্টে হামলা করছে, জবাবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালাচ্ছে। এদিকে, পাকিস্তান-আফগানিস্তান (তালেবান) যুদ্ধের মধ্যে, তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি সামরিক পোস্ট দখল করেছে।তালিবান যোদ্ধাদের পাকিস্তানি সামরিক পোস্ট দখলের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমশ ভাইরাল হচ্ছে। এই ভিডিওতে পাকিস্তানি সীমান্তের অভ্যন্তরে বাজাউরের, যেখানে টিটিপি যোদ্ধারা সামরিক পোস্টটি দখল করে এবং তাতে তাদের পতাকা উত্তোলন করে। পাকিস্তানি সৈন্যরা এখান থেকে পালিয়ে যায়, তারা টিটিপি হামলার সামনে দাঁড়াতে পারেনি। এ ধরনের পরিস্থিতি শুধু বাজাউরের সামরিক চৌকিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, উত্তর ও দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের সামরিক চৌকি থেকেও পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে টিটিপি যোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাজাউর পোস্ট থেকে পতাকা সরিয়ে তাদের পতাকা উত্তোলন করতে দেখা যাচ্ছে।
সাংবাদিক তাহা সিদ্দিকী পাকিস্তানি সেনা পোস্টে পাকিস্তানি তালিবানদের দখলের ভিডিও শেয়ার করতে গিয়ে বলেন,পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দেশের অভ্যন্তরে নৃশংসতা ও রাজনীতি করতে ব্যস্ত, সে কারণেই বারবার পরাজয়ের সম্মুখীন হচ্ছে।
তবে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী স্পষ্ট করেছে যে পোস্টটি ইতিমধ্যেই খালি করা হয়েছে। তারা আরও বলছে যে সীমান্ত পেরিয়ে আফগানিস্তানের দিকে তাদের হামলায় ৮ জন মারা গেছে। পাকিস্তান সীমান্ত বাহিনীর একজন জওয়ানকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন ।
প্রকৃতপক্ষে, এই আক্রমণগুলি শুরু হয়েছিল যখন পাকিস্তানি বিমান বাহিনী আফগান সীমান্তের ভিতরে বিমান হামলা চালিয়েছিল এবং অনেক যোদ্ধাকে হত্যা করেছিল, তারপরে তালিবান যোদ্ধারা পাকিস্তানি পোস্টগুলিতে আক্রমণ করেছিল। এরপর পাকিস্তান আবার হামলা চালায়, এতে ৮ জন নিহত হয়। ইতিমধ্যে, এই ভিডিওগুলি প্রকাশিত হয়েছে যাতে টিটিপি যোদ্ধারা পাকিস্তানি সামরিক পোস্টে হামলা চালাচ্ছে। আফগানিস্তানে ক্ষমতায় থাকা তালেবান যোদ্ধারা তাদের সমর্থন করছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, তালিবানের এক লাখ পঞ্চাশ হাজার সক্রিয় যোদ্ধা রয়েছে এবং তারা আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত। পার্বত্য ও দুর্গম এলাকায় গোপনে হামলা চালানোর ক্ষমতা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বিস্মিত করছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী শুধুমাত্র তালিবানের সাথে সংঘর্ষেই ব্যর্থ হচ্ছে না বরং অভ্যন্তরীণ সমস্যারও সম্মুখীন হচ্ছে। বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, অর্থনৈতিক সংকট এবং চীনের সিপিইসি প্রকল্পে বিলম্ব সেনাবাহিনী ও সরকারের অবস্থানকে আরও দুর্বল করেছে। উল্লেখ্য,পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং আইএসআই দীর্ঘদিন ধরে তালিবানকে সমর্থন করেছিল, কিন্তু এখন তারা পাকিস্তানের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৮৯৩ সালে ব্রিটিশ ভারত এবং আফগানিস্তানের মধ্যে আঁকা ডুরান্ড লাইন আজও বিতর্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডুরান্ড লাইন হল একটি ২,৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত যা পশতুন এলাকাকে বিভক্ত করে। ব্রিটিশ রাজের সময়, এটি ভারত এবং আফগানিস্তানের মধ্যে একটি বাফার জোন হিসাবে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আফগান জনগণ ও তালিবান কখনোই তা মেনে নেয়নি। তালিবান একে ‘কাল্পনিক সীমান্ত’ বলে অভিহিত করে এবং দাবি করে যে এলাকাটি আফগানিস্তানের অংশ। শুধু তাই নয়, তালিবান পাকিস্তানের অনেক এলাকাকে নিজেদের বলে দাবি করেছে, যার মধ্যে পেশোয়ারও রয়েছে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রদেশের (আইএসকেপি) সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও করেছে তালিবান। এই বিরোধ পাকিস্তানি সেনা ও তালিবানের মধ্যে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।।