এইদিন ওয়েবডেস্ক,২৯ ফেব্রুয়ারী : বরাবরই বামপন্থীদের সফট টার্গেট হল তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত সম্প্রদায়ের মানুষ । তৃণমূলের সন্ত্রাসের শিকার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালীর সিংহভাগ মানুষই তপশিলির জাতী-উপজাতি সম্প্রদায়ের । তাদের বর্তমান অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে বামপন্থী মহিলা মোর্চার বিরুদ্ধে সুবিধাবাদী রাজনীতি করার অভিযোগ উঠছে । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে । ওই ভিডিওতে চার পাঁচজন বামপন্থী মহিলাকে সন্দেশখালীর এক মহিলাকে ঘিরে ধরে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে শোনা গেছে । আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমকে ভোট দেওয়ার জন্য বামপন্থী মহিলারা সন্দেশখালীর ওই মহিলাকে ধরে রীতিমত ব্রেনওয়াশ করতে শুরু করেন ।
দিন ছয়েক আগে গোবরডাঙ্গার ঠিকানা দেওয়া জনৈক অশোক পল নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক পেজে শেয়ার করা ওই ভিডিওতে কয়েকজন বামপন্থী মহিলাদেরকে সন্দেশখালির এক মহিলাকে ঘিরে ধরে সাক্ষাৎকার নিতে দেখা যায় । ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে সন্দেশখালীর মধ্যযুগীয় অন্ধকার ছবি । সাক্ষাৎকার নেওয়া মহিলাদের পরতপক্ষে ক্যামেরার সামনে দেখা যায়নি । মহিলাদের জিজ্ঞেস করা হয় বর্তমান পরিস্থিতি কেমন? উত্তরে সন্দেশখালির মহিলা বলেন,’আমরা খুব ভয়ে ভয়ে আছি । উৎপাত করে,রাত্রে ডেকে নিয়ে চলে যায় ।’
প্রশ্ন করা হয়,’কারা ডেকে নিয়ে যায়?’ তখন মহিলা জানান উত্তম সরদার আর শিবু হাজরারা ।
সাক্ষাৎকার নেওয়া এক মহিলা জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনাদের পরিবারের পুরুষরা কেন বাইরে কাজ করে ? ১০০ দিনের কাজ পান না ?’ উত্তরে সন্দেশখালি ওই মহিলা বলেন,’আগে পেতাম ।’
তখন সাক্ষাৎকার নেওয়া মহিলা জিজ্ঞাসা করেন, ‘বামফ্রন্ট আমলে ? তোমরা তৃণমূল করো ?’ উত্তরে সন্দেশখালির মহিলা ‘হ্যাঁ’ বলেন ।
এরপর বামপন্থী মহিলা বলেন,’তৃণমূল করা সত্ত্বেও তোমাদের উপর অত্যাচার হত ?’ সন্দেশখালির মহিলা বলেন ‘হ্যাঁ’ ।
বামপন্থী মহিলা বলেন,’মানে, মহিলাদের কোন সম্মান নেই!’
পুরুষালি কন্ঠের অন্য বামপন্থী মহিলা বলেন, ‘একদম লড়াই জারি রাখবেন । যতক্ষণ না আপনাদের সঠিক বিচারটা হচ্ছে ততক্ষণ লড়াই জারি রাখবেন । আমরা রয়েছি আপনাদের সঙ্গে । আমরা সমস্ত পশ্চিমবঙ্গের মহিলা যত আছে সবাই আপনাদের সঙ্গে আছি ।’
সাক্ষাৎকার নেওয়া অন্য এক মহিলা বলেন, ‘আমরা বামপন্থী মহিলা সংগঠন থেকে এসেছি । আমরা বামপন্থী মনোভাবাম্পন্ন । আগে যে ছিল জ্যোতি বসু,বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য…সেই সময়টা কি ভালো ছিল কি ছিল না ?’
উত্তরে সাক্ষাৎকার দেওয়া মহিলা বলেন, ‘হ্যাঁ ভালো ছিল৷ তখন বউদের ধরে নিয়ে যেত না, এখন নিয়ে যাচ্ছে ।’
বামপন্থী মহিলা বলেন,’তখন ১০০ দিনের কাজ হতো, আপনারা টাকা পেতেন, তাহলে আপনারা কেন ভোট দিয়ে তৃণমূলকে আনলেন?’ উত্তরে সন্দেশখালির মহিলা বলেন, ‘ভয়ে ।’
এরপর ফের ওই বামপন্থী মহিলা বলেন, ‘শুনুন, এখন আবার বিজেপি আসছে,ভোট চাইতে । দেবেন?’ যদিও সন্দেশখালীর ওই মহিলা এই বিষয়ে কোন স্পষ্ট উত্তর দেননি তাদের ।
অন্য একজন বামপন্থী মহিলা বলেন, ‘তৃণমূল মানেই বিজেপি । শুভেন্দু তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গেছে ।’
আর এক বামপন্থী মহিলা বলেন, ‘শুনুন, মনিপুরে নারীদের উপর অত্যাচারে একটা কথা বলিনি বিজেপি । কুস্তিগীরদের উপর যে অত্যাচার হয়েছে…আমরা মহিলা সমিতি…আমরা বামপন্থী সংগঠন…আমরাই লড়াই করেছি …মহিলা কুস্তিগীরদের ওপর যৌন নির্যাতন চলবে না… বিজেপি একটা কথা বলেনি । বিজেপি ব্রিজ ভূষণ সিংকে শাস্তি দেয়নি । গুজরাটের বিলকিস বানুর উপর যে অত্যাচার হয়েছে, এই বিজেপি করেছে । বিজেপি কিন্তু নারীদের সম্মান দেয় না। এখন হয়তো আপনারা ভাববেন তৃণমূলে হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিজেপিকে ভোট দেবেন, বিজেপি কোন নারীকে রক্ষা করবে না,কিছু করবে না । এইটা আপনাদের বুঝতে হবে । আমরা একটা বিষকে তাড়াতে গিয়ে আর একটা বিষ বা জহরকে আনব না । এইটা আপনাদের বুঝতে হবে । বুঝতে পেরেছেন তো?’
শেষে তিনি বলেন,’এই যে সামনের লোকসভা ভোট আসছে গুরুত্বপূর্ণ ভোট এই ভোটটাতে কিন্তু আপনার ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের ভোট দেবেন, যাতে আমরা সংসদে গিয়ে দিল্লিতে গিয়ে চিৎকারটা করতে পারি আপনাদের জন্য, বুঝেছেন ?’
যদিও সিপিএমের মহিলা সংগঠনের নেত্রীরা মহিলাদের সম্মান দেওয়া বা মহিলাদের হয়ে আওয়াজ তোলার বিষয় দাবি করলেও ৩৪ বছরের বামফ্রন্টের শাসন কালের ইতিহাস কিন্তু ভিন্ন কথা বলে । সিপিএমের সময় ঘটেছে একের পর এক পাশবিক গণধর্ষণের ঘটনা ।
বানতলা গনধর্ষণ কাণ্ড : ১৯৯০ সালের ৩০ মে গোসাবা রাঙাবেড়িয়া থেকে টীকাকরণ কর্মসূচি সেরে ফেরার পথে বানতলা রোডে একদল দুষ্কৃতির হাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দুই মহিলা স্বাস্থ্য আধিকারিক ও একজন ইউনিসেফের আধিকারিক ধর্ষিতা হন। দুষ্কৃতিদের বাধা দিতে গিয়ে একজন মহিলা আধিকারিক ও তাদের গাড়ির চালক নিহত হন । ধর্ষিতার হাসপাতালে ভর্তি করা হলে একজন মহিলা চিকিৎসক জনৈক আধিকারিকের যোনিতে একটি ধাতব টর্চ দেখে অজ্ঞান হয়ে যান । তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু ।
তাপসী মালিক গনধর্ষণ কাণ্ড : সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম মুখ তাপসী মালিক নামে এক তরুনীকে গনধর্ষণ করে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিল সিপিএম নেতা সুহৃদ দত্ত । তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । সুহৃদের সঙ্গে ওই মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন আরও এক সিপিএম কর্মী । সিপিএমের তরফে দাবি করা হয় যে, তাদের ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। এমনকি সুহৃদের হয়ে মামলা লড়ার জন্য ‘সিঙ্গুর ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে তহবিল সংগ্রহ করেছিল সিপিএম। কারণ সে সময়ে কার্যত চাপে পড়েই মামলার তদন্ত সিবিআইকে দিতে বাধ্য হয়েছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকার ।
উল্লেখ্য,সন্দেশখালীর উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝেই সিপিএমের নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি গিয়েছিলেন সেখানে৷ জনৈক ও সিপিএম সমর্থক সেই ভিডিও পোস্ট করেছিলেন । দাবি করা হয়েছিল যে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে সন্দেশখালি গেছেন মিনাক্ষী মুখার্জী । কিন্তু সেভাবে কথা বলার মত লোক খুঁজে পাননি সিপিএমের এই তরুণ নেত্রী।।