জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতা,০৭ ডিসেম্বর : একটা সময় বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল চলচ্চিত্র। ম্যাটিনি শো-তে চলচ্চিত্র প্রেমী দর্শকদের ভিড়ে হলগুলো উপচে পড়ত। বর্তমানে বিনোদনের অনেক মাধ্যম এলেও নিজেদের পরিবর্তন করতে পারেননি চলচ্চিত্র নির্মাতারা। একঘেয়েমি গল্পযুক্ত চলচ্চিত্র দেখতে দেখতে ক্লান্ত দর্শক হল বিমুখ হলো। তার মাঝেও সমাজ মাধ্যমে মুক্তি পাওয়া ভিন্ন স্বাদের স্বল্প দৈর্ঘ্যের বেশ কিছু চলচ্চিত্র দর্শকদের মনে বিনোদন আনতে সক্ষম হয়। যেমন সমাজ মাধ্যমে সদ্য মুক্তি পাওয়া রাজা মুন্সী পরিচালিত স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ ভিন্ন স্বাদের সঙ্গে সঙ্গে ভাবনার ইঙ্গিতও দেয়।
বিদঘুটে সঙ্গীত, স্পেশাল এফেক্ট, ঝকঝকে বিদেশী লোকেশন ইত্যাদি ছাড়াও ২০ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের একটা স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র যে ব্যস্ত মানুষের চিত্তে দীর্ঘমেয়াদি ভাবনা আনতে পারে তার জ্বলন্ত প্রমাণ ‘স্বয়ংসিদ্ধা’। যারা দেখেছেন তাদের টুকরো টুকরো মন্তব্য শুনলেই বোঝা যায় ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ দর্শক মনে কতটা প্রভাব ফেলেছে।
বিবাহযোগ্যা কন্যার বিয়ের জন্য চিন্তিত মায়ের উদ্দেশ্যে মেয়ে বলে ওঠে – তুমি জীবনে কী পেয়েছো? এই প্রশ্নের মধ্যেই লুকিয়ে আছে বিয়ে সম্পর্কে মেয়ের ভাবনা। প্রাচীন যুগ থেকে চলে আসা বিবাহ দুটো অচেনা পরিবারকে একটা দৃঢ় আত্মীয়তার বন্ধনে বেঁধে ফেলে। দুটো নর-নারীর মধ্যে গড়ে ওঠে মনের মিলন।
আজ সেই পবিত্র সম্পর্কের পরিসমাপ্তি ঘটছে আদালতের আঙিনায়। ‘এক পলকে একটু দেখা’-র মধ্যে দিয়ে দুই যুবক-যুবতীর মধ্যে শুরু হয় প্রেম। বাদাম খেতে খেতে গঙ্গার ধারে বেড়ানো, স্বপ্নের জাল বোনা ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে প্রেম পরিণত হয় ভালবাসায়, বাড়ে গভীরতা। নিজেদের অজান্তেই ‘আপনি’ থেকে ‘তুমি’ হতে বেশি সময় লাগেনা। তারপর ছাতনা তলা।
তারপরও কেন ডিভোর্স? ভুলটা কোথায়? চিন্তিত সমাজ বিজ্ঞানীরা। তাহলে কি উভয়ের পচ্ছন্দের মধ্যে কোনো ভুল ছিল?পরস্পরকে ভালভাবে বোঝার আগেই কি তাহলে তাড়াহুড়ো করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যেই কি এই সমস্যা? আসলে সেখানে প্রেম-ভালবাসা নয় জড়িয়ে ছিল ক্ষণস্থায়ী আবেগ।
গভীর ভাবে ভাবলেই দেখা যাবে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ কাহিনীর অন্তরালে লুকিয়ে আছে এইসব প্রশ্নের উত্তর। উপভোগ করতে হলে যেতে হবে ইউটিউবে।
কাহিনীতে চরিত্র আছে চারটি। নায়িকা ‘স্বয়ংসিদ্ধা’-র চরিত্রে স্বাগতা মল্লিক দে ও
নায়ক ‘রূপম’-এর চরিত্রে শুভরঞ্জন দে অসাধারণ দক্ষতায় নিজেদের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। অথচ এই প্রথম দু’জনেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালো। মাঝে মাঝে স্বাগতার এক্সপ্রেশন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক লিজেন্ড নায়িকার কথা মনে করিয়ে দেয়। অভিনয় জগতে থাকলে এই জুটি হয়তো অন্যতম শ্রেষ্ঠ জুটি হতে পারে।
মায়ের চরিত্রে গোপা মল্লিকের স্বাভাবিক অভিনয় এবং স্বল্প পরিসরে সোনালী চক্রবর্তী নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। এখানেই কৃতিত্বের দাবি করতে পারেন পরিচালক রাজা মুন্সী। অসাধারণ দক্ষতায় নতুনদের কাছ থেকে তাদের সেরাটা বের করার চেষ্টা করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। শুধু এই চলচ্চিত্রটি নয়, তার পরিচালিত প্রায় ডজনখানেক চলচ্চিত্রে বারবার এই দৃশ্য দেখা গেছে যেখানে তিনি নতুনদের নিয়ে কাজ করেছেন। কৃত্রিম আলোর পরিবর্তে প্রকৃতির মধ্যে কাজ করতে বেশি পচ্ছন্দ করেছেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি ব্যাকগ্রাউণ্ডে ভেসে আসা ‘প্রেমের এই জোছনায় ভিজি এসো দু’জনায়’ – এই চলচ্চিত্রের অন্যতম সম্পদ। এটি মুহূর্তের জন্য দর্শকদের বাংলা সঙ্গীত জগতের স্বর্ণযুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। সঙ্গীতটির গীতিকার ও সুরকার মোম ঘোষ এবং গায়ক তারই সুযোগ্য সন্তান ময়ুখ ঘোষ।
‘স্বয়ংসিদ্ধা’-র কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচয়িতা হলেন ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জ্জী। চিত্রায়ন, ক্যামেরা, সম্পাদনা ও পরিচালনায় রাজা মুন্সী। সহযোগিতায় সৃজিত মুন্সী।।