সেখ মিলন,ভাতাড়(পূর্ব বর্ধমান),০৮ মার্চ : ‘তখন দেশে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের শাসন । ছিলনা রাস্তাঘাট,উন্নয়নের ছোঁয়া । মাটির জরাজীর্ণ ঘরে অতি কষ্টে বসবাস করতেন এলাকার বাসিন্দারা । পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার কুলনগর গ্রামে বসবাস তখন হাতেগোনা কয়েকটি পরিবারের । আশপাশে ঘন জঙ্গলে ঘেরা গ্রামের বাসিন্দারা অন্ধকার নামলেই খাওয়া-দাওয়া সেরে প্রদীপ জেলে ঘরে শুয়ে পড়তেন । অন্যান্য দিনের মতো কুলনগর গ্রামের বাসিন্দা বিহারীলাল চট্টোপাধ্যায় নামে এক ব্রাহ্মণ রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে যথারীতি নিজের ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন । গভীর রাতে স্বপ্নে তাকে দেখা দেন জটা জুটোধারী, চাইভস্ম মাখা, হাতে ত্রিশূল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব ।’
কুলনগর গ্রামের বাসিন্দা এক বৃদ্ধ একথা বলার পর ক্ষনিকের জন্য চুপ হয়ে যান । এর তিনি ফের বলতে শুরু করেন,’মহাদেব ওই ব্রাহ্মণকে বলেন গ্রামেরই এক ঘোষ পরিবারের মাটির নিচে রয়েছে তাঁর স্বয়ম্ভু লিঙ্গ । মাটি খুঁড়ে সেটি উদ্ধার করে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করে পূজা-অর্চনা কর । একথা শোনার পর ব্রাহ্মণ সারারাত ঘুমাননি । পরের দিন ভোর হতেই ছোটেন ওই ঘোষ বাড়িতে । এদিকে স্বপ্নাদেশের কথা চাওড় হতেই গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে যায় এবং ভগবান শিবের নির্দেশ মতো নির্দিষ্ট জায়গায় শুরু হয় খোঁড়াখুড়ি । তারপর প্রায় ১২ ফুট নীচে থেকে শিবলিঙ্গটি উদ্ধার করা হয় । শুরু হয় পুজোর্চ্চনা ।’
ভাতার থানার কুলচন্ডা গ্রামের কুলদেবতা মহাদেবের আবির্ভাবের কাহিনী বর্ণনা করে বৃদ্ধ বলেন, ‘খবর পেয়ে বর্ধমানের তৎকালীন মহারাজা মহাদেবের নিত্যসেবার জন্য বেশ কিছু জমিজমা দান করেছিলেন। প্রথমদিকে খোলা আকাশের নিচেই দেবতার পুজো হতো । পরে কলকাতার বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী বলাই চন্দ্র শীল কুলনগর গ্রামের বাসিন্দা ধনঞ্জয় যশের কাছ থেকে মহাদেবের আবির্ভাবের ঘটনার কথা জেনে মাটির আটচালা নির্মাণ করে দেন। এতদিন ধরে এই ভাবেই আমাদের গ্রামের কুলদেবতার নিত্যসেবা হত ।’
জানা গেছে,কুলনগর গ্রামের অধিকাংশ গ্রামবাসীরই বর্তমানে পাকা বাড়ি হয়ে গেছে । কিন্তু গ্রামের কুলোদেবতা মহাদেব সেই মাটির ঘরেই এতদিন অবস্থান করছিলেন । শেষে বেশ কিছুদিন আগ দেবতার জন্য নতুন মন্দির তৈরির উদ্যোগ নেন গ্রামবাসীরা । ভাতারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তথা তৃণমূল নেতা অশোক হাজরা ও তার পরিবারের সদস্যদের অর্থানুকূল্যে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার ব্যয়ে নবরূপে কুলনগর গ্রামের কুলদেবতার মন্দির নির্মাণ করা হয়।
আজ শুক্রবার ভাতাড়ের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীর হাত দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দিরের উদ্বোধন হয়। তিনি ফিতে কেটে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে মন্দিরের উদ্বোধন করেন । হাজরা পরিবারের অন্যতম সদস্য মধুসূদন হাজরা বলেন,’এদিন সকাল থেকেই যজ্ঞ শুরু হয়েছে । স্থানীয় কয়েকশো পূণার্থী কাটোয়ার ভাগিরথী থেকে বাঁকের সাহায্যে কলস ভর্তি গঙ্গাজল বয়ে আনেন । সেই গঙ্গাজল দিয়েই মন্দিরের শোধন ও পুজো হয়।’ প্রায় তিন থেকে চার হাজার মানুষের জন্য অন্নভোগের আয়োজন এবং হরিনাম সংকীর্তনের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি । মন্দিরের উদ্বোধন ও শিবরাত্রি উপলক্ষে এলাকার মানুষদের মঙ্গল কামনা করেন মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা অশোক কুমার হাজরা ।।