এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,২৯ ডিসেম্বর : বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী,নাবালিকা ৪ মেয়ে ও নাবালক ২ ছেলে। পরিবারের দু’বেলার অন্ন সংস্থানের জন্য উড়িষ্যার ভুবনেশ্বরে “হরেক মাল” সামগ্রী ফেরি করার কাজ করতে গিয়েছিলেন মালদা জেলার কালিয়াচক-১ ব্লকের আলিপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মারুপুর গ্রামের বাসিন্দা ৫১ বছরের মহম্মদ শুকুরুদ্দিন মোমিন । কিন্তু সেখানে বাংলাদেশি মুসলিম সন্দেহে তাকে বেদম মারধর করে স্থানীয় কিছু যুবক । বর্তমানে ওই প্রৌঢ় ফেরিওয়ালা বাড়িতে শয্যাশায়ী । এই পরিস্থিতিতে তার মাথায় একটাই চিন্তা কাজ করছে, কিভাবে ৬ নাবালক সন্তান ও স্ত্রীর মুখে দুবেলা দু’দুঠো অন্ন তুলে দেবেন । আজ দুপুরে তার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য কমিটির সদস্য মহম্মদ কুরবান শেখ । যদিও তিনি আহত ফেরিওয়ালার কর্মসংস্থানের জন্য সরকারিভাবে কি ব্যবস্থা গ্রহন করবেন তা স্পষ্ট করেননি । শুধু জানান যে তারা ওই পরিযায়ী শ্রমিকের পাশে আছেন ।
মারুপুর গ্রামের বাসিন্দা শয্যাশায়ী মহম্মদ শুকুরুদ্দিন মোমিন জানান,তিনি গত নভেম্বর মাসের ১৯ তারিখে উড়িষ্যার ভুবনেশ্বরে “হরেক মাল” ফেরি করতে গিয়েছিলেন । মহাজনের কাছ থেকে প্লাস্টিক সামগ্রী নিয়ে এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন । কিন্তু গত ২৩ শে ডিসেম্বর যখন তিনি সাইকেলে হরেক মাল নিয়ে ফেরি করতে বের হন, তখন স্থানীয় কিছু যুবক তাকে বাংলাদেশি সন্দেহে পথ আটকায় । তিনি বলেন,’ওরা আমার কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চাই । আমি আধার কার্ড, প্যান কার্ড ও পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিক কার্ড দেখাই । কিন্তু কিছুই মানতে চায়নি । আমার পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিক কার্ড ছিঁড়ে ফেলে দেয় । তারপর ছোটো ছোটো কাঠের বাটাম দিয়ে আমার গোটা শরীরে পেটায় । সেই সাথে রাস্তায় ফেলে লাথিও মারে ।’
জানা গেছে,কালিয়াচকের ওই প্রৌঢ়কে মারধরের পর পুলিশের হাতে তুলে দেয় হামলাকারীরা । এরপর পুলিশ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে । এদিকে ঘটনার কথা জানতে পেরে পরিবারের লোকজন কালিয়াচক থানার পুলিশের দ্বারস্থ হন৷ শেষ পর্যন্ত পুলিশের সহযোগিতায় তাকে ওড়িশা থেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনে পরিবার । বাড়ি ফেরার পর বর্তমানে তিনি বাড়িতেই আহত অবস্থায় শয্যাশায়ী রয়েছেন । শুকুরুদ্দিন মোমিন বিছানায় শুয়ে বলেন,’আমার সমস্ত মালপত্র ভেঙে তচনচ করে দিয়েছে অথবা লুটপাট করেছে । তাই মহাজনও আমার পারিশ্রমিক বাবদ প্রাপ্য টাকা দেয়নি । এখন কিভাবে ৬ জনের সংসার চলবে । বাড়িতে ৬ টা বাচ্ছা রয়েছে ।’
এদিকে আজ স্থানীয় তৃণমূল নেতা কুরবান সেখকে ওই আহত প্রৌঢ়ের পাশে বসে “বাংলায় কথা বলার জন্য মারধর” করার কথা বলিয়ে নেওয়ার বারবার চেষ্টা করতে দেখা যায় । যদিও আহত প্রৌঢ় জানান যে উড়িয়া ভাষাতেও কথা বললেও হামলা হচ্ছে । ওই হতদরিদ্র শয্যাশায়ী মানুষকে নিয়ে এই প্রকার ঘৃণ্য রাজনীতির সমালোচনা করেছেন অনেকে । তবে ওই তৃণমূল নেতা জানান যে বিষয়টি তিনি তার দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানাবেন এবং আহত ফেরিওয়ালাকে আজ কিছু সাহায্যও করেন।।
