দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),০৭ জানুয়ারী : পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমা আদালতের এজলাস থেকে পালিয়ে যাওয়া ধর্ষণ মামলার আসামী শনিবার নিজেই আত্মসমর্পণ করল । এদিন সকাল ৬ টা নাগাদ আদালতে চলে আসে জিতেন মাজি নামে ওই ‘ফেরার’ আসামি । চলে আসেন তাঁর আইনজীবী নির্মল মণ্ডলও । শেষ পর্যন্ত ওই আসামির সাজা ঘোষণা করেন কাটোয়া অতিরিক্ত জেলা জজ ও দায়রা আদালতের (প্রথম) বিচারক সুকুমার সূত্রধর । প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের সাজা হিসাবে তাকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুবছরের সাজা দেওয়া হয়েছে । শুক্রবার এজলাস থেকে আসামি পালানোর ঘটনায় ধুন্ধুমার কান্ডের পর শেষ পর্যন্ত তার সাজা ঘোষণা হওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন সকলে । তবে আসামির আইনজীবীর দাবি,জিতেন ভুল করে চলে গিয়েছিল । ইচ্ছা করে সে পালায়নি ।
কেতুগ্রাম থানার পুরুলিয়া গ্রামের দাসপাড়ায় বাড়ি জিতেন মাঝির । একই পাড়ার বাসিন্দা নির্যাতিতা কিশোরীর । ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে সে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছিল বলে অভিযোগ । নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেফতারের পর আদালতে তুললে জেল হেফাজতে পাঠানো হয় । মাস দেড়েক জেল হেফাজতে থাকার পর জামিনে মুক্তি পায় জিতেন । শুক্রবার তার সাজা ঘোষণার কথা ছিল । কিন্তু বিচারক তাকে দোষী সব্যস্ত করার পর কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়ে অন্য একটি মামলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন । কিন্তু জিতেন কাঠগড়ায় না দাঁড়িয়ে সকলের নজর এড়িয়ে আদালতের দু’তলা ভবন থেকে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে দৌড়ে পালিয়ে যায় । পিছু ধাওয়া করেও তার হদিশ করতে পারেনি পুলিশ ।
আসামির আইনজীবী জানান,আদালত থেকে সে কাটোয়ার ভাগীরথী নদীর শাখাইঘাট থেকে নৌকায় চড়ে প্রথমে কেতুগ্রামে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠে । তারপর গভীর রাতের দিকে সে নিজের বাড়ি চলে যায় । বাড়ি থেকে জিতেন তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দেন । সেইমত এদিন খুব সকালে সে কাটোয়া আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করে ।
জানা গেছে,ধর্ষণের ঘটনার সময় অবিবাহিত ছিলেন জিতেন । সাড়ে তিনবছর আগে তার বিয়ে হয়। তার দুবছরের একটি সন্তানও রয়েছে । এদিন সাজা ঘোনণা হওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন জিতের স্ত্রী সুপ্রিয়াদেবী । তিনি দাবি করেছেন,তাঁর স্বামী নির্দোষ । কিন্তু শুক্রবার তিনি আদালত ছেড়ে পালিয়ে গেলেন কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,’আমার ও ছেলের জন্য চিন্তা হচ্ছিল বলে একবার বাড়িতে আমাদের দেখতে এসেছিল,আমার স্বামী কোথাও পালায়নি । আমি স্বামীকে আত্মসমর্পণ করতে বলি,ও রাজিও হয়ে যায় । তারপর আমার স্বামী উকিলকে ফোন করে নিজের ইচ্ছার কথা বলেন ।’।