এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,২০ এপ্রিল : সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে দেশে ধর্মযুদ্ধ উস্কে দেওয়ার অভিযোগ তুললেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে । তিনি সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন,’দেশে ধর্মীয় যুদ্ধ উস্কে দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্ট দায়ী। সুপ্রিম কোর্ট তার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যদি সবকিছুর জন্য সুপ্রিম কোর্টে যেতে হয়, তাহলে সংসদ এবং রাজ্য বিধানসভা বন্ধ করে দেওয়া উচিত ।’ যদিও বিচার বিভাগ সম্পর্কে নিশিকান্ত দুবের মন্তব্য থেকে বিজেপি নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা তাকে এই ধরনের বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। জেপি নাড্ডা বলেছেন যে বিজেপি বিচার বিভাগের সমস্ত সিদ্ধান্তকে আন্তরিকভাবে মেনে নেবে।
নিশিকান্ত দুবে বলেছিলেন,সুপ্রিম কোর্টের দরজা বন্ধ হওয়া উচিত৷ ৩৭৭ ধারায় সমকামিতা অপরাধ ছিল । হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিস্টান, মুসলিম প্রভৃতি সমস্ত সম্প্রদায় সমকামিতাকে অপরাধী হিসেবে দেখে । কিন্তু একদিন সকালে সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করলে যে ৩৭৭ ধারা আমরা বাতিল করে দিচ্ছি । আমরা আইটি এক্ট এনেছিলাম । আইটি ক্ষেত্রে কারা সবচেয়ে দুঃখি । মহিলাদের পর্ণ আসে৷ শিশুদের পর্ণ আসে । ওদের সেক্সুয়ালিটি নিয়ে তোলপাড় হয় । একদিন সুপ্রিম কোর্ট এসে বলল ৬৬(এ) অর্থাৎ আইটি অ্যাক্টকে খতম করে দেওয়া হল । আমি আর্টিকেল ১৪১- কে বিস্তারিত অধ্যয়ন করেছি । ওই ধারা অনুযায়ী বলা হয়েছে, আমরা যে আইন তৈরি করি সেগুলি নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালতে লাগু হবে । আর্টিকেল ৩৬৮ কি বলে ? আর্টিকেল ৩৬৮ বলে যে দেশের সংসদের আইন বানানোর অধিকার আছে । সেই আইনের ব্যাখ্যা করার অধিকার সুপ্রিম কোর্টের আছে ৷ কিন্তু ও তিন মাসের ভিতরে রাষ্ট্রপতি এবং সরকারকে ব্যাখ্যা দিতে বলছে । এ দেশ রাম কৃষ্ণ সীতা রাধা দ্বাদশ জ্যোতিলিঙ্গ থেকে ৫১ সতীপীঠ আছে । সনাতনের পরম্পরা আছে । লক্ষাধিক বছরের পরম্পরা আছে ।’
তিনি সুপ্রিম কোর্ট কে নিশানা করে বলেন, যখন রাম মন্দিরের বিষয় আসে তখন আপনি বলেন কাগজ দেখাও । মথুরার কৃষ্ণ জন্মভূমির মামলা এলে বলবেন কাগজ দেখাও । জ্ঞানভাপি মসজিদের বিষয়ে এলে বলবে কাগজ দেখাও । আর মুঘল আসার পর যে সমস্ত মসজিদ তৈরি হয়েছে সেগুলোর কাগজ কিভাবে দেখাবে সে নিয়ে প্রশ্ন তুলছে ।’
তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে ধার্মিক যুদ্ধ উস্কেতে আর অভিযোগ তুলে বলেছেন, এই দেশে ধর্মযুদ্ধ উসকে দেওয়ার জন্য একমাত্র সুপ্রিম কোর্ট দায়ী । সুপ্রিম কোর্টের একটাই উদ্দেশ্য, ‘শো মি দ্য ফিস, উই উইল শো ইউ দ্য ল’ । সুপ্রিম কোর্ট নিজের সীমানা অতিক্রম করছে । ভারতের সংবিধান যে আইনকে তৈরি করেছে সেটার ব্যাখ্যা করার কাজ হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের । আর যদি ব্যাখ্যা না করতেই পারে, সব বিষয়ে যদি সুপ্রিম কোর্টে যেতে হয় তাহলে লোকসভার বিধানসভার কোনো দরকার নেই , বন্ধ করে যাওয়া উচিত ।’
প্রসঙ্গত,ওয়াকফ সংশোধনী আইনে নজিরবিহীন হস্তক্ষেপের পর সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ । নয়া আইনে বেশ কিছু অংশে সুপ্রিম কোর্ট স্টে অর্ডার দেওয়ায় কার্যত সাংবিধানিক সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে দেশে । ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরন রিজেজু সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন । তবে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা নিয়ে খোলাখুলি প্রশ্ন তুললে দেশ জুড়ে তোলপাড় পড়ে যায় । যে বিশেষ ক্ষমতা বলে সুপ্রিম কোর্ট আইনসভায় পাশ হওয়া আইনে হস্তক্ষেপ করছে সেই ১৪৫(৩) কে ‘পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর ।।