প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০১ ডিসেম্বর : এমন অনেক মানুষ আছেন তাঁরা যা কিছু করেন বা বলেন সেটাই যেন সবাইকে অনুপ্রেরণা যোগায়। তেমনই একজন হলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পাঠরত দৃষ্টিহীন ছাত্র সুমন বৈদ্য।নামের সঙ্গে কাজের মিল রেখেই অপরের জীবন বাঁচাতে সুমন শুক্রবার তাঁর জন্মদিনে পৌছে গেলেন কালনা মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে। সোখানে তিনি স্বেচ্ছায় রক্তদান করলেন।এমন মহতি কাজের মধ্য দিয়ে জন্মদিনটা সেলিব্রেট করতে পেরে সুমনও যেন তৃপ্ত। তাঁর কথায় ,মানুষ হয়ে জন্মে আমি যদি অন্য মানুষের বিপদে পাশে না দাঁড়াতে পারি,তাহলে এই জন্মের কি আর মূল্য রইলো !
সুমন বৈদ্যের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের কালনা থানার সাতগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত রামকৃষ্ণপল্লী গ্রামে। তবে এখন তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালের অরবিন্দ হোস্টেলে থেকেই পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন। সুমন জন্ম থেকেই অন্ধ।তাঁর অন্ধ দুই ভাই রেলে হকারি করেন। আর সুমন পড়াশোনা করে সমাজের আর পাঁচটা মানুষের মতো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছেন।১ ডিসেম্বর সুমনের জন্মদিন। আনন্দ হই হুল্লোড়ে মেতে না উঠে, এই দিনটিক একটু অন্য ভাবে সেলিব্রেট করার চিন্তাভাবনা আগেই নিয়ে রেখে ছিলেন সুমন। সেই মত এদিন সকাল সকাল নিজের স্টুডেন্ট আইকার্ড গলায় জুলিয়ে নিয়ে সুমন হোস্টেল বেরিয়ে পড়েন । কারুর সাহায্য ছাড়া একাই তিনি এদিন সোজা চলে আসেন কালনা মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে। ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের কাছে তিনি স্বেচ্ছায় রক্তদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। রক্তও দান করেন।
কিন্তু জন্মদিনে কেক কাটা ,বন্ধুদের সঙ্গে পার্টিতে
অংশ নেওয়া ,এ সব ছেড়ে স্বেচ্ছায় রক্তদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া কেন ? এই প্রশ্নের উত্তরে সুমন জানান,প্রত্যেক মানুষের কাছেই তাঁর ’জন্মদিন’ আর ’বিবাহ বার্ষিকীর’ দিনটা খুবই আনন্দের হয়। তবে আমি মনে করি ,মানুষ হয়ে জন্মে এই দিনগুলি ’সেলিব্রেট’ করার সময় আমরা যদি অন্য মানুষজনের জীবনে আনন্দ দেওয়ার মত কিছু কাজ তাতে একটা আলাদা তৃপ্তি পাওয়া যায় ।এর থেকে বেশী আনন্দের আর কিছু হতে পারে না । এই ভাবনা থেকেই অন্যের জীবন রক্ষায় আমি
আমার জন্মদিনে স্বেচ্ছায় রক্তদান করলাম।
দৃষ্টিহীন ছাত্র সুমন বৈদ্যর এমন ভাবনার ভূয়সী
প্রশংসা না করে পারেন নি কালনা হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে শুরু করে রোগীর পরিজনরা।
নরেশ কুমার দাস সহ অনেকেই বলেন,“কবিগুরুর রচিত একটি গান আছে-“অন্ধজনে দেহো আলো~ মৃতজনে দেহো প্রাণ–তুমি করুণামৃতসিন্ধু করো করুণাকণা দান“। সুমন বৈদ্য তাঁর জন্মদিনে কবিগুরুর সেই ভাবনারই যেন প্রকাশ ঘটালেন“। কালনা হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার গৌতম দাসও এদিন ছাত্র সুমন বৈদ্যর এমন মহতি ভবনাচিন্তার কথা জেনে প্রশংসা করেছেন ।।