এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০১ এপ্রিল : প্রসিদ্ধ ভাগবত পাঠক হিরণ্ময় গোস্বামীর ফের হামলা চালালো হয়েছে । সোমবার রাত ১১ টা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার ধরমপুর গ্রামে ভাগবত কথা শেষে তিনি যখন বিশ্রাম করছিলেন তখন আচমকা ২-৩ জন দুর্বৃত্ত তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তার গলায় দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে । ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে জখম করে । এমনকি হিরণ্ময় গোস্বামীর জটা কেটে দেয় দুষ্কৃতীরা ৷ তিনি চিৎকার করতেই হামলাকারীরা পালিয়ে যায় । তাকে দ্রুত ঘাটাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে স্থানান্তরিত করা হয় তমলুক হাসপাতাল । ওই সন্নাসীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে ।
এই ঘটনায় বাংলাদেশের তদারকি সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে এক সারিতে বসিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ এবারে হিরণ্ময় গোস্বামীর উপর ‘মমতা ব্যানার্জির পালিত জেহাদী দুষ্কৃতীদের’ হামলার নিন্দা করলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার ও বিজেপির অভিনেতা নেতা রুদ্রনীল ঘোষ ।
সুকান্ত মজুমদার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ধারামপুর গ্রামে শ্রদ্ধেয় ভাগবত পাঠক শ্রী হিরণ্ময় গোস্বামী মহারাজের ওপর জঘন্য হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। তাঁকে প্রাণঘাতী আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। প্রথমে গলায় ফাঁস লাগিয়ে, পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে আঘাত করা হয়েছে এবং তাঁর পবিত্র জটা বলপূর্বক কেটে ফেলা হয়েছে।এর আগে, তাঁর ভাগবত পাঠের সময় রাজ্যের ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পালিত কিছু জেহাদী দুষ্কৃতী দাবি করেছিল যে “ভারত মাতা কি জয়,” “হিন্দু সনাতন ধর্ম কি জয়,” “গৌ মাতা কি জয়” এবং “জয় শ্রী রাম”—এই স্লোগানগুলো উচ্চারণ করা যাবে না। কিন্তু তিনি এই অন্যায্য এবং অন্যায় নির্দেশ মানতে অস্বীকার করেন।
শ্রদ্ধেয় মহারাজের উপর এই নৃশংস আক্রমণ চূড়ান্ত প্রতিহিংসামূলক এবং তৃণমূল কংগ্রেসের কদর্য ভোট ব্যাংক রাজনীতির ফলশ্রুতি। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে, যা বাংলার হিন্দুদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং ভারতীয় জনতা পার্টি পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি কার্য্যকর্তা ওনার পাশে আছে। পশ্চিমবঙ্গের পঙ্গু প্রশাসন যদি আক্রমনকারী জেহাদীদের বিরুদ্ধে সত্ত্বর ব্যবস্থা না নেয়, আমরা তাঁর অপমানের বিরুদ্ধে উপযুক্ত জবাব দেবো।’
রুদ্রনীল ঘোষ ফেসবুকে লিখেছেন,’মোথাবাড়ি,নওদা, বেলদার পর এবার আক্রান্ত বিখ্যাত ভাগবত পাঠক শ্রী হিরন্ময় গোস্বামী প্রভু। গতকাল রাত ১১ টা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুর ধরমপুরে শ্রীমদভগবদগীতা পাঠ শেষের কিছু পরেই উগ্রবাদীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে মারধোর করে ধারালো অস্ত্র চালায়,মাথার জটা কেটে দেবার চেষ্টা করে। গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে ঘাটাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।’
তিনি লিখেছেন,’দুর্গাপুজোয় মাইক বাজানো বন্ধ, সরস্বতী পুজো বন্ধ, বিসর্জনে আপত্তি,বারুইপুরে মা শীতলা ও বসিরহাটে কালি মূর্তিতে আঘাত -এসব যেন বেড়েই চলেছে। এক কথায় হিন্দুধর্মের সংস্কার আচার-প্রচারে বাধাদান নিয়মিত ঘটনা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে। দলদাস পুলিশ কখনও মাইক হাতে নিজ দায়িত্বে পুজা-পাঠের ঘোষণা দিচ্ছে,কখনও নির্বিকার চিত্তে দুষ্কৃতিদের আড়াল করছে। কিসের ইঙ্গিত এসব?
রুদ্রনীল লিখেছেন,’গতকাল রেডরোডে পবিত্র ঈদের ধার্মিক অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক মঞ্চ হিসাবে ব্যাবহার করে হিন্দু ধর্মচারণ “গন্দা- ধরম” বলে দাগিয়ে দিলেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী। মোথাবাড়ি,বেলদা,নওদা, মূর্তি- ভাঙা, অশান্তি নিয়ে কোন শান্তি বার্তা দিলেন না। উলটে, উনি ও ওনার পুলিশ নিরপেক্ষতা ভুলে কাদের কাদের পাশে আছে স্পষ্ট করে ফতোয়া দিলেন।এই আচরণ কি আদৌ শান্তির বার্তা দিল? বাংলাদেশে যেমন উগ্র-মৌলবাদী সমর্থনে ইউনুসের ভূমিকা প্রকাশ্যে, ঠিক তেমনই পশ্চিমবঙ্গকে যেন পশ্চিম- বাংলাদেশ বানাবার দায়িত্ব কেউ নিয়ে ফেলেছেন সরকারি ভাবে। তাদের কল্যাণে জাল ভোটার-কার্ড আধার কার্ড পেয়ে এ রাজ্যে প্রায় চল্লিশ লক্ষ ভোটার হয় বিদেশী রোহিঙ্গা বা বাংলাদেশী!! অর্থাৎ এ রাজ্য সরকারে কে থাকবে তার দায়িত্ব আপনার আমার হাতে নয়, অবৈধ বিদেশী অনুপ্রবেশকারী ও জেহাদির হাতে!’
সব শেষে তিনি লিখেছেন,’রামনবমীর মিছিলে আগের বার কাদের ছাদ থেকে ইঁটবৃষ্টি হয়েছিল তা আমরা কেউ ভুলিনি। যারা অসভ্যতা করেছিল কড়া ধারায় তাদের কজন আদৌ গ্রেফতার হয়েছিল? এবারও কারো একটা নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষ থেকে আগ বাড়িতে এমন বার্তা দেওয়া হচ্ছে, যেন উৎসবের মেজাজে রামনবমী পালন না হলেই ভাল হয়! বাহ! গতকাল যেমন শান্তির সাথে পবিত্র ঈদ পালন হয়েছে, তেমনই রামনবমী পালন হবে সব হিন্দুরা চায়।পরিশেষে, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী/পুলিশমন্ত্রী হিরন্ময় গোস্বামী প্রভুর ওপর আক্রমণকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কড়া শাস্তি দিয়ে নিরপেক্ষ রাজধর্ম পালনের চেষ্টা করবেন এই আশা রাখি।তিনি চাইলেই পুলিশ সব করতে পারে ।’।

