এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৬ অক্টোবর : তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষকে ‘রাষ্ট্র বিরোধী’ এবং ‘সোরোস-সমর্থিত অপপ্রচারকারী’ বললেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । পাশাপাশি তিনি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জির কাছে তিনি প্রশ্ন করেছেন, এমন একজন ‘রাষ্ট্র বিরোধী’কে কিভাবে তিনি রাজ্যসভায় পাঠালেন ?
আসলে মঙ্গলবার(১৫ অক্টোবর) সাগরিকা ঘোষ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে সমর্থন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অত্যন্ত কদর্য ভাষায় আক্রমন করে এক্স-এ একটা পোস্ট করেছিলেন । সেই পোস্টে সাগরিকা লিখেছিলেন,’কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো কেন প্রকাশ্যে মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের “অপরাধমূলক কার্যকলাপের” অভিযোগ আনছেন তা সংসদে অ-জৈবিক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বলতে হবে।’
এই পোস্টটি রিপোস্ট করে মমতা ব্যানার্জির কাছে শুভেন্দু অধিকারী কিছু প্রশ্ন রাখেন । তিনি লিখেছেন, ‘টিএমসি সুপ্রিমো মমতা, আপনি কিসের ভিত্তিতে সাগরিকা ঘোষকে রাজ্যসভায় মনোনীত করেছেন? কেননা সে রাষ্ট্র বিরোধী বলে ? কারণ, তিনি কি বিদেশী শক্তির জন্য দারুণ সওয়াল করেন?
কারণ সে যখনই টুইট করে বা কথা বলে তখনই সে বোকামিতে নিজেকে ছাড়িয়ে যায়? সঠিক উত্তর উপরের সব ।’ সাগরিকা ঘোষের একটা পুরনো ভিডিও তিনি শেয়ার করেছেন । যেখানে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদকে বলতে শোনা গেছে যে ‘রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিকদের সম্পর্ক কখনো ভালো হয় না’ । তিনি কয়েক বছর আগে একটা খবরের চ্যানেলে সাক্ষাৎকারের মাঝে মমতা ব্যানার্জির উঠে চলে যাওয়ার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেছেন,’একজন প্রকৃত সাংবাদিক কখনোই কারোর অনুগত হতে পারে না ।’ উল্লেখ্য,সেই সময় মমতা তার দলের বর্তমান সাংসদ সাগরিকাকে ‘মাওবাদী’ বলেছিলেন।
শুভেন্দু লিখেছেন,’দেশের ক্ষমতাসীন দলের বিরোধিতা করা এক জিনিস, কিন্তু দেশেরই বিরোধিতা করা এবং তার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করা দুঃখজনক! একজন বিদেশী প্রধানমন্ত্রীর সমর্থনে বেরিয়ে আসা যিনি আমাদের দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন প্রমাণের একটি টুকরো শেয়ার করতে সক্ষম না হয়েও এটি গ্রহণযোগ্য নয়। টিএমসিকে অবশ্যই স্পষ্ট করতে হবে যে মিসেস ঘোষের এই পোস্টটি তার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি নাকি তারা সমর্থন করে এমন একটি টুলকিটের অংশ। এটা নিয়ে মধ্যপন্থা নেই,আপনাকে বলতে হবে হয় আপনি ভারতের সাথে বা ভারতের বিপক্ষে। অনুগ্রহ করে কথা বলুন মমতা ব্যানার্জি ।’
শুভেন্দু অধিকারীর এই প্রশ্নের প্রতিক্রিয়া অবশ্য মমতা ব্যানার্জির কাছ থেকে পাওয়া যায়নি । তবে শুভেন্দুকে ট্যাগ করে সাগরিকা লিখেছেন,’দুর্বল প্রচেষ্টা পশ্চিমবঙ্গের শ্রী শুভেন্দুর। দুর্ভাগ্যবশত এটিও কাজ করবে না। আপনি দেখতে পাচ্ছেন, সন্দেশখালীতে ষড়যন্ত্রের প্ররোচনা, “বিক্ষোভ” সমাবেশে সহিংসতা উসকে দেওয়া, মহিলাদের গালাগালি, দল বেঁধে, বিজেপি ফর ইন্ডিয়া “ওয়াশিং মেশিনে” ধৃত হওয়ার পরে, সবাই ইতিমধ্যেই জানেন আসল “দেশবিরোধী” কারা। কিছুই আর আপনার জন্য কাজ করছে না । আমার সহানুভূতি ।’
অবশ্য তৎক্ষনাত সাগরিকার এর উত্তরও দেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি উত্তরে লিখেছেন,’সুশ্রী সাগরিকা ঘোষ মনে হচ্ছে আপনি যখন মতাদর্শ এবং পেশা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, আপনি আপনার “ওয়াশিং মেশিনে” আপনার দিদির অপকর্মগুলি ধুয়ে ফেলতে সুবিধাজনক মনে করেছিলেন। সত্য, সবাই জানে আসল “রাষ্ট্র বিরোধী” কারা। আপনি এবং আপনার সোরোস-সমর্থিত প্রোপাগান্ডিস্টদের দল।’
প্রসঙ্গত,খালিস্তানি ইস্যুতে কানাডা থেকে কূটনৈতিকদের দেশে ডেকে নেওয়া এবং ভারতস্থিত কানাডার কূটনৈতিকদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে । যদিও কেরালার বামফ্রন্ট সরকার এই ইস্যুতে নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছে । কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ কানাডাকে সমর্থন করে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন।।