এইদিন আন্তর্জাতিক ডেস্ক,০১ অক্টোবর : মহাসপ্তমীর দিন সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বিশাল আকৃতির কুমিরের আক্রমণের মুখে পড়েন সুব্রত মণ্ডল (৩২) নামের এক জেলে । মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশের সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল খালে কুমিরটি তার দু’পা কামড়ে ধরে গভীর জলে টেনে নিয়ে যায় । সঙ্গীদের সাহায্যে সুব্রতবাবু নিজে কুমিরের কবল থেকে বের হওয়ার অনেক চেষ্টা করেন৷ কিন্তু তিনি ব্যার্থ হন । তারপর রাত ১১টার দিকে তার রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করা হয়।
সুব্রত মণ্ডল খুলনার দাকোপ উপজেলার ঢাংমারী এলাকার কুমুদ মণ্ডলের ছেলে। তিনি সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী ও সন্তান,বাবা-মা । অত্যন্ত হতদরিদ্র পরিবার । বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে সুব্রত মণ্ডল ঢাংমারী স্টেশন থেকে রাজস্ব জমা দিয়ে পাস সংগ্রহ করে মাছ ধরতে সুন্দরবনে প্রবেশ করেন। ফেরার পথে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তিনি সাঁতরে করমজল খাল পার হচ্ছিলেন। এ সময় একটি কুমির তার দু’পা কামড়ে ধরে জলের গভীরে টেনে নিয়ে যায়। সঙ্গে থাকা অন্য জেলেরা চেষ্টা করেও তাকে উদ্ধার করতে পারেননি। ঘটনার পর বন বিভাগের লোকজন ও স্থানীয় গ্রামবাসী করমজল খালে তল্লাশি চালান।
সুব্রতর সঙ্গে মঙ্গলবার একসঙ্গে বনে যাওয়া জুয়েল সরদার, জয় সরকার ও স্বপন বিশ্বাস জানান, সুব্রত মণ্ডল দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনে মাছ, প্রধানত কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
এক ফেসবুক পোস্টে তথ্যটি নিশ্চিত করে সুন্দরবন জলদস্যু মুক্তকরণে বিশেষ অবদান রাখা সাংবাদিক মোহসীন উল হাকিম লেখেন, কাঁকড়া ধরে ফিরছিলেন সুব্রতরা। পথে বড় খাল বলতে করমজল। এখানে কুমির আছে। মাঝে মাঝেই আক্রমণ করে। গত বছর মারা গেলো মোশাররফ। তাই সবাই বেশ সতর্ক। পাঁচ জনের কাঁকড়া শিকারির দল। সবাই পার হয়ে গেলেন। সুব্রত ছোটখাটো মানুষ। উঠার সময় জলেতে একটু খাবি খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। এক মুহূর্ত। দুই পা একসাথে কামড়ে ধরল বিশাল এক কুমির।
মোহসীন উল হাকিম লেখেন, সাথে সাথে সুব্রতর হাত ধরে ফেললো সহযাত্রীরা। শুরু হলো টানাটানি। চারজন মিলে প্রায় তিন মিনিট চেষ্টা করলো। কিন্তু পানির নিচে থাকা কুমিরের শক্তির কাছে পরাস্ত হলো। সুব্রতকে নিয়ে গেলো সুন্দরবনের কুমির। ওরা চেষ্টা করছে। মিনিট ১৫ জলের নিচে কুমির। তারপর সুব্রতকে মুখে নিয়ে ভেসে উঠলো সে। বিশাল কুমিরটির মুখে যেন ছোট্ট একটা শিকার। অনেকক্ষণ ভেসে বেড়ালো। সহযাত্রীরা অনুসরণ করছে। সুযোগ পেলেই করবে পাল্টা আক্রমণ। এর মধ্যে ট্রলার নিয়ে আসলেন বনরক্ষীরা। শিকার মুখে নিয়ে ডুব দিল কুমির। আর ভাসলো না। সন্ধ্যা হলো। গ্রামের মানুষেরা আসলো করমজল খালে। কিন্তু অন্ধকারে কী ভাবে উদ্ধার করবে সুব্রতকে? যদি বড় নদীতে চলে যায়! যদি শিকার নিয়ে অন্য কোনো খালে ঢুকে পড়ে?
তিনি আরও লেখেন, একজন বললো, বড় কুমিরটি পশুর নদী দিয়ে ঢাংমারীর দিকে গেছে। টর্চের আলোতে তারা দেখেছে, কুমিরের মুখে সুব্রত নাই। তার মানে খালেই আছে সুব্রত। সাহসী কয়েকজন জলে নামলো। ভাটা থাকতে থাকতে খুঁজে বের করতে হবে সহযাত্রীর মৃতদেহ। এছাড়া বাড়ি ফেরার উপায় নাই। অনেকক্ষণ চেষ্টা পর ঢাংমারীর আলম খুঁজে পেলো সুব্রত মন্ডলকে। রক্তাক্ত ছোট্ট দেহটি নিয়ে সবাই ছুটলো বাড়ির দিকে। ওদিকে স্ত্রী আর স্বজনরা অপেক্ষা করছে। আসছে ঘরের মানুষটির মৃতদেহ। অনেক কাজ সামনে। সৎকার করতে হবে। তারপর অসম্ভব এক জীবন। পরিবারটি চলতো সুব্রতর একার রোজগারে। সুব্রত ছিলেন সুন্দরবনের একজন বনজীবী।।