এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৩ জুন : ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে । এরাজ্যে ২০১৯ সালের ১৮ টি আসনও ধরে রাখতে পারেনি গেরুয়া শিবির । পরাজিত হতে হয়েছে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষকেও । এবারের ভোটে দিলীপ ঘোষের পুরনো আসন মেদিনীপুর থেকে বদল করে বর্ধমান দুর্গাপুর করে দেওয়া হয়েছিল । তৃণমূল প্রার্থীর প্রায় দেড় লাখের কাছাকাছি ভোটে হারতে হয়েছে দিলীপ ঘোষকে । আর এই পরাজয়ের জন্য তিনি আসন বদলকেই দায়ী করে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘কাঠিবাজির’ অভিযোগ তুলেছেন । তবে তিনি কারুর নাম না করলেও মূলত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দিকে যে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন সেটা স্পষ্ট ।
বুধবার সন্ধ্যায় দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী । কোন একটি প্রশ্ন উত্তরে তিনি বলেন,’আমি দলের ভেতরের কোন কথা বাইরে বলি না । আমি খুব ডিসিপ্লিন লোক । কলেজ লাইফে আমি এনএসএস করেছি । আমি যখন কংগ্রেস করেছি তখনও কংগ্রেসের কোন কথা বাইরে বলিনি । আমি যখন তৃণমূল করেছি তখনো ভাইপো এবং মুকুল রায় আমার পিছনে এতো লেগে থাকত অথচ তাদের বিরুদ্ধে বাইরে কোন কথা বলিনি। আমি ভারতীয় জনতা পার্টি করি, তাতে সব সময় আমি পুরস্কার পাই না তিরস্কার ও জোটে, অনেকে অনেক কিছু পোস্টও করতে পারেন, তির্যক মন্তব্য করতে পারেন, ভালো হলে নিজেদেরকে ক্রেডিট নেন, খারাপ হলে আমার ঘাড়ে চাপান, কিন্তু আমি কখনোই জলের আভ্যন্তরীণ বিষয় বাইরে বসে চাই না ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’প্রাক নির্বাচন এবং প্রচার কৌশল সবটাই সংগঠন তৈরি করে । ভারতীয় জনতা পার্টিতে সংগঠনের একটা সিস্টেম রয়েছে । আমি রাজ্যের কোর কমিটির সদস্য। সেই কোর কমিটির মিটিংয়ে যদি আমাকে ডাকে, আমাকে যদি কিছু বলতে বলা হয় তাহলে আমি বলব অথবা চুপ থাকব । অনেক সময় চুপ থাকি আবার অনেক সময় বলিও । জিজ্ঞেস করলে আমি নির্বাক থাকি না, উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। তা আমি সেখানেই বলব ।’
কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গোপন আঁতাত ছিল । এই বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,’কেন্দ্র বাহিনী এসেছিল নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে । তবে তাদের স্বতন্ত্র ভূমিকায় এখানে ছিল না। রাজ্য পুলিশের অধীনে ছিল তারা । স্বাভাবিকভাবে জম্বু কাশ্মীরে কেন্দ্র বাহিনীর হাতে যে ক্ষমতা সেই ক্ষমতা এখানে ছিল না। কিন্তু বাহিনীর কুইক রেসপন্স টিমও নিয়ন্ত্রণ করেছে রাজ্য পুলিশ। তাই আমাদের দলের সম্মানীয় সাংসদ জগন্নাথ সরকারের কোন মন্তব্য নিয়ে আমি বাইরে কোন প্রতিক্রিয়া দিতে চাই না । আমার কিছু বলার থাকলে আমাদের ফোরাম রয়েছে, আমি সেখানে বলি । বাইরে বলার কোন প্রয়োজন হয় না।’
বিজেপির খারাপ ফলাফলের পর থেকে কেন্দ্র থেকে আসা নির্বাচনী প্রচার বাবদ খরচার অর্থ অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন জেলা থেকে । অন্য একটি বিষয়ে সাংবাদিকরা শুভেন্দু অধিকারীকে প্রশ্ন করলে সে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রার্থী হওয়ার পর থেকে দলের তরফে যদি আমাকে প্রচারের জন্য বলে তাহলে আমি আমার নিজের গাড়িতে, আমি তো সরকারি গাড়ি চড়ি না, আর পার্টি থেকেও তেল নিই না,আমি নিজে তেল ভরে, আমাদের পেট্রোল পাম্প আছে, ওই পাম্পের কয়েক লক্ষ টাকা বৈধ রোজগার আছে, সেই তেল গাড়িতে ঢুকিয়ে আমি যাব । আর যদি রায়গঞ্জে প্রচারে যেতে হয় তাহলে আমি ফিরতে পারবো না। সেখানেই থাকতে হবে । তাহলে মালদাতে আমি নিজের খরচে আমি হোটেল ভাড়া করে থাকবো । আমাকে যেখানে প্রচারে যেতে বলা হয় আমি যাই কিন্তু সংগঠিত করা কাজ আমার নয় । কেবলমাত্র আমার জেলাতে পার্টির সংগঠনের লোকেরা যেমন দলের নির্দেশ পালন করেন তেমনি আমার পরামর্শও মেনে চলেন ।’
প্রসঙ্গত, লোকতো বা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই দিলীপ ঘোষ ও ও তার লবির লোকজন মূলত শুভেন্দু অধিকারী নিশানা করতে শুরু করেছেন । এর ফলে রাজ্যের বিজেপি কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে । বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম রাজ্য বিজেপির সংগঠনের ব্যাপক রদবদলেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে । যদিও বিজেপির তরফ থেকে এই বিষয়ে স্পষ্ট কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি । তবে রাজ্য বিজেপির অভ্যন্তরে ওঠা কোন্দলে লাগাম টানতে সম্প্রতি এগিয়ে আসেন রাজ্যসভার প্রাক্তন বিজেপির সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত । তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে নরেন্দ্র মোদীর প্রভাব এবং শুভেন্দু অধিকারীর অক্লান্ত পরিশ্রম না থাকলে রাজ্যে বিজেপি আরো খারাপ ফলাফল হতে পারতো । আর তারপর থেকেই সংবাদ মাধ্যমের সামনে কাঠিবাজীর কথা শোনা যায়নি দিলীপ ঘোষের মুখ থেকে ।।