এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৬ এপ্রিল : কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পহেলগামের বৈসরান উপত্যকায় সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট শেয়ার করে ধর্ষণের হুমকি পাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোকনগর থানার অন্তর্গত কল্যাণগড়ের বাসিন্দা তরুণী প্রিয়াঙ্কা দত্ত (২২) । অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একজন মুসলিম নেতা ও মারুফ হোসেন নামে একজন অটো মিস্ত্রি । পুলিশের বিরুদ্ধেও তিনি গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন । শুক্রবার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই তরুনী । সেই ভিডিও ভাইরাল হলে অবশেষে তরুনীর পাশে এসে দাঁড়ালেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । শুক্রবার তরুনীর সঙ্গে তিনি ফোনে কথা বলেন । তিনি তরুনীর ইচ্ছার কথা জানতে চান । প্রিয়াঙ্কা দত্ত নামে ওই তরুনী তাঁকে বলেন,’হ্যাঁ, আমি প্রতিবাদ করতে চাই । আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে । উল্টে আমার উপর দোষারোপ করা হয়েছে যে আমি কেন পোস্ট করেছি । কেন আমি বিষয়টা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছি ।’ শুভেন্দু অধিকারী তাকে সমস্ত রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার ওই তরুণীর একটা ভিডিও ভাইরাল হয় । পাশাপাশি তিনি ফেসবুক পোস্টে স্থানীয় থানার বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ তোলেন । ভিডিওতে তরুণীকে বলতে শোনা যায়, গত মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ফেসবুকে একটা ভিডিও পোস্ট করেছিলেন । অনেকে তাকে সমর্থন করলেও এমকে মারুফ ও ‘মিষ্টি মায়ের দুষ্টু ছেলে’ নামে দুই ব্যবহারকারী তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করছে । তারা সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে সুনির্দিষ্ট যুক্তি দিতে না পেরে মেসেঞ্জারে এসে নোংরা ভাষায় মন্তব্য করছে । ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে। বলছে, ‘বাড়ি থেকে তোকে তুলে নিয়ে যাবো । তোকে এই করে দেবো সেই করে দেবো’ । এমনকি মেসেঞ্জারে কল করে ধর্ষণের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। তাদের মধ্যে একজন বলছে সে নাকি বি এস এফ- চাকরি করে । আর অন্যজন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে জড়িত।
তরুণী বলেন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ কি এটাই শেখায় যে একজন মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের হুমকি দেবে ? আমিও তো টিএমসিপি সঙ্গে যুক্ত । মেয়েটি আরো বলেন,’পহেলগাঁওয়ে যা হচ্ছে হচ্ছে, আমি নিজের বাড়িতেই সুরক্ষিত নই ।’
এছাড়া স্থানীয় থানার পুলিশের বিরুদ্ধেও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন প্রিয়াঙ্কা দত্ত নামে ওই তরুনী । তিনি ফেসবুকে লিখেছেন,’কালকে রাত ১২.৩০ এ থানা থেকে দুইবার থানার ওসি সমেত আরো ৭-৮ জন অফিসার এসেছিলেন আমার বাড়িতে, তারা আমায় বাধ্য করে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে ভিডিওটা ডিলিট করতে, না হলে আমার বাবা মার কোন ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। বা মিথ্যে অভিযোেগ হয়তো ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে । আমার বাড়ির লোকও আমার পাশে নেই, না আছে কোন পুলিশ না প্রশাসন। বুঝতেই পেরেছিলাম এরকম কিছু ঘটবে। তার জন্যই ফেসবুকে পোস্টটা করেছিলাম । পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আমার মতন সাধারণ বাড়ির মেয়ে পেরে উঠতে পারবে না। কালকে রাত্রে থানার দিয়ে আমার বাড়িতে আসার পর আমি একটা লিখিত এফআইআর জমা দি, কিন্তু এখন তো আমার প্রশাসন আর পুলিশের উপর দিয়ে ভরসায় উঠে গেছে, যারা দোষ করল তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর আমি প্রতিবাদ করেছি বলে এখন আমার উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে ভয় দেখানো হচ্ছে। হয়তো এবার থানাতেও তুলে নিয়ে যাবে।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিসহ দাবি করা হচ্ছে একজন অভিযুক্তের নাম মারুফ হোসেন এবং সে অটো মিস্ত্রি। দ্বিতীয় জনকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা সাহারুল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে । তবে তাদের ঠিকানা দেওয়া হয়নি । তরুনীর ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করে বিজেপি বিধায়িকা অগ্নিমত্রা পাল মুখ্যমন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ‘আর একজনও হিন্দু ভাই অথবা বোনদের গায়ে যদি একটা আঁচড় লাগে আমি এবং আমার দল বিজেপি কিন্ত চুপ থাকবে না। সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে কিন্ত আপনাকে তীব্র প্রতিবাদের সম্মুখীন হতে হবে।’।