এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৮ আগস্ট : গত ৯ আগস্ট আরজি করের ‘অভয়া’র বাবা-মায়ের ডাকে ‘নবান্ন অভিযানে’র সময় আন্দোলনকারীদের উপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করে কলকাতা পুলিশ । গুরুতর আহত হন ‘অভয়া’র মা । কলকাতার একটা বেসরকারি হাসপাতালে রেখে তার চিকিৎসা করিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । পুলিশের নৃশংস লাঠিচার্জে শুভেন্দু অধিকারী কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের ফ্লাইওভারের নিচে হ্যান্ড মাইক নিয়ে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন । সেই সময় তিনি কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মাকে “শুয়োরের বাচ্চা” বলে সম্বোধন করেন । তার সেই মন্তব্যের কয়েকদিন পর কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেন পুলিশের স্ত্রীরা । সেই সাংবাদিক সম্মেলন নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেছেন, সাংবাদিক সম্মেলন করার কয়েক ঘন্টা আগে পুলিশের স্ত্রীদের রীতিমত ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল,আর সেই ট্রেনিং দিয়েছিলেন পুলিশের দুই কর্তা শান্তনু সিনহা বিশ্বাস ও বিজিতেশ্বর রাউত ।
আজ সোমবার সকালে ছবি ও ভিডিও প্রমাণসহ সাংবাদিক সম্মেলন করে এই দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা । তিনি বলেছেন,’আমি আজকে শান্তনু সিনহা বিশ্বাস ও বিজিতেশ্বর রাউতদের পর্দা ফাঁস করব। শুধু পর্দা ফাঁস করবো না প্রমাণ দেখিয়ে বলবো ।’ শান্তনু সিনহা বিশ্বাসকে কার্যত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বাড়ির চাকর আখ্যা দিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’মমতা ব্যানার্জির বাড়ির বাজার করেন, সেই শান্তনু সিনহা বিশ্বাস একটি সংগঠন তৈরি করেছেন । নামটা হচ্ছে : ‘পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ আবাসিক মহিলাবৃন্দ’, ভবানী ভবন, কলকাতা । কলকাতা পুলিশ এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এটা অর্গানাইজ করেছে । প্রেসক্লাবে যাওয়ার আগে এদের জড়ো করা হয়েছিল PTS অডিটোরিয়ামে,পুলিশ ট্রেনিং স্কুল অডিটোরিয়ামে কিন্তু অফিসিয়ালি তার কোন প্রমাণ রাখা হয়নি । প্রেস মিট করার আগে এদের সামনে ভাষণ দিয়েছেন শান্তনু সিনহা বিশ্বাস এবং বিজিতেশ্বর রাউত । দুজনেই সম্প্রতি অবৈধভাবে প্রমোশন পেয়েছে। তার মধ্যে একজন এক্সটেনশন পেয়েছেন । বিজিতেশ্বর রাউত সাব ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর প্রমোশন পেয়েছেন । এসব করছেন আর চটি চাটছেন । আর একটা লম্পট আছে, তার নাম এখানে বলছি না, শুনেছি একাধিক স্ত্রী ওর । এসব লোক মিলে ওখানে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছেন ।’

তিনি বলেন,’তিনটে সরকারি বাস আনা হয়েছে । রোড নম্বর ২৩০। তবে সরকারি কিনা জানিনা । যে বাসগুলিকে ওসি আলিপুর তুলে নিয়ে চলে এসেছে । আলিপুরের ওসি বাসগুলিকে পিটিএস অডিটোরিয়ামে নিয়ে আসে ওদেরকে প্রেসক্লাবের তুলে নিয়ে আসার জন্য । আবার ওখানে কার্যত ভণ্ডুল প্রেসক্লাব থেকে পালানোর পরে আবার তাদের পিটিএস-এ তিনটে বাস তাদের পৌঁছে দিয়েছে । এছাড়া একটা পুলিশের গাড়ি আনঅফিশিয়ালি ব্যবহার করা হয়েছে । যার নম্বর হচ্ছে-WB04G9571, কলকাতা পুলিশের একটি গাড়ি । কিন্তু পুলিশের হ্যান্ডবুক অনুযায়ী এরা এভাবে প্রেস কনফারেন্স করতে পারে না।’ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ইতিমধ্যে আমার আইনজীবী নোটিশ দিয়েছে । তিন দিন অতিবাহিত হয়েছে । এই সপ্তাহে আমরা মামলা করব । মানহানির মামলা ।’
সেদিনের কনফারেন্সে পুলিশ কর্মীদের স্ত্রীদের নামও প্রকাশ্যে এনেছেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেছেন,
‘ওই দিন উপস্থিত ছিলেন আতাউর রহমানের স্ত্রী সালমা সুলতানা। এই আতাউর রহমান বিজিএল এমটিএস ব্রিগেড হেড কোয়ার্টারে পোস্টেড। ওইদিন ছিলেন প্রিয়াঙ্কা চট্টোপাধ্যায় দে। যিনি কনস্টেবল ২২৫৫ সায়ন্ত দে-র স্ত্রী। এছাড়াও ছিলেন অমিতা বাজ । এ এস আই অতনু বাজের স্ত্রী। যিনি ফোর্থ ডিভিশন এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চে কর্মরত ।’
তিনি বলেন,’আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্তের জন্য রাজ্যপাল কেউ জানিয়েছি, কারণ এটা সরাসরি ভায়োলশন অফ সার্ভিস রুল ।’
আজ ফের কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মাকে নিশানা করেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন,’নবান্ন অভিযানের দুদিন পরে কলকাতা পুলিশের গৃহিণীদের নিয়ে ওই প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয় । কিন্তু বাইরে দেখানো হয় যে বিরোধী দলনেতা পুলিশের বিরুদ্ধে খারাপ কথা বলার প্রতিবাদ করছে পুলিশের স্ত্রীরা৷ যদিও আমি পুলিশকে কিছু বলিনি । আমি বলেছি শুধু কলকাতার নগরপাল, যিনি একজন কুখ্যাত আইপিএস, অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় পুলিশ সুপার থাকার সময় যৌথবাহিনীকে ব্যবহার করে সুশান্ত ঘোষ ও দীপক সরকারদেরকে সাথে নিয়ে ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ব্যাপক অত্যাচার করেছেন৷ ওই সময় সিপিএমের গুড বয় ছিলেন এবং পুলিশ সুপার ছিলেন ।’ তিনি বলেন,’আদিবাসী ছেলেদের সবাইকে মাওবাদী তকমা দিয়ে তুলে এনে মারতেন৷ ওনারও একটা আয়না ঘর ছিল, কলাইকুন্ডা পুলিশের বিট হাউসে । আমি লালগড়, ধরমপুর, রামগড় ও বেলাটুকরির বহু ছেলেকে আমার বাড়িতে রেখেছিলাম । মনোজ বার্মার নজর থেকে আড়াল করার জন্য ।’
শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন,’এই কুখ্যাত লোকটি সেদিন অভয়ার মায়ের উপর যে অত্যাচার করিয়েছেন, ওখানে ছিল না কোনো জলকামান, আর একজন খালিদ নামে পুলিশ নাকি বলছে এই যে ওখানে ৪০০ জনের মতো লোক ছিল। এই ধরনের রাজনৈতিক কথাবার্তা আপনারা লাগাতার দেখেছেন এবং শুনেছেন ।’।