এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৬ সেপ্টেম্বর : আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসক ‘তিলোত্তমা’র ধর্ষণ বা গনধর্ষণ ও নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কলকাতা পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন উঠছিল বিভিন্ন মহল থেকে । তবে তার মধ্যে সবথেকে মারাত্মক অভিযোগ হল ‘তিলোত্তমা’র ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডে প্রমান লোপাটের । আর প্রমান লোপাটের মত গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে খোদ কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে । যদিও এর আগে বেশ কয়েকবার তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে এই অভিযোগ খন্ডন করেছেন । মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও আরজি কর কাণ্ডে তদন্ত প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে কলকাতা পুলিশকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন । কিন্তু শাসকদল বা শাসকদল অনুগামীরা ছাড়া মমতা ব্যানার্জি এবং বিনীত গোয়েলের কথায় ভরসা রাখতে পারছেন রাজ্যের বাকি মানুষ । দু’জনেরই পদত্যাগের দাবিতে সরব হচ্ছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি থেকে শুরু করে আমজনতা । এবারে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মু এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে বিনীত গোয়েলের পুলিশ পদক ফেরানোর আবেদন জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে লেখা চিঠি পোস্ট করে এক্স-এ শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’আমি ভারতের মাননীয় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মুজিকে একটি চিঠি লিখে আইপিএস (পশ্চিমবঙ্গ: RR – 1994) বিনীত গোয়ালকে প্রদত্ত মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক এবং পুলিশ পদক প্রত্যাহার/বাজেয়াপ্ত করার অনুরোধ করেছি । বর্তমানে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদে কর্মরত বিনীত গোয়াল কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজের আবাসিক ডাক্তারের ধর্ষণ ও হত্যার তদন্তের সময় তার নিন্দনীয়, শোচনীয় এবং লজ্জাজনক ভূমিকা পালন করেছেন ।
গত ১৪ ই আগস্ট,রাতে আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভাঙচুরের সময় বস্তুগত প্রমাণ ধ্বংস করা এবং ইচ্ছাকৃত নিষ্ক্রিয়তার ক্ষেত্রে তার জড়িত থাকার বিষয়টি মিডিয়াতে ভালভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে চলমান আর্থিক ও নৈতিক র্যাকেটকে আড়াল করার অভিপ্রায়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক নির্বাহীর ইচ্ছায় দেশের সম্ভবত সবচেয়ে জঘন্য ও সংবেদনশীল অপরাধের তদন্ত প্রক্রিয়াকে শেষ করার জন্য তার নির্লজ্জ প্রচেষ্টা তাকে এই ধরনের পুরস্কার ধরে রাখার অযোগ্য করে তোলে।
তার সন্দেহজনক ক্রিয়াকলাপ ১৬৮ বছর ধরে তিল তিল করে অর্জিত কলকাতা পুলিশের খ্যাতিকে কলঙ্কিত করেছে এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে লজ্জা দিয়েছে। কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে রক্ষা করার অভিপ্রায়ে পরিচালিত তার কর্মকাণ্ড পশ্চিমবঙ্গের ইতিমধ্যেই অনিশ্চিত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তিনি রাজ্য এবং জাতির কাছে অত্যন্ত লজ্জা বয়ে এনেছেন এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সমস্ত ভুলের মূর্ত প্রতীক হিসাবে সুশীল সমাজ তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে ।’
শুভেন্দু আরও লিখেছেন,’আমি মাননীয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ জিকেও চিঠি লিখেছি, এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য অনুরোধ করেছি এবং মেমো নম্বরের মাধ্যমে জারি করা বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দয়া করে নিন্দা জানাতে অনুরোধ করেছি । 11026/02/2017-PMA পুলিশ ডিভিশন-I-এর ২০১৭ সালের ২৯ মে তারিখে, যেখানে রাজ্য সরকারগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে নির্দেশিকাগুলি মেনে না চলার কোনও ঘটনা ঘটলে গুরুতর ত্রুটির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক এবং পুলিশ পদক যেন প্রত্যাহার বা বাজেয়াপ্ত করা হয় ।
প্রসঙ্গত, বর্তমান কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে ২০১৩ সালে এবং ২০২৩ সালে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক’ এবং ‘পুলিশ পদক’ দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসকের ধর্ষণ বা গনধর্ষণের পর নির্মম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর পর তার ভূমিকা নিয়ে ভুরি ভুরি প্রশ্ন উঠছে । খোদ বিনীত গোয়েলের সঙ্গে দেখা করে তার পদত্যাগের দাবি জানিয়ে এসেছেন আরজি করের চিকিৎসকরা ।।