এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৪ জানুয়ারী : মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন প্রয়োগে প্রসূতিদের মৃত্যু ও অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম। বৈঠকে স্বাস্থ্য সচিবকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন মুখ্যসচিব বলে খবর । পরে সোমবার বিকেলে উভয় সচিব মিলে সাংবাদিক বৈঠক করেন৷ সেখানে মুখ্যসচিব বলেন, ‘আমরা একটা তদন্ত করেছিলাম। সেই সময় আমরা একটা খবর পাই এই কোম্পানির স্যালাইন নিয়ে সমস্যা আছে। সেই কারণে তখন প্রোডাকশন বন্ধ করতে বলা হয়েছিল। আগেও এই স্যালাইন ব্যবহার করার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। তারপর আবার গত ৭ তারিখ একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।ওই কোম্পানিকে প্রোডাকশন বন্ধ করতে বারণ করা হয়েছিল। তারপর থেকে ওদের থেকে আর এই ব্যাচের স্যালাইন নেওয়া হয়নি। যেহেতু এখানে গাফিলতির অংশ রয়েছে। আজ মুখ্যমন্ত্রী দশজন সিনিয়র স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে মিটিং করেছেন। তিনি পরিস্কার জানিয়েছেন এই ঘটনা কোনও ভাবেই বরদাস্থ করা যাবে না। পূর্ণাঙ্গ তদন্তের রিপোর্ট এলে এই ঘটনায় জড়িত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। তাছাড়া সিআইডিকেও আমরা নির্দেশ দিয়েছি,এই ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে। আশাকরি সিআইডির রিপোর্টও তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবো। তারপরেই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবেই।’
এদিকে রাজ্যের মুখ্যসচিবের এই বক্তব্যের পর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে জুনিয়র ও ট্রেইনি ডাক্তারদের ‘বলির পাঁঠা করার চেষ্টা চলছে৷ পাশাপাশি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতির মৃত্যু ও গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় রাজ্যের বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও স্বাস্থ্য সচিবকে দায়ি করেছেন । মুখ্যসচিবের সাংবাদিক বৈঠকের ভিডিও এক্স-এ পোস্ট করে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’মিস্টার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব মনোজ পন্ত, মনে হচ্ছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে আপনি এবং স্বাস্থ্য সচিব; নারায়ণ স্বরূপ নিগম মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ দুর্ঘটনার পুরো দায় ওই হাসপাতালের প্রসূতি ও গাইনোকোলজি ইউনিটের ওপর চাপানোর জন্য তৎপর। এছাড়াও আপনার পরিকল্পনা হল জুনিয়র ও ট্রেইনি ডাক্তারদের বাসের নিচে ফেলে দেওয়া। আপনার প্রেস ব্রিফিং-এর সময় বার বার ‘অবহেলা’ শব্দের উচ্চারণ তাই ইঙ্গিত করে। আপনি “পশ্চিম বঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড” থেকে প্রায় এক মাস ধরে সংগ্রহ করা নিম্নমানের রিংগার’স ল্যাকটেটেড (আরএল) স্যালাইনের ব্যবহার বন্ধ করার চেষ্টা করতে পারেন এমনকি একইটির উৎপাদন নিষিদ্ধ করার পরেও, কিন্তু নথিগুলি ভিন্ন গল্প বলে।’
তিনি আরও লিখেছেন,’পশ্চিম বঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড দ্বারা উৎপাদিত রিঙ্গার্স ল্যাকটেড (আরএল) এর ত্রুটিপূর্ণ ব্যাচ বন্ধ করার বিষয়ে গত ৭ই জানুয়ারীর আগে রাজ্য সরকারী হাসপাতালগুলিতে জারি করা কোনও সরকারী চিঠি বা মেমো দেখানোর জন্য আমি আপনাকে সাহস দিচ্ছি। অনুগ্রহ করে স্ট্যাম্প করা সময়ের কপি সরবরাহ করুন। ২০২৪ সালের ১৩ ই ডিসেম্বর থেকে আপনি কী করছিলেন যখন কর্ণাটক স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের রাজ্যে বিষাক্ত স্যালাইন সম্পর্কিত চারটি মৃত্যুর পরে আপনাকে সতর্ক করেছিল? আপনার স্বাস্থ্য সচিব এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দোষ। এটা তাদের পক্ষ থেকে অবহেলা। আপনার সিআইডি তাদের গ্রেপ্তার করবে এবং তাদের কোমরে ফাঁস বেঁধে ভবানী ভবনে টেনে নিয়ে যাবে। প্রতিবার বলির পাঁঠা খোঁজা বন্ধ করুন।’
এদিকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে মেয়াদ উত্তীর্ণ সেলাইনে প্রসূতির মৃত্যু ও গুরুতর অসুস্থ হওয়ার জেরে জুনিয়র চিকিৎসকদের অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে । মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমি নন্দী একটি নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছেন, এবার থেকে সার্জারি, অ্যানাস্থেসিয়া দেওয়ার প্রক্রিয়ায় কোনও পিজিটি যুক্ত থাকবেন না।।