এইদিন ওয়েবডেস্ক,সুন্দরবন(দক্ষিণ ২৪ পরগনা),০৯ জানুয়ারী : বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী বনভূমি অঞ্চল সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে সর্বদাই আকর্ষণীয় । বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালি ও বরগুনা জেলার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে এই বনাঞ্চল । বিশেষ করে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের সৌন্দর্যের টানে গোটা বছর জুড়ে পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে এখানে । শুধু সৌন্দর্যই নয়,প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে এলাকার বাসিন্দা ও পশুপাখিদের রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল । কিন্তু নির্বিচারে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় অশনি সঙ্কেত দেখছে এলাকার বাসিন্দারা । অভিযোগ উঠছে রাজ্যের শাসকদলের কিছু নেতারা অবৈধ ভাবে বিঘের পর বিঘা নদীর তীরে ম্যানগ্রোভ জঙ্গল কেটে মাছ চাষের ভেড়ী তৈরি করছেন । যে কারনে আশঙ্কা করা হচ্ছে ভবিষ্যতে চরম সঙ্কটে পড়তে পারেন এলাকার মানুষ । বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারে বাস্তুতন্ত্র । বহু জানা অজানা পশুপাখি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়তে পারে ।
সোমবার এনিয়ে একটি পোস্ট করেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভরতগড় অঞ্চলের আনন্দবাদ মুড়োখালি গ্রামের প্রায় ১২০০ বিঘা আয়তনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল কেটে মাছ চাষের ভেড়ী তৈরির অভিযোগ তুলেছেন এলাকার ৮ জন তৃণমূল কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে । শুভেন্দু অধিকারীর দেওয়া তালিকা অনুযায়ী অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের নাম আব্দুল মান্নাজ গাজী,নুরুইলাহী গাজী,আবেদা পারভিন,শ্রীদাম মণ্ডল,রফিকুল ইসলাম লস্কর, সাহাবুদ্দিন গায়েন,ইয়াসিন ঘরামি এবং জাকির হোসেন মোল্লা ।
শুভেন্দু অধিকারী কয়েকটি ছবিসহ তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন,’সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল পশ্চিমবঙ্গের উপকুলীয় অঞ্চলে বারংবার আছড়ে পড়া আয়লা, আমফান ও ইয়াস এর মত ঘূর্ণিঝড় এর মোকাবিলায় প্রতিরোধের প্রথম এবং মুখ্য প্রাকৃতিক প্রাচীর। ঝড়ের শক্তিকে অনেকটাই প্রতিহত করে ম্যানগ্রোভ। দুর্যোগ মোকাবিলায় পরিবেশবিদরা বারবার ম্যানগ্রোভ রোপণ ও পরিচর্যার কথা বলছেন ৷ সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র পরিবেশগতভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল। নিম্নচাপের জেরে একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের সময় প্রবল জলোচ্ছাসে প্লাবিত হয় সুন্দরবন। সুন্দরবনকে বাঁচাতে পারে একমাত্র ম্যানগ্রোভই এবং সুন্দরবন বাঁচলে ভারসাম্য বজায় থাকবে প্রকৃতির।’
এরপর তিনি লিখেছেন,’পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রায়শই দাবি করে যে ৫ কোটি ম্যানগ্রোভের চারা গাছ লাগানো হয়েছে, অথচ বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা মেলে না। খাতায় কলমে ১০০ দিনের কাজের টাকা চুরি করার উদ্দেশ্যেই এই ভুয়ো দাবি বলে মনে হয়। এদিকে আবার বাসন্তী থানার ভরতগড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আনন্দবাদ মৌজায় বিঘের পর বিঘা নদীর তীরে ম্যানগ্রোভ কেটে মাছ চাষের ভেড়ী/ফিসারী তৈরি হচ্ছে। তোলামূলি নেতাদের মদতে এই এলাকাতেই জমি মাফিয়ারা প্রায় ১২০০ বিঘা ম্যানগ্রোভ কেটে সাফ করে ফেলেছে। এরকম চিত্র পুরো সুন্দরবন জুড়েই দেখা যায় ।’
শুভেন্দুর অভিযোগ,’নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্যে অবিরত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল যথেচ্ছভাবে কেটে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করে নিজেদের পকেট ভরছে তোলামূলি নেতারা। উপকূলবর্তী এলাকায় মানুষের জীবন ও জীবিকার রক্ষার স্বার্থে এবং উপকূলীয় অঞ্চল সহ সমগ্র দক্ষিণবঙ্গের পরিবেশের অপরিমেয় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভের জঙ্গল কে রক্ষা করা ভীষন প্রয়োজনীয় ।’
পাশাপাশি তিনি বলেছেন,’আমি কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শ্রী ভুপেন্দ্র যাদব জীকে অনুরোধ করেছি এই গুরুত্বপূর্ন বিষয়টি অনুগ্রহ করে বিবেচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ।’ যদিও এখনো পর্যন্ত বিরোধী দলনেতার এই প্রকার গুরুতর অভিযোগের প্রত্যুত্তর পাওয়া যায়নি শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে ।।