প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৫ ডিসেম্বর : শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে জেরবার রাজ্য।তারই মধ্যে নিয়োগের দাবিতে পথে নেমে হবু শিক্ষকদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়াও অব্যাহত রয়েছে। এমন আবহের মধ্যেই পড়ুয়ার আকাল দেখা দেওয়ায় পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কপালে পড়ে গিয়েছে চিন্তার ভাঁজ। তাই নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে পড়ুয়ার সন্ধান পেতে টোটোয় চেপে গ্রামে গ্রামে ঘুরে হাঁক পাড়া শুরু করেছেন শিক্ষকরাই।তার সাথে তাঁরা তুলে ধরছেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলে পড়ুয়াদের প্রাপ্তি যোগের ফিরিস্তি।বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রেরণায় শিক্ষায় সুনামের অধিকারী হওয়া বাংলার শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীর আকাল দেখা দেওয়ার এমন ঘটনায় স্তম্ভিত শিক্ষাবিদরা।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ড সামনে আসার পর তার প্রভাব পড়ে রাজ্যের শিক্ষাঙ্গন গুলিতে। কোন স্কুলে তালা পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় শিক্ষকের অভাবে।আবার শিক্ষকের আকালে তালা পড়ে যেতে বসা কোন স্কুলের হাল ধরতে হয়েছে সেখানকার শিক্ষিত যুবক যুবতীদের । একজন বা দু’জন শিক্ষক মিলে একটা গোটা স্কুল চালাচ্ছেন,এমন নিদর্শনও ঝুড়ি ঝুড়ি রয়েছে।তবে শিক্ষক থাকতেও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার আকাল দেখা দেওয়ার ঘটনা কার্যতই নজিরবিহীন ।তবে হ্যাঁ,সেটাই ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি ২ ব্লকের বোহার পঞ্চায়েত এলাকার ১৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।আর পড়ুয়ার ঘাটতি মেটাতে সরকারী ওইসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সম্প্রতি যে কায়দায় গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রচারে চালান সেটা আরও নজিরবিহীন।
ভাড়া করা টোটোর মাথায় লাগানো হয় মাইক।সেই টোটোর পিছনে ঝোলানো থাকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলে পড়ুয়াদের কি কি প্রাপ্তি লাভ হব ,তার ফিরিস্তি সংক্রান্ত ফ্লেক্স। সেইসব টোটোয় চড়ে শিক্ষকরা বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘোরেন। তার সাথে মাইক ফুঁকে তাঁরা এলাকার প্রতিটি বাড়ির ছেলে মেয়েকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে আবেদন রেখে চলেন।পড়ুয়ার আকাল কাটাতে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এভাবে পথে নামতে দেখ বোহার ২পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই হতবাক হন।আবার কেউ কেউ শিক্ষকদের এমন ভূমিকায় দেখে প্রশংসাও করেন। তবে শিক্ষকদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষে বোহারের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলিতে পড়ুয়া ভর্তির হিড়িক পড়বে,এমন কোন আভাস অবশ্য এখনও পর্যন্ত মেলেনি।
পড়ুয়া পেতে এ ভাবে পথে নামতে হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন প্রচারে অংশ নেওয়া বোহারের সিতাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজকুমার চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান,“তাঁরা লক্ষ্য করছেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ক্রমশ কমছে।প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পর্কে সঠিক বার্তা অভিভাবকদের কাছে না পৌছানোয় তারা তাদের ছেলে মেয়েদের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।অথচ বেশির ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন।শিশুবান্ধব পরিবেশে ছেলে-মেয়েদের পড়ানো হয়।তার সাথে বিনামূল্যে বই,স্কুলের পোষাক ও জুতো পড়ুয়াদের দেওয়া হয়। রয়েছে মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা এবং বৃত্তিসহ নামান সরকারী সুবিধা“।এ গুলি নিয়ে অভিভাবকদের অবগত করতেই তাঁরা শিক্ষকরা মিলে গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রচার চালিয়েছেন বলে রাজকুমার বাবু জানান।একই সঙ্গে তিনি এও বলেন,প্রয়োজনে এমন প্রচার তাঁরা আগামীদিনে আরও চালাবেন । শিক্ষকদের পাশে দাড়িয়ে বোহার ২ পঞ্চায়েতের প্রধান মৌসুমী মাঝিও এলাকার অভিভাবকদের কাছে একই আবেদন রাখেন।তার সাথে তিনিও তুলে ধরেন, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলে পড়ুয়াদের কি কি প্রাপ্তি লাভ হবে তার ফিরিস্তি।
পড়ুয়ার আকাল কাটাতে বোহারের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য।তবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার নেপথ্য কারণ যে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের ঘাটতি তা সোমবার স্বীকার করে নেন মুধসূদন ভট্টাচার্য। একই সঙ্গে তিনি বলেন,আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলিতে শিক্ষক ঘাটতি পূরণ করতে না পারাটাই ,উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার মূখ্য কারণ। মামলার নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উদ্ভূত এই পরিস্থিতি থেকে যে রেহাই পাওয়া যাবেনা তা জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের কথাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
তবে চেয়ারম্যান এমনটা বললেও বিরোধী রাজনৈতিক দলের শিক্ষক সংগঠনের সদস্য শিক্ষকরা এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি। RSS পন্থী শিক্ষক সংগঠন ABRSM এর জেলার সদস্য মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, ‘ছিপের কাঁটায় টোপ লাগিয়ে পকুর থেকে মাছ ধরাযায়।কিন্তু শিক্ষকের অভাবে শিক্ষা দানের পরিকাঠানো ভেঙে পড়া স্কুলগুলি প্রাপ্তির টোপ দিয়ে যতই পড়ুয়া টানার চেষ্টা করক না কেন,তাতে সচেতন অভিভাবকরা কখনই সাড়া দেবেন না বলে মৃত্যুঞ্ছয় বাবু দাবি করেছেন। একই ধারণার কথাই বামপন্থী শিক্ষক সংগঠনের সদস্যদের কথায় প্রকাশ পেয়েছে।।