প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৫ জানুয়ারী : মিড-ডে মিলের খাবারে সাপ কিংবা ,টিকটিকি বা ইঁদুর, আরশোলার উপস্থিতি নিয়ে মাঝে মধ্যেই এই রাজ্যের কোন না কোন স্কুলে অশান্তি চরমে ওঠে। আর এবার সামনে আসলো আরো এক ভয়ংকর ঘটনা।দুর্দশায় জর্জরিত পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর পশ্চিম আটপাড়া প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা ফাঁকা মাঠে কুকুর ও ছাগলের সঙ্গেই মিড-ডে মিল খেতে বসতে বাধ্য হচ্ছে।আর তখনই হয় কুকুর নয়তো ছাগল পড়ুয়াদের পাতের উপর হামলে পড়ছে বলে অধিকাংশ পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল খাওয়াই হচ্ছে না। এ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিতে অভিভাবকরা স্কুলে গেলে শিক্ষকরা স্কুলের দুর্দশার দোহাই দিয়েই অভিভাবকদের শান্ত করেন। কিন্তু এই দুর্দশা কবে কাটবে তার কোন সূদুত্তর অভিভাবকদের আজও দিতে পারেননি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
পূর্বস্থলী-২ নম্বর ব্লকের এক প্রত্যন্ত গ্রাম লক্ষ্মীপুর ।এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষই কৃষিজীবী।
লেখাপড়া শেখার জন্যে এই গ্রামের খুদে পড়ুয়াদের ভরসা লক্ষ্মীপুর পশ্চিম আটপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।কিন্তু সেই স্কুলটি এখন আপাদমস্তক দুর্দশায় জর্জরিত ।স্কুলে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয় ঠিকই,তবে পড়ুয়ার অনুপাতে স্কুলে শ্রেণীকক্ষ নেই।সেই কারণে একটি শ্রেণীকক্ষেই দুটি ক্লাসের পড়ুয়াদের গাদাগাদি করে বসিয়ে শিক্ষকরা পাঠদান করেন। এত কিছুর পরেও স্কুলের হাল বদলানোর কোন উদ্যোগ গৃহীত না হওয়ায় হতাশ অভিভাবকরা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণগোপাল মণ্ডলের কথা অনুযায়ী,“তাঁর স্কুলে প্রি-প্রাইমারী থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৬ টি ক্লাসের পঠন পাঠন হয়।
কিন্তু স্কুলে শ্রেণীকক্ষ রয়েছে মাত্র ৪ টি।তার মধ্যে একটি শ্রেণীকক্ষ একেবারে ভগ্নপ্রায় । ওই শ্রেণী কক্ষের দেওয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল । ওই ফাটল দিয়ে বাইরের আলো শ্রেণীকক্ষে এসে পড়ে
। ওই শ্রেণীকক্ষটি কার্যত বিপদজনক অবস্থাতেই রয়েছে।
স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকরা একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে শুক্রবার বলেন,’স্কুলের শ্রেণীকক্ষের দেওয়ালের যা অবস্থা তাতে ওই শ্রেণীকক্ষের দেওয়াল ভেঙে পড়ে পড়ুয়াদের বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।স্কুলের সৌচাগারের অবস্থা নিয়ে যত কম কথা বলা হয় ততই ভালো। এমনকি স্কুলের পড়ুয়াদের পরিচ্ছন্ন জায়গায় বসে মিড-ডে মিল খাওয়ার উপযুক্ত কোন ব্যবস্থাও পর্যত নেই । তাই স্কুলের সামনের ফাঁকা মাঠে ছাগল ও কুকুরের সঙ্গেই পড়ুয়ারা দিনের পর দিন মিড-ডে মিল খেতে বাধ্য হচ্ছে । অথচ সরকারী নিয়মে বলা আছে, স্কুলে পরিচ্ছন্ন জায়গায় স্বাস্থবিধি মেনেই পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে ।’ সে সবের ব্যাপারে শুধু উদাসীনতাই দেখানো চলছে বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন ।
অভিভাবকদের আনা অভিযোগের সত্য রয়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক
কৃষ্ণগোপাল মণ্ডল। একই সঙ্গে তাঁর সাফাই,স্কুলের দুরাবস্থার সবিস্তার তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রেখেছেন। অভিভাবকরা বলেন ,এইভাবে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না । তা আমরা চাই স্কুলের পড়ুয়াদের স্বার্থে সরকার ও প্রশাসন
এই স্কুলটির হাল ফেরাতে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা নিক।যদিও অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক উজ্বল রায় জানিয়েছেন,’হ্যাঁ, এটা ঠিক স্কুলটিতে সমস্যা রয়েছে।তার রিপোর্ট জেলাতেও পাঠানো রয়েছে।’
আর ফাঁকা মাঠে কুকুর ও ছাগলের সঙ্গে ওই স্কুলের পড়ুয়াদের মিড ডে মিল খেতে বসতে বাধ্য হওয়া প্রসঙ্গে বিদ্যালয় পরিদর্শকের ব্যাখ্যা,শীতের সময় বলেই হয়তো এমনটা হয়েছে।তবে আর যাতে
এমনটা না হয় সেকথা স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ।
এমন দুর্দশার মধ্যে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল খেতে বসার ঘটনা জেলায় এই প্রথম পূর্বস্থলীর পশ্চিম আটপাড়া প্রাথমিক স্কুলেই ঘটলো এমনটা নয়। ইতিপূর্বে জেলার জামালপুর ব্লকের চক্ষণজাদি গোলাম মহম্মদ ইনস্টিটিউশনে। তা নিয়ে তখন ব্যাপক হইচই পড়ে গিয়েছিল। সেই খবর প্রকাশ হতেই নড়ে চড়ে বসে জেলা প্রশাসন জেলার স্কুল শিক্ষা দফতর । ফাঁকা মাঠে কূকুর ছাগলের সঙ্গে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল খাওয়া বন্ধে কড়া বার্তা দেওয়া হয় চক্ষণজাদি গোলাম মহম্মদ ইনস্টিটিউশন কর্তৃপক্ষকে।এবার পূর্বস্থলীর পশ্চিম আটপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের স্বার্থে
জেলা প্রশাসন কি ব্যবস্থা নেই সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এদিকে পূর্বস্থলীর পশ্চিম আটপাড়া প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের এমন দুর্দশার কাহিনী জেলার রাজনৈতিক মহলেও তোলপাড় ফেলে দিয়ে। এমন ঘটনার জন্যে বিরোধীরা একযোগে এই রাজ্যের
সরকার ও স্কুল শিক্ষা দফতরকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,“দুর্নীতির অভিযোগে এই রাজ্যের গোটা শিক্ষা দফতরটাই এখন জেলে। এমন সরকারের রাজত্বে শুধু স্কুল গুলিই ভগ্ন রুপ পাচ্ছে তা নয়। কুকুর ও ছাগলের সঙ্গে মিড-ডে মিল খেতে বসাটাই বাংলার স্কুলের পড়ুয়াদের ভবিত্যব্য হয়ে গিয়েছে ।’ একই রকম তীর্যক কটাক্ষ করেছে বামেরাও । যদিও পূর্বস্থলীর তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, বিরোধীরা বাংলার ভালো কিছু দেখতে পায়না । ওরা শুধু সমালোচনাতেই আছে । একই সঙ্গে তপন বাবু বলেন,“স্কুল ঘরের বেহাল অবস্থার কথা কোনদিনও আমায় জানায় নি পশ্চিম আটপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জানালে নিশ্চই কিছু একটা ব্যবস্থা করতে পারতাম। বিধায়ক এও বলেন,ওই স্কুলের পড়ুয়ারা ফাঁকা মাঠে কুকুর ও ছাগলের সঙ্গে মিড- ডে মিল খেতে বাধ্য হচ্ছে ,এমন খবর আমার কাছে নেই ।।