প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৩ জানুয়ারি : বিয়ে না হওয়া সত্ত্বেও কনাশ্রী ভাতা পাবার জন্য আবেদনকারী বিবাহিত বলে মনগড়া রিপোর্ট দিয়ে দেন বুথ লেবেল অফিসার।আর সরকারী দফতরে জমাপড়া এমন ভুয়ো রিপোর্টের জন্যই কন্যাশ্রী ভাতা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হল এক ছাত্রী। সরকারী কাজে আধিকারিকের গাফেলতির এমন নজিরবিহীন ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে। ঘটনার বিহিত চেয়ে ছাত্রী মণিমালা মণ্ডল নিজেই বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগ পাবার পরেই নড়ে চড়ে বসেছেন ব্লক প্রসাসনের কর্তারা।শুরু হয়েছে ভুল শুধরে ওই ছাত্রীকে কন্যাশ্রী ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রক্রিয়া ।
ছাত্রী মণিমালা মণ্ডলের বাড়ি জামালপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতর উত্তর মোহনপুর গ্রামে । তাঁর বাবা বিশ্বনাথ মণ্ডল পেশায় ফুচকা বিক্রেতা।
মা পূর্ণিমাদেবী সাধারণ গৃহবধূ।দাদা মহাদেব মণ্ডল টোটো চালান।এমন অভাবি পরিবারের মেয়ে মণিমালা ছোট বয়স থেকেই লেখাপড়ার প্রতি অত্যন্ত সচেতন।জামালপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে সফল ভাবে মাধ্যমিক পাশ করার পর সে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়ার জন্য
জামালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।২০২১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর মণিমালা
এখন জামালপুর মহাবিদ্যালয়ে বি.এ প্রথম বর্ষে পাঠরত। কন্যাশ্রী ভাতা পাবার জন্য
২০২০ সালে সে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে আবেদন করে। সহপাঠীরা সকলে কন্যাশ্রী ভাতা পেয়ে গেলেও বঞ্চিত রয়ে থাকে মণিমালা । কি কারণে কন্যাশ্রী ভাতা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হল তা জানতে কয়েকদিন আগে মণিমালা বিডিও অফিসে যায়। ব্লকের কন্যাশ্রী আধিকারিকের মুখ থেকে সব ঘটনা শোনার পর তাঁর মাথায় হাত পড়ে যায় ।
বিডিওকে লিখিত ভাবে মণিমালা জানিয়েছে,
২০২০ সালে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সে কন্যাশ্রী ভাতা পাবার জন্য আবেদন করে । কিন্তু সে ভাতার টাকা পায়না। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে সে ২৭ ডিসেম্বর ব্লকের কন্যাশ্রী বিভাগের আধিকারিকের কাছে যায়।ওইদিন কন্যাশ্রী আধিকারিক তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন,তাঁর বিয়ে হয়ে গেছে বলে রিপোর্ট জমা পড়েছে । তাই সে আর কন্যাশ্রী ভাতা পাবে না’ । মণিমালা ওই দিনই বিডিওকে জানায় , তাঁর বিয়েই হয় নি ।মিথ্যা রিপোর্ট তাঁর সম্পর্কে সরকারী দফতরে পেশ করা হয়েছে ।রিপোর্ট যে সম্পূর্ণ মিথ্যা সেই কথা মণিমালার বাবা বিশ্বনাথ মণ্ডল ও এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য রুপালি বিশ্বাসও লিখিত ভাবে বিডিও কে জানিয়ে দিয়েছেন। পঞ্চায়েত সদসের দাবি করেছেন,’এমন রিপোর্ট কে, কি উদ্দেশ্যে দিয়েছে তার তদন্ত হওয়া দরকার’। জামালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটির সভাপতি অঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন ,’আমরাও বিদ্যালয়ের তরফে খোঁজ নিয়ে দেখেছি ছাত্রীটির আদৌ বিয়ে হয় নি। তা সত্ত্বেও কাদের মাধ্যমে এমন রিপোর্ট জমা পড়লো সেটাই আশ্চর্যের ।’
বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার জানিয়েছেন , ’কন্যাশ্রী ভাতা পাবার জন্য আবেদনকারী ছাত্রী মণিমালা মণ্ডলের বিয়ে হয়ে গেছে বলে ’বুথ লেবেল অফিসারের’( বিএলও)তরফে রিপোর্ট জমা পড়ে ।সেই কারণে ছাত্রীর আবেদন ক্যানসেল হয় । তবে ছাত্রীর অভিযোগ জমা পড়ার পড় বিভিন্ন ভাবে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গিয়েছে যে রিপোর্ট জমা পড়েছিল তা সঠিক নয় । ছাত্রীটি যাতে কন্যাশ্রী ভাতা পেতে পারে সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ।’।