প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৮ নভেম্বর : মহিলা মহলে এখন তুঙ্গে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের জনপ্রিয়তা । দুয়ারে সরকারের শিবির শুরু হতেই তার সূযোগ নিয়ে ফায়দা লোটা শুরু করে দিয়েছেন কিছু অসাধু ব্যক্তি।আর সেটা যে নিছক কথার কথা নয়,তা পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ঘটনাই স্পষ্ট করে দিয়েছে । সোমবার মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েতের পিন্ডিরা স্কুলে হয় দুয়ারে সরকার শিবির।সেই শিবিরের লাগোয়া মুদিখানা দোকান থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ফর্ম বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক ব্যবসায়ীর বিরূদ্ধে।যা জানার পর প্রশাসনিক কর্তারও নড়ে চড়ে বসেছেন । শুরু হয়েছে ঘটনার তদন্ত । কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শুনিয়েছেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী
মঙ্গলকোটের বিডিও জগদীশ বারুই স্পষ্ট জানিয়েছে, ‘দুয়ারে সরকারের শিবিরে বিভিন্ন প্রকল্পের পর্যাপ্ত পরিমাণে ফর্ম রয়েছে। অর্থের বিনিনয়ে এই ফর্ম কেউ বিক্রি করতে পারে না ।ফর্ম বিক্রির যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।কেউ সরকারি প্রকল্পের ফর্ম বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যদি সরকারি দপ্তরের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকেন,তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নেওয়া হবে ।’
রাজ্য জুড়ে ১ নভেম্বর থেকে শুর হয়েছে দুয়ারে সরকারের শিবির ।ব্লক প্রশাসনের নির্দিষ্ট করে দেওয়া দিনে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় হচ্ছে দুয়ারে সরকারের শিবির । সেই মতো সোমবার মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েতের পিন্ডিরা স্কুলে দুয়ারে সরকারের শিবির বসে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার
প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার ফর্ম তলা ও জন্য দেওয়ার জন্য সেই শিবিরে নজরকাড়া ভিড় থাকে মহিলাদের। তুলনামূলক ভাবে কম থাকে অন্য প্রকল্পের ফর্ম তুলতে আসা মানুষজনের সংখ্যা । পিন্ডিরা স্কুলে দুয়ারে সরকারের শিবিরে আসা অনেকে অভিযোগ করেন,কোন এক অজ্ঞাত কারণে পঞ্চায়েত কর্মীরা তাঁদের ব্যাগে ভরে রাখেন বিভিন্ন প্রকল্পের ফর্ম।ফর্ম চাইতে গেলে পঞ্চায়েত কর্মীরা উপভোক্তাদের ফিরিয়ে দেন,এমন অভিযোগও উঠেছে। উপভোক্তাদের বক্তব্য সেই কারনে নিখরচায় ফর্ম না পেয়ে তাঁদের ৫-১০ টাকা ব্যায় করে শিবিরের উল্টোদিকের মুদিখানা দোকান থেকে ফর্ম কিনতে হয়েছে। ওই মুদিখানা দোকানে সারদিয়ে সাজানো আছে স্বাস্থ্যসাথী, রেশন কার্ড সংশোধন, মানবিক ভাতা, বিধবা ভাতা সহ সরকারি ২৮ টি প্রকল্পের ফর্ম। যার যা ফর্ম দরকার, মুদিখানা দোকানদারকে বললেই তিনি ৫-১০ টাকার বিনিময়ে তা দিয়ে
দেন।ওই ব্যবসায়ী অন্য সব প্রকল্পের ফর্মের দাম ৫ টাকা নিলেও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ও স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের ফর্মের দাম ১০ টাকা নেন। কি করে সরকারী প্রকল্পের ফর্ম মদিখানা দোকান মালিকের কাছে পৌছালো সেই প্রশ্নও তুলেছেন ক্ষুব্ধ উপভোক্তারা ।
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোকান মালিকের বক্তব্য,এই প্রথম তিনি সরকারী প্রকল্পের ফর্ম বিক্রি করলেন এমনটা নয় । দুয়ারে সরকারের শিবির যবে থেকে শুরু হয় তখন থেকেই তিনি ফর্ম বিক্রী করছেন । যদিও শিবিরের দায়িত্বে থাকা পঞ্চায়েত কর্মী আবদুল আজিম এইসব অভিযোগ মানতে চান নি। তিনি দাবি করেন,লাইনে দাঁড়াতে হবে বলে ,কেউ যদি বাইরে থেকে ফর্ম কেনেন আমাদের আর কি করার আছে ।
রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার এই বিষয়ে মঙ্গলবার জানিয়েছেন,কোথাও যদি কোন ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে সরকারী প্রকল্পের ফর্ম বিক্রি করেন তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা প্রশাসনকে বলবে । তবে এই কথাও ঠিক লাইনে একটু দাঁড়াতে হবে বলে যাঁরা টাকা দিয়ে ফর্ম কিনছেন তাঁরা আখেরে ওই অসাধু ব্যক্তিকেই মদত যোগাচ্ছেন । যে কোন সরকারী প্রকল্পে আবেদন করার ফর্ম রাজ্য সরকার যে বিনা মূল্যে দিয়ে থাকে তা কারুর অজান থাকার কথা নয়।কোন অসাধু ব্যক্তি সরকারী প্রকল্পের ফর্ম বিক্রি করছেন ততক্ষণাত বিষয়টি প্রশাসধকে জানানোর পরামর্ম দেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী ।।