-‘রোজ বিকেলে আতর ঢেলে তোকে সাজাবোই
মেলায় যাবো রিক্সা চড়ে, বসবি পাশে তুই
বন্দি আছে হাজার আশা বুকের মাঝে দেখ
একটু চিনে নিলেই হবো দুজন মিলে এক।’
-‘তবু স্বপ্নেরা মুখ তোলে না……..’
তিয়াসা আর হিম একসাথে গলা মেলালো।
তিয়াসা গুহ আর হিমাদ্রী বসু দুজনেই বেস্ট ফ্রেন্ড। পারিবারিক সম্পর্কও গভীর।
-‘হিম সামনে আমাদের পাড়ার বিজয়া সম্মিলনী আমার সাথে গান গাইবে!’
-‘তিয়া মন্দ হবে না জমে যাবে। তুমি বিয়ের পর গানটা কিন্তু কন্টিনিউ করবে, এটা আমার ইচ্ছা।’
-‘হ্যাঁ গাইবো, কিন্তু তোমাকেও আমার সাথে গাইতে হবে প্রিয়।’
তিয়ার সাথে হিমের বিয়ে হয়েছে প্রায় এক বছর হয়ে গেছে। হিমের ছোট ভাইয়ের নাম নীল ওরফে নীলাদ্রী। ওর হবু বউয়ের নাম অন্বিতা।
-‘ভাইয়া তোমার হবু বৌকে ফোন করছি। আজ শপিং এ যাবো।’
-‘বৌমণি বেশ বেশ।’
-‘আমরা চারজনে যাবো, দারুণ মজা হবে।’
কথা শেষে তিয়া রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায়। হিমাদ্রীর বাবা খুব ছোট বেলায় মারা গিয়েছেন। তাই এ বাড়িতে ওর মায়ের কথাই শেষ কথা।
-‘বৌমা একবছর হলো এবার একটা বাচ্ছা না হলে লোকে কি বলবে!’
-‘মা এ কেমন কথা বলছেন?’
-‘আহা তোমাদের ভালোর জন্যই বলছি।’
তিয়াসা কথা না বাড়িয়ে রান্না শেষে নিজের ঘরে গেলো।
হিম গিটার নিয়ে গান তুলছে একটা। পিছন থেকে তিয়া এসে গলা মেলালো,
-‘কান্না জড়ানো গলায় গান! তিয়া কি হয়েছে?’
-‘কিছু না।’
কথা শেষে হিম তিয়াকে বুকে টেনে নেয়।
নীলাদ্রী আর অন্বিতার বিয়ের পাঁচ মাস হয়ে গেছে। হঠাৎই হার্ট অ্যাটাকে নীল মারা যায়। দিন এগোতে থাকে।
তিয়া, হিমের ব্যবহারে বিস্তর পরিবর্তন লক্ষ্য করে। ও আর ওর মা মোহনাদেবী অন্বিতাকে নিয়ে সর্বদা ব্যস্ত থাকে। তিয়া প্রথম প্রথম ব্যাপারটায় পাত্তা না দিলেও সময়ের সাথে সাথে বুঝতে বাকি থাকে না যে হিম অন্বিতার প্রতি আকৃষ্ট আর হিমের মা,ও চাইছেন দুজনে কাছাকাছি আসুক।
-‘তিয়াকে ডিভোর্স দিয়ে অন্বিতাকে বিয়ে কর বাবা তুই। ও আমার মনের মত বৌমা।’
-‘ হ্যাঁ মা আমিও তাই ভাবছি।’
মা, ছেলের সব কথা শুনে নেয় তিয়াসা। ওর চোখে জল আসছে এই ভেবে শুনেছিল “ঘরশত্রু বিভীষণ” আজ তার প্রমাণ স্বচক্ষে পেয়ে গেলো।
ডিভোর্সের পর হিম পুনরায় অন্বিতাকে বিয়ে করে। সুখে সংসার করছে।
এদিকে তিয়া শহর ছেড়ে অনেক দূরে পাড়ি দিয়েছে।
হিমের মা মোহনাদেবীর শখ পূরণের জন্যে অন্বিতা দুই সন্তানের মা।
হঠাৎ একদিন,
-‘আমি কাল রাতে ফিরবো না।’
-‘কেনো হিম কোথায় যাবে?’
-‘বল্লমপুরের রাজবাড়ী দেখতে যাবো প্রিয়মের সাথে।’
-‘প্রিয়ম ঠাকুরপোর সাথে! পিসিমণিরা কেমন আছেন?’
হিম অন্বিতার কথায় উত্তর না দিয়ে সোজা মায়ের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।
পাঁচ মিনিট পরে,
-‘হিম দেখ তিয়া টিভির রিয়্যেলিটি শো এর পার্টিসিপেট। কি ভালো গাইছে।’
হিম টিভির পর্দায় চোখ রাখলো। কি অপূর্ব লাগছে তিয়াসাকে।
‘ইয়ে মোহ মোহ কে ধাগে তেরি উঙ্গলি ও সে যা উলঝে! হ্যায় রোম রোম ইকতারা…’
গানের শেষে বিচারকরা উচ্ছ্বসিত হয়ে ভালো ভালো মন্তব্যে ভরিয়ে দেয়।
হিম মনে মনে আফসোস করছে যদি ও আজ তিয়াকে ডিভোর্স না দিতো!
সেদিন রাতে,
-‘তুমি তিয়াসার সাথে আবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করছো?’
-‘দেখো অন্বিতা তুমি খুব অপয়া, মা বলেছে তোমাকে ডিভোর্স দিতে।’
অন্বিতা স্তম্ভিত। আজ খুব মনে পড়ছে তিয়াসার বলা কথাগুলো-
‘অন্বিতা তুমি আজ যে সুখ সাগরে নিমজ্জিত হয়ে হিমকে আপন করছো, সেই হিমাদ্রীই দেখবে তোমাকেও ছেড়ে দেবে ওর মায়ের কারণেই যিনি আদতে নিজের ইগো ও অন্ধ স্নেহের জন্যে ছেলের সুখকে বলি করতে পিছপা হবেন না। উনিই ঘরশত্রু বিভীষণ।’।