দীর্ঘ লক ডাউনের পর পৃথিবী ছন্দে ফিরেছে । করোনা ভাইরাস কে সম্পূর্ন ভাবে নির্মূল করতে না পারলেও তাকে অনেক টা কন্ট্রোল করা সম্ভব হয়েছে । এ বিষয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছে ভারতবর্ষ । ভারতবর্ষই সর্ব প্রথম কবিড – 19 এর জীন বিন্যাস করে ভ্যাকসিন আবিস্কার করেছে । যার ফলে করোনা আর কোনো মতে মানুষ কে আক্রান্ত করতে পারবে না । আর যে সংস্থা এই ভ্যাকসিন আবিস্কার করেছে তার অন্যতম প্রধান সদস্য হিসাবে অনিকেত নিজেকে বেশ গর্বিত মনে করে ।
অনিকেত গত কাল স্পেন থেকে ইংল্যান্ড এর লিভারপুলে এসেছে । আজ সন্ধ্যায় ইংল্যান্ড এর রানীর আয়োজিত ভোজ শোভাতে তার যোগ দেওয়ার কথা । তার পর মধ্য রাতের ফ্লাইটে প্রথমে দিল্লি যাবে ওখানে প্রধান মন্ত্রী তার সাফল্যে একটি বিশেষ সম্বর্ধনা সভার আয়োজন করেছেন । পর দিন অনিকেত J. N. U. যাবে । ওখানে করোনা ভাইরাস এর ভ্যাকসিন সমন্ধে একটি সেমিনারে যোগ দেবে । তারপর নিজের কর্মক্ষেত্র কলকাতা ফিরবে অনিকেত । আগে থেকেই সব সিডিউল করা আছে।
অনিকেত যখন লন্ডন সাউথ এন্ড বিমানবন্দর এ
পৌঁছালো তখন রাত 1 টা বাজে 1.45 a.m । ফ্লাইট এরই মধ্যে সে দেশের ভারতীয় এম. বি. সি. তাঁকে ফুলের স্তবক দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে । অনিকেত ফ্লাইটে উঠে নম্বর মেলাতে যাবে এমন সময় কে যেনো অনিকেত অনিকেত বলে ডেকে উঠে । অনিকেত তাকিয়ে দেখে ঠিক চিনতে পারে না..
আমি রিমা চিনতে পারছিস ?
অনিকেত বেশ অবাক হয়ে বলে তুই !
রিমা-দেশে ফিরছি ।
অনিকেত বলে মানে !
আরে বলবো আগে সিটে বসতো ।
অনিকেত সিট নম্বর মিলিয়ে রিমার পাশে বসে ।
–তুই তো অনেক বড় বিজ্ঞানী হয়ে গেছিস বহুদিন পরে ভারত থেকে কেউ নোবেল প্রাইজ পেলো । বেশ ভালো লাগলো গর্ব বোধ হচ্ছে বন্ধু হিসাবে ।
শুধু মাত্র বন্ধু ! বলে তাকাল অনিকেত ।
—না মানে বন্ধুর বেশি কি করে বলি বল ?
অনিকেত এক টু অন্যমনস্ক হয়ে পড়লো । বেশ মনে আছে অনিকেত তখন আশুতোষ কলেজে বায়লোজিতে অনার্স করছে আর রিমা ফিজিক্স এ তাই কি দেমাক । এক দিন তো বলেই দিল যারা ফিজিক্স, ক্যামেস্ট্রি, ম্যাথ এ অনার্স পায় না তারা বায়োসায়েন্স নিয়ে পড়ে । তবুও রিমার প্রতি এক টা দুর্বলতা ছিল সেটা বার বার অনিকেত অনুভব করতো ।
রিমা বলল কি রে তোর মনটা কোথায়? এদিকে আমি বকে যাচ্ছি ।
অনিকেত বলে, বল তোর খবর কি ?
রিমা–কি আর খবর অনার্স করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে M. SC. তার পর ট্রাইফেল দিয়ে সোজা U. K. ওখানে পিএইচডি করে আর ফেরা হলো না ।
কেন ?
কেন আবার মোহ রে মোহ ।
মানে!
তার পর অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি তে পোষ্ট ডক্টরেট করতে করতে এক জন ম্যানচেস্টার এর প্রফেসর এর সঙ্গে পরিচয় প্রেম তার পর বিয়ে । আর বিয়ের পর পর ই ডিভোর্স, দু বৎসর হবে হয়তো।
কেন?
আরে ওরা সাহেব মানুষ সম্পর্ক এর মুল্য অনুভূতির মুল্য ওরা কি আর বুঝবে ।
ও ! অনিকেত কিছু এক টা বলতে যাচ্ছিল রিমা ওকে বলে আমার কথা থাক তুই তো এখন পৃথিবী বিখ্যাত । চারদিকে অনিকেত ভট্টাচার্যের নাম৷। তোর কথা বল ।
অনিকেত বলল আমার আর কি কথা B. SC. করে JNU থেকে M. SC. তার পর কানপুর I. I. T. থেকে মাইক্রো বাইলোজিতে M. Tac. করে বেঙ্গল কেমিক্যাল এ সায়েন্টিস্ট হিসাবে কাজে যোগ দিলাম।
তার পর ?
বেঙ্গল কেমিক্যাল এ কিছু গবেষণা আর সময় পেলে লেখা লেখি এ ভাবেই জীবন চলছিল । করোনা ভাইরাস জীবনের গতি টা কে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিল। করোনা তে বাবা মারা যাবার পর থেকেই মানুষ কে বাঁচাতে একটা জিদ চেপে বসে ছিল আমার তার ফল এই ভ্যাকসিন । বাকি টা তো জানিস ।
রিমা– সেটা তো আমি জানি কিন্তু তোর ঘর সংসার সম্পর্ক এ খুবই জানতে ইচ্ছে করে..
অনিকেত বলে যেদিন B. Sc. রেজাল্ট বের হলো সেদিন তোকে বলে ছিলাম আমি তোকে ভালোবসি আর তুই কি বলেছিলি মনে আছে ?
রিমা কিছু বলতে চাই ছিল..
অনিকেত বলল তুই বলে ছিলি দর্জির ছেলে হয়ে তোর মতো ডাক্তারের মেয়ে কে প্রেমের প্রস্তাব দিলাম কি করে । আগে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আয় তার পর ভেবে দেখতে পারি ।
রিমা বলে আমাকে ক্ষমা করে দে ওটা কম বয়সের ভূল ছিল আজ আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ।
অনিকেত বলল আমি সেদিন ই প্রতিজ্ঞা করে ছিলাম আমাকে কিছু এক টা করতে হবে তোর ওই অবজ্ঞা আমাকে রাতের পর রাত ঘুমোতে দেয়নি..
আর ঘর সংসার বলতে আমার এক টা N. G. O আছে সেখানে আমার মত দর্জির ছেলে, মুচি, হকারের গরীব ছেলে মেয়ে বিনা পয়সায় পড়া শোনা করে । ওটা ই আমার সংসার ।
রিমার চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে । রিমা অনিকেতের হাতটাকে নিজের দু হাতের মাঝে চেপে ধরে বলে ক্ষমা করে দে আমি তোর ভালোবাসা কে বুঝতে পারি নি । আর যখন বুঝলাম তখন তোর কাছে ফিরে যাওয়ার মুখ ছিলো না ।
অনিকেতের শরীর টা ক্রমশ অবশ হয়ে যাচ্ছে । এ ই চল্লিশে সে প্রথম কোনও নারীর পরশ অন্তর থেকে অনুভব করছে ।
অনিকেত নিজেকে সামলে নিয়ে বলে তা তুই কোথায় যাবি ?
বাড়ি ফিরব, কলকাতায়. তবে !
তবে কি ?
তবে বাড়িতে আর কেউ নেই বাবা প্রায় দশ বছর হলো মারা গেছে আর গত বছর মা ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে ।
এ ই বলে রিমা বাচ্চা মেয়ের মত কেঁদে বলল আমার আর কেউ নেই অনিকেত । কেউ নেই……
অনিকেত রিমা কে বুকে টেনে নিয়ে ভেজা গলায় বলল আমি তো আছি……..