এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,০৬ ডিসেম্বর : রাজ্যে বিধানসভার ভোটের আগে ধর্মস্থল নিয়ে রাজনীতির সূচনা করেছে তৃণমূল । মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ূন কবির আজ বেলডাঙ্গায় “বাবরি মসজিদ”-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে চলেছেন । তার আগেই গতকাল রাজ্যসভায় মালদার “আদিনাথ মন্দির” পুনরুদ্ধারের দাবিতে সরব হলেন সংসদ শমীক ভট্টাচার্য । উল্লেখ্য,এই “আদিনাথ মন্দির” ভেঙেই ইসলামি হানাদাররা “আদিনা মসজিদ” নির্মান করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে । শমীক ভট্টাচার্য বলেন,মন্দির হওয়ার সমস্ত প্রমান আছে । ওখানে ভগবান গনেশের মুর্তিতে শয়তান আখ্যা দিয়ে পাথর ছোড়া হচ্ছে,এদিকে বাবরি মসজিদ নির্মান করা হচ্ছে ।
বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য আগেই বলেছিলেন যে তৃণমূল যদি বাবরি মসজিদ নির্মান নিয়ে রাজনীতি করে তাহলে মালদার আদিনাথ মন্দিরের পুনরুদ্ধারের দাবি তুলবে বিজেপি। উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গায় হুমায়ূন কবিরের বাবরি মসজিদ নির্মানের ঘোষণাকে মমতা ব্যানার্জির ভোটব্যাংকের রাজনৈতির জন্য “গোপন চিত্রনাট্য” বলে মনে করছে বিজেপি । শুভেন্দু অধিকারী, শমীক ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে বিজেপি নেতারা এনিয়ে খোলাখুলি মতামত প্রকাশ করেছেন । তারই পালটা মালদার আদিনাথ মন্দির পুনরুদ্ধারকে ইস্যু করছে বিজেপি ।
শুক্রবার রাজ্যসভায় শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘মালদার আদিনা মসজিদ নয়, আদিনাথ মন্দির । আজ যারা আদিনাথ মন্দিরকে আদিনা মসজিদ বানিয়ে সিদ্ধিদাতা গণেশকে শয়তান বলে পাথর ছুঁড়ে ভাবছে স্বর্গলাভ হবে, তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছে।’ তিনি বলেন,’কোনও মন্দির-মসজিদের লড়াই নয়। কোনও হিন্দু-মুসলমানের বিভাজনের বিষয় নয়। কিন্তু, কী ঘটেছিল ? মালদা জেলার পাণ্ডুয়ায় ব্রিটিশদের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন জিতু সান্থাল। ওঁর লক্ষ্য এটাই ছিল যে, সন্ন্যাসীর দলের সাহায্যে আদিনাথ মন্দির পুনরুদ্ধার করবেন। আর আজ কী হচ্ছে ! এটা ঐতিহাসিক তথ্য, প্রখ্যাত ওরিয়েন্টালিস্ট (প্রাচ্যবিদ) জে ডি বিগলার, মালদার কালেক্টর জে এইচ রবিন শাহ ১৮৬৫ থেকে ১৮৬৭ সালে তাঁরা…বিভিন্ন ধরনের প্রমাণ নথিভুক্ত করেছিলেন, যে তথ্য দাবি করে যে সেখানে হিন্দু মন্দির ছিল। মন্দিরের কাঠামোয় খদিত দেবদেবীর মূর্তি ও প্রতীক আজও তার প্রমান বহন করে চলেছে৷’
তিনি বলেন, “এই ভাবে কতদিন চলতে পারে ! আমরা ইতিহাসকে মুছে দিতে পারি না। আমরা আমাদের রীতি-নীতি, সংস্কারকে ত্যাগ করতে পারি না। কিন্তু, এটাই পশ্চিমবঙ্গে হয়ে আসছে। এখন সেখানে ‘বাবরি মসজিদ’ তৈরি করার তোড়জোড় চলছে। আর আদিনা মসজিদ নয়, ওটা আদিনাথ মন্দির। এর ঐতিহাসিক প্রমাণ রয়েছে। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের(ASI)নথি রয়েছে। মন্দির পুনরুদ্ধার করতে দেওয়া উচিত। সেটির উপর গবেষণা হওয়া উচিত। সমস্ত হিন্দু সংস্কৃতির প্রমাণ রয়েছে। পদ্মফুল, জনিপীঠ, শিবলিঙ্গ, লক্ষ্মী ঠাকুরের হাত,সব মুছে ফেলা হচ্ছে। সেটা বন্ধ করা উচিত। সরকারের কাছে আমাদের আর্জি, সেটাকে রক্ষা করা উচিত।’
জিরো আওয়ারে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য রাজ্যসভার সেক্রেটারি জেনারেলকে যে চিঠি পাঠিয়েছেন শমীক ভট্টাচার্য, সেখানে তিনি লিখেছেন, আমি মালদার পাণ্ডুয়ায় ঐতিহ্যবাহী স্থান নিয়ে জরুরিভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। যেটি সাধারণত আদিনা মসজিদ হিসেবে পরিচিত। ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, এখানে প্রাচীন হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরের উপাদান রয়েছে। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অধীনে থাকা স্মৃতিসৌধ কয়েক দশক ধরে আংশিক অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই কেন্দ্রীয় সরকারে কাছে কিছু দাবি রেখেছেন শমীক ভট্টাচার্য । সেই সঙ্গে হুমাযুন কবীরের প্রস্তাবিত ‘বাবরি মসজিদে’রও বিরোধিতা করেছেন তিনি । মূলত “বাবরি” নামে বিরোধিতা করেছেন তিনি ।
এদিকে আদিনাথ মন্দিরের পুনরুদ্ধারের দাবি তোলার সময় প্রবল বিরোধিতা করেছে তৃণমূল । তৃণমূল সাংসদ সাগরিকা ঘোষ,দোলা সেনরা প্রবল হট্টগোল শুরু করে শমীক ভট্টাচার্য কথা বলার সময় । তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন বলেন,’মানুষের চোখ ঘোরাবার জন্য অকারণ মন্দির-মসজিদ ইস্যু করবেন না।’ তার কথায়, ‘মানুষের চোখ ঘোরাবার জন্য মন্দির-মসজিদ এই সব নন-ইস্যুকে নিয়ে আসছে । কোথায় আদিনা মসজিদ ছিল, আদিনাথ মন্দির। এইসব হাবিজাবি অ্যাজেন্ডা করছেন। সেই জন্য আমরা প্রতিবাদ করছিলাম। যে আগে মানুষকে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংবিধান অনুযায়ী যেটা আমার মৌলিক অধিকার, সেটা মানুষকে দিন।’।
রাজ্যসভায় শমীক ভট্টাচার্য্যের বক্তব্যের ভিডিও এক্স-এ শেয়ার করে বিজেপি নেত্রী কেয়া ঘোষ লিখেছেন,’আদিনা নয়, আদিনাথ।জিতু সাঁওতালের আত্মবলিদান বৃথা যাবেনা।আজ যারা আদিনাথ মন্দিরকে আদিনা মসজিদ বানিয়ে সিদ্ধিদাতা গণেশকে শয়তান বলে পাথর ছুঁড়ে ভাবছে স্বর্গলাভ হবে, তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছে।আদিনাথ তিনি চির সত্য। তিনি বাঙালির শ্বাশত সত্য।তিনি বাঙালির রক্ষাকর্তা। আদিনাথের পুণ্যভূমিতে জিতু সাঁওতালের রক্ত মিশে আছে।সেই মাটিতে জেহাদের পতাকা নয়, সনাতনের ধ্বজাই চিরসত্য। রাজ্য সভাপতি শ্রী শমীক ভট্টাচার্যকে ধন্যবাদ আদিনাথ মন্দিরের ইতিহাস এবং তার রক্ষণাবেক্ষন সংক্রান্ত দায়িত্বের কথা সংসদে তুলে ধরার জন্য।’।

