এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৪ মে : আরজি করের তরুনী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পর থেকেই রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে । বিতর্কের জের তৎকালীন কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে সরাতে বাধ্য হন মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশ মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । ফের একবার বিতর্কে জড়ালো রাজ্য পুলিশ । এবারে মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জের জাফরাবাদে খুন হওয়া বাবা হরগোবিন্দ দাস ও ছেলে চন্দন দাসের পরিবারকে জোর করে তুলে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় হাজির করানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে । পরিবারটি কলকাতার সল্টলেকে আশ্রয় নিয়েছিলেন ৷ কিন্তু আজ রবিবার সকালে কলকাতা পুলিশ দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে এবং তাদের রীতিমতো অত্যাচার করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ । কিন্তু সজল ঘোষ, তরুনজ্যোতি তিওয়ারি, শঙ্কুদেব পন্ডা, প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালসহ বেশ কয়েকজন বিজেপির নেতানেত্রী সেখানে ছুটে আসেন এবং পুলিশকে ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় । ওঠে “পুলিশ হায় হায়” শ্লোগান । শেষ পর্যন্ত পুলিশ পিছু হটতে বাধ্য হয় । এদিকে বিজেপিও আর কোনো ঝুঁকি না নিয়ে পরিবারটিকে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেয় । পরিবারটি বর্তমানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বাসভবনে রয়েছেন বলে জানা গেছে ।
বিক্ষোভের ভিডিও এক্স-এ শেয়ার করে তরুনজ্যোতি তিওয়ারি লিখেছেন,’চন্দন দাস ও হরগোবিন্দ দাস হত্যাকাণ্ডের পর পরিবারকে জোরপূর্বক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় হাজির করার চক্রান্ত । চন্দন দাস ও হরগোবিন্দ দাস যখন ধর্মীয় কারণে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, তখন পুলিশের কোনো উপস্থিতি ছিল না। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়। এখন সেই একই পুলিশ প্রশাসন নির্দেশ পেয়েছে এই শহীদ পরিবারের সদস্যদের মুর্শিদাবাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় পেশ করতে। কিন্তু পরিবার স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তারা খুনিদের সাথে বা খুনিদের মদতপুষ্ট কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে না। তারা জানায়, পুলিশের এই জোরপূর্বক তৎপরতা এবং হুমকির কারণে তারা বাধ্য হয়ে এলাকা ছেড়ে গোপনে কলকাতায় আশ্রয় নেয়।’
তিনি আরও লিখেছেন,’কিন্তু গতকাল থেকেই পুলিশ চিরুনি তল্লাশি শুরু করে। আজ, খবর পেয়ে পুলিশ সল্টলেকের ওই ঠিকানায় হাজির হয়। শুধু বিধান নগর পুলিশই নয়, মুর্শিদাবাদ পুলিশকেও সঙ্গে নিয়ে তারা হানা দেয়। পুলিশের দাবি—পরিবারটি ‘কিডন্যাপ’ হয়েছে। এই মিথ্যা অজুহাতে তারা গেট ভাঙচুর করে এবং বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। পরিবারের সদস্যরা প্রকাশ্যে বলেন, তাদের কেউ অপহরণ করেনি, তারা স্বেচ্ছায় এখানে এসেছেন নিজেদের নিরাপত্তার কারণে। আমরা পুলিশকে স্পষ্টভাবে বলি, যদি তাদের কিছু জানার থাকে, তাহলে নিয়ম মেনে নোটিশ পাঠাক। আমরা পুলিশের কাছে তাদের কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখতে চাই, কিন্তু তারা কিছু দেখাতে ব্যর্থ হয়। এরপর পরিবারের বক্তব্য এবং আমাদের উপস্থিতি দেখে পুলিশ দ্রুত এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।’
সবশেষে তরুনজ্যোতি লিখেছেন,’প্রথমে হিন্দুদের হত্যা করা হয়, তারপর বেঁচে থাকা পরিবারগুলিকে জোরপূর্বক মুখ বন্ধ করতে বা সরকারপন্থী নাটকে ব্যবহার করতে চক্রান্ত করা হচ্ছে। এ এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি—হিন্দুদের আগে খুন করা হচ্ছে, পরে তাদের পরিবারকেও ধমকানো হচ্ছে। আমরা তখনও হিন্দুদের পাশে ছিলাম, এখনও আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। শহীদদের অপমান, পরিবারের প্রতি অন্যায়, এবং প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।’
হওয়া বাবা-ছেলের পরিবার এসে উপস্থিত হন সল্টলেকে। সেখানেই তাঁরা থাকছিলেন। এরপর রবিবার সকালে মুর্শিদাবাদ থেকে একদল পুলিশ আসেন সল্টলেকের সেই আশ্রয়স্থলে বলে দাবি। তারপর তাঁরা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু নিহতের পরিবার তাতে রাজি হয়নি। অভিযোগ, এরপর পুলিশ জোর পূর্বক বাড়ির দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন শঙ্খুদেব পণ্ডা, তরুণজ্যোতি তিওয়ারি, সজল ঘোষ সহ বিজেপির প্রতিনিধি দল। তাঁদের সঙ্গে প্রবল বচসা হয় পুলিশের। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানা যাচ্ছে, নিহতের পরিবারেরই কোনও এক সদস্য থানায় ‘কিডন্যাপিং’-এর অভিযোগ করেছিলেন। সেই তদন্তে নেমেই সল্টলেকে এসেছিলেন তাঁরা। তবে পুলিশ কোনো নথিই দেখাতে পারেনি বলে অভিযোগ ।
মমতা ব্যানার্জির আগামী ৫ মার্চ মুর্শিদাবাদ যাচ্ছেন । রাজ্য প্রশাসনের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর সম্ভাব্য সফরসূচিও জানানো হয়েছে। আগামী ৫ মে সুতি বিধানসভা কেন্দ্রের ছাপঘাটি ময়দানে একটি প্রশাসনিক বৈঠক করার পাশাপাশি পরের দিন শমসেরগঞ্জের সাম্প্রদায়িক হিংসা কবলিত এলাকায় যাওয়ার কথা তাঁর । ওই সভায় আক্রান্ত হিন্দুদের হাজির করানোর জন্য তৃণমূল জোরদার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে খবর । কিন্তু আক্রান্ত হিন্দুদের মধ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কার্যত গনরোষের সৃষ্টি হয়েছে ।।