প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৮ সেপ্টেম্বর : রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্ণামঞ্চে শনিবার উপস্থিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলে ছিলেন ,ঝড় জলের মধ্যে আপনারা রাস্তায়। তাই আপনাদের পাহারাদার হিসাবে আমাকে জেগে থাকতে হয়।আর সোমবার রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ নিজেকে যাঁদের পাহারাদার বলে দাবি করলে তা কার্যত চমকে দেওয়ার মতন । তিনি এদিন বলেন,“আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে রাত জাগোতে অংশ নেওয়া মহিলাদেরকে এবং গভীর রাতে মদের দোকানে মদ খেতে যাওয়া মহিলদের আমাদেরই পাহারা দিতে হচ্ছে“।রাজ্যের একজন দায়িত্ব শীল মন্ত্রীর এহেন মন্তব্য যথেষ্টই শোরগোল দিয়েছে।বিরোধীরাও এ নিয়ে কটাক্ষ করেছে।
বিশ্বকর্মা পুজোকে সামনে রেখে সোমবার কালনায় নতুন বাসষ্ট্যান্ডে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে উঠে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ আরজি কর কাণ্ড নিয়ে চলা আন্দোলনের কথা বলতে গিয়ে বেফাঁস নানা মন্তব্য করে বসেন। তিনি বলেন,’রাত ২ টোয় হোক বা ১১ টা, মিছিল করা কিংবা রাত জাগোয় অংশ নেওয়ার পরিবেশ বাংলায় আছে বলেই তো মায়েরা তা করতে পারছে। আরজি কর কাণ্ডে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থন আছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা অর্থাৎ ফাঁসীর দাবি মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছেন ।আমিও তাই চাইছি ।’
এরপরেই মন্ত্রী মহিলাদের রাত বিরেতে মদের দোকানে গিয়ে মদ খেতে যাওয়ার বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন । মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন,আমার এলাকাতে (পূর্বস্থলী দক্ষিণ বিধানসভা) আমি দেখেছি একটি দোকানে রাত্রিবেলা মেয়েরা মদ কেনে। যার নাম হচ্ছে ’বিকাশের’ দোকান।এই খবরটা পাওয়ার পর,আমি দু-দিন পরপর সেখানে রাত্রিবেলায় গিয়েছি কোন মেয়েরা হোটেলে মদ খেতে চায় তা দেখতে। আমি হোটেলওয়ালাকে বলে এসেছি এখন থেকে আর কোনও মহিলাকে হোটেলে মদ খেতে দেওয়া যাওয়া যাবেনা। এটাও তো আমাকেই দেখতে হয়ব। ওই মহিলারা যদি মদ খেতে যায়, যদি কোনও অঘটন ঘটে যায়, তখন কি হবে ? সেজন্যে তো আমাদের পাহারা দিতে হচ্ছে।’
মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বৃষ্টিস্নাত রবিবারের গভীর রাতে একটি জায়গায় ২ টি ছেলে ও একটি মেয়ের বিয়ার খাওয়ার ঘটনার কথা জানান। মন্ত্রী বলেন,’রাত তখন ২ টো। দেখি তারা বিয়ার খাচ্ছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। ওই ছেলে মেয়েদের বাবা-মাকে ফোন করে বলা হয় , রাত দুটোর সময় আপনার মেয়ে কোন ’রাত জাগো’ আন্দোলনে গেছে? পুলিশ এসে তাদের তুলে নিয়ে গেল।” আমাদের ছেলেরা যদি না পাহারা দিত, তাহলে মদ্যপ অবস্থায় ওই মেয়েটার যদি কিছু হয়ে যেত! তখন তো লোকে আবার আমাদেরকেই দায়ী করতো ।’ কোনও মহিলাদের অসম্মান করার জন্য এসব একথা আমি বলছিনা বলেও মন্ত্রী এমন মেয়েদের বাবা-মায়ের ভূমিকা নিয়ে এদিন প্রশ্ন তোলেন।
আরজিকরের ঘটনাকে দুঃখজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা বলে দাবি করলেও মন্ত্রী স্বপধ দেবনাথ
আন্দোলনকারীদের স্বরুপ নিয়ে এদিন প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন,’দেখতে পাচ্ছি টিভিতে, আরজি কর কাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে দিয়ে পরের দিনই বিদেশে বেড়াতে চলে গেল।পুজোয় মন নেই বললেও প্রতিবাদী মুখ, প্রতিবাদে অগ্রণী ব্যক্তিরাই পুজোয় উপলক্ষে স্ত্রীর জন্য কালনা শহরের বড় বড় দোকানগুলি থেকে দামি শাড়ি কিনছেন বলে মন্ত্রী দাবি করেন ।’ এমন ঘটনার সাক্ষী তিনি য নিজেই সেটাও এদিন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ স্পষ্ট করে তুলে ধরেন মঞ্চ থেকে।
মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের মন্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করে জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলেন,’তৃণমূল সরকার বাংলায় ক্ষতায় এসে দু’হাত উজার করে শুধু মদের লাইসেন্স দিয়ে গেছে । মদ বিক্রি থেকেই সবথেকে বেশী রাজস্ব পায় রাজ্য সরকার । এমন রাজ্যের মন্ত্রী হয়ে স্বপন দেবনাথ যদি আবার গভীর রাতে মদের দোকানে গিয়ে কে মদ খাচ্ছে দেখতে যান সেটা আরও বড় ’লজ্জার’। যেটা খোলসা করে দিয়েছেন মন্ত্রী নিজেই ।’।